• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

যুদ্ধের হুমকি তৈরি করছে মরক্কো-ইসরায়েলের বন্ধুত্ব

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৫ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:০৩
যুদ্ধের হুমকি তৈরি করছে মরক্কো-ইসরায়েলের বন্ধুত্ব
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মরক্কোর ৬ষ্ঠ বাদশাহ মোহাম্মদ (ছবি : বিবিসি নিউজ)

মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদিবাদী দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে যাচ্ছে ইসলামিক রাষ্ট্র মরক্কো। গত ১০ ডিসেম্বর বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় ঘোষণাটি দিয়েছেন। কথিত মুসলিম রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং সুদানের পর মরক্কো হতে যাচ্ছে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী চতুর্থ আরব দেশ।

বিতর্কিত ওই চুক্তি ইসরায়েলের জন্য যেমন লাভজনক। তেমনই তা মরক্কোর জন্যও লাভজনক হতে যাচ্ছে। কারণ এই চুক্তির বিনিময়ে ওয়েস্টার্ন সাহারাকে মরক্কোর সার্বভৌম অঞ্চল বলে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।

বিশ্লেষকদের মতে, আলজেরিয়া সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আন্দোলন পলিসারিও ফ্রন্ট দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এই অঞ্চলটির স্বাধীনতা দাবি করে আসছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণে দুই পক্ষের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং তিন দশক ধরে স্তিমিত যুদ্ধকে আবারও ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

১৯৭৫ সালে মরক্কো সাবেক স্প্যানিশ উপনিবেশটি দখল করে নেয়। সে সময় পলিসারিও এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এই সংগঠনটিকে এখন জাতিসংঘ সাহারা অধিবাসীদের বৈধ প্রতিনিধি বলে মনে করে। কিন্তু পলিসারিওর জনসমর্থন থাকলেও সামরিক শক্তিতে তারা মরক্কোর সাথে পেরে ওঠেনি। মরক্কো এই অঞ্চলের দুই তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ পলিসারিওর হাতে থাকে।

আরও পড়ুন : করোনার উপসর্গ নিয়ে কোয়ারেন্টিনে নেতানিয়াহু

১৯৯১ সালে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছিল, সাহারার স্বাধীনতার প্রশ্নে একটি গণভোটের আয়োজন করা হবে। যদিও পরবর্তীকালে মরক্কোর বাঁধার কারণে গণভোট আর হয়নি।

সাহারার জনগণের সঙ্গে মরক্কোর আচরণ অনেকটা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলের আচরণের মতোই। বছরের পর বছর ধরে মরক্কো তার নাগরিকদের নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে ওয়েস্টার্ন সাহারায় বসতি স্থাপন করতে উৎসাহিত করছে, যেন ওই অঞ্চলের ওপর মরক্কোর নিয়ন্ত্রণ স্বাভাবিক হয়ে যায়। সাহারার মানুষের প্রতিবাদ দমিয়ে রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মীদের নির্যাতন করা হয়েছে। অবশ্য মরক্কো ওই অঞ্চলের উন্নতিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচও করেছে। প্রচুর হাসপাতাল ও স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

মরক্কোর হারিয়ে যাওয়া সাম্রাজ্যের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এই অঞ্চলটির প্রতীকী গুরুত্ব রয়েছে। ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকেও অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ। মরক্কো পশ্চিম সাহারাকে পশ্চিম আফ্রিকার প্রবেশদ্বার হিসাবে দেখে। পশ্চিম আফ্রিকা মরক্কোর প্রচুর পণ্য আমদানি করে।

মরক্কো পশ্চিম আফ্রিকায় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী দেশ। এছাড়া সাহারার মরক্কো নিয়ন্ত্রিত অংশটির মাটি ফসফেট-সমৃদ্ধ। এর জলভাগে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। ভূমিতে তেলের বিশাল মজুদ থাকার সম্ভাবনাও রয়েছে।

আরও পড়ুন : অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা

সুতরাং মরক্কো পশ্চিম সাহারার ওপর তার নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করতে মরিয়া। গত বছর মরক্কো প্রায় বিশটি আফ্রিকান ও আরব দেশকে রাজি করিয়েছে অঞ্চলটিকে তার সার্বভৌম অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে এবং সেখানে তাদের কনস্যুলেট খুলতে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সদস্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেলে সেটা হবে মরক্কোর জন্য বিশাল প্রাপ্তি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প পশ্চিম সাহারার জন্য মরক্কোর প্রস্তাবিত স্বায়ত্তশাসনের সমাধানটিকে সমর্থন করে বলেছেন, স্বায়ত্তশাসনই হতে পারে এই অঞ্চলের স্থায়ী শান্তি ও সমৃদ্ধির একমাত্র পথ। মরক্কো ১৭৭৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে, সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ওয়েস্টার্ন সাহারার ওপর মরক্কোর সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া।

প্রকৃতপক্ষে দু’টি ক্ষেত্রেই আদিবাসী জনগণের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী জানুয়ারিতে ট্রাম্পের স্থলাভিষিক্ত হবেন। তিনি হয়তো এক্ষেত্রে আরও একটু ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।

ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মরক্কোর জনগণের মধ্যে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। ইসলামপন্থি ও বামপন্থিরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। বিরোধী ইসলামপন্থি সংগঠন আদল ওয়াল ইহসান এই পদক্ষেপের নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছে। আবার পশ্চিম সাহারায় মরক্কোর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতিকেই বড় করে দেখছেন অনেকে।

আরও পড়ুন : সীমান্তে হেলিপোর্ট বানাচ্ছে চীন! ছবি প্রকাশ

অন্য দিকে পলিসারিও ফ্রন্ট বিবৃতির মাধ্যমে বলেছে, বিতর্কিত এই অঞ্চলে মরক্কোর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন, জাতিসংঘের সনদের লঙ্ঘন। যদিও সাহারার পরিস্থিতি কতটা অশান্ত হয়ে উঠবে তা কিছুটা নির্ভর করছে আলজেরিয়ার উপর। আলজেরিয়া পশ্চিম আফ্রিকার বাজারে মরক্কোর প্রতিযোগী। তারা সাহারায় অস্থিরতা তৈরি করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থন পাওয়া মরক্কোর ব্যাপারে আলজেরিয়া ভেবে চিন্তে পদক্ষেপ নেবে বলেই অনুমান করা যায়। তাছাড়া আলজেরিয়া এখন অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল। আলজেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবদুল আজিজ দেজেরাদ সতর্ক করে বলেছেন, ইহুদিবাদীরা আমাদের দোরগোড়ার চলে এসেছে, আমাদের সীমান্তে সত্যিকার বিপদ এসে পৌঁছেছে।

আরও পড়ুন : গাজীপুর মুক্ত দিবস আজ

বিরোধপূর্ণ এই ইস্যুতে রাশিয়ার সমর্থন পাচ্ছে আলজেরিয়া। রাশিয়া পশ্চিম সাহারার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকার সমালোচনা করেছে। ট্রাম্পের ভূমিকা পবিত্র ভূমির অস্থিরতা কমাচ্ছে না, বরং পশ্চিম সাহারায় আরেকটি যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করছে।

সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড