• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মিশিগানে দশ হাজার মৃত ভোটারের গোমর ফাঁস!

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৫ নভেম্বর ২০২০, ১২:০২
মিশিগানে দশ হাজার মৃত ভোটারের গোমর ফাঁস!
প্রবীণ ভোটার (ছবি : প্রতীকী)

সদ্য সমাপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মিশিগান অঙ্গরাজ্যে দশ হাজার মৃত লোক ভোট দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার দলের সমর্থকরা। এসব ভোটারের একটি তালিকাও এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টির সত্যতার নিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসি নিউজ ইতোমধ্যে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক এক রাজনৈতিক কর্মী দশ হাজার লোকের নামের একটি তালিকা টুইটারে পোস্ট করেছিলেন। মূলত সেখান থেকেই এই বিতর্কের শুরু।

তালিকাটি দেখে মনে হবে যেন এরা সবাই মারা গেছে, কিন্তু তাদের নামে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়া হয়েছে। মৃত লোকদের নামে ভোট দেওয়ার এই দাবি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা এসব দাবি করেছেন তাদের মধ্যে রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত অনেক জনপ্রতিনিধিও আছেন।

টুইটারে শেয়ার করা দশ হাজার 'মৃত ভোটারের' তালিকায় তাদের নাম, পোস্ট কোড এবং যে তারিখে তারা ব্যালট পেপার পেয়েছেন তার উল্লেখ আছে। এরপর সেখানে একটি সম্পূর্ণ জন্ম তারিখ এবং সম্পূর্ণ মৃত্যু তারিখ দেওয়া আছে। তালিকা অনুযায়ী কেউ কেউ মারা গেছেন পঞ্চাশ বছরেরও বেশি আগে।

আরও পড়ুন : দায়িত্বের প্রথমদিনই ‘মুসলিমদের’ ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলবেন বাইডেন

মিশিগানে এমন একটি ডাটাবেজ বা তথ্য ভাণ্ডার আছে যেখানে যে কেউ ঢুকে কারো নাম, পোস্ট কোড, জন্ম মাস এবং জন্ম বছর দিয়ে যাচাই করে দেখতে পারেন, তারা এ বছর 'অ্যাবসেন্টি ব্যালট', অর্থাৎ অনুপস্থিত ভোটার হিসেবে ডাকযোগে ভোট দিয়েছেন কিনা।

যুক্তরাষ্ট্রে এ রকম কয়েকটি ওয়েবসাইট আছে, যেখানে সব মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড বা নথিপত্র আছে। কিন্তু টুইটারে পোস্ট করা ১০ হাজার মানুষের এই তালিকায় একটা মৌলিক সমস্যা আছে।

এসব তথ্যভাণ্ডার দেখে এভাবে একটা তালিকা তৈরির কাজ করতে গেলে একই নামের দুজন ভিন্ন মানুষকে গুলিয়ে ফেলতে পারেন। যেমন, ১৯৪০ সালের জানুয়ারিতে জন্ম, এরকম এক ভোটার হয়তো মিশিগানে ভোট দিয়েছেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনো জায়গায় হয়তো ঠিক একই নামে আরেকজন আছেন, যারও জন্ম ১৯৪০ সালের জানুয়ারিতে, কিন্তু যিনি এখন মৃত।

আরও পড়ুন : বিশ্বের বৃহত্তম মুক্তবাণিজ্য চুক্তি আজ

যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি বড় দেশে এটা অহরহই ঘটে। কারণ দেশটির জনসংখ্যা হচ্ছে ৩২ কোটি ৮০ লক্ষ। এবং কিছু নাম আছে বহুল ব্যবহৃত, যে নামের অনেক মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে।

বিবিসির প্রতিবেদক জানিয়েছেন, এই কথিত 'মৃত ভোটারদের তালিকা' সঠিক না বেঠিক তা যাচাই করার জন্য আমরা দৈবচয়ন ভিত্তিতে ৩০টি নাম বাছাই করি। এরপর এই ৩০ জনের সঙ্গে আমরা যোগ করি তালিকার সবচেয়ে বয়স্ক মানুষটির নাম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ৩১ জনের মধ্যে ১১ জন যে এখনো বেঁচে আছেন, আমরা তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আমরা হয় তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পেরেছি অথবা কথা বলেছি তাদের পরিবারের কোনো সদস্য, কোনো প্রতিবেশী বা তারা থাকেন এ রকম বয়স্ক নিবাসের কর্মীর সঙ্গে। বাকী ১৭ জনের বেলায় আমরা দেখেছি, তারা যে মারা গেছেন এ রকম কোনো সরকারি রেকর্ড নেই।

আরও পড়ুন : 'জো বাইডেন আমার বউ চুরি করেছে'

প্রতিবেদকের দাবি, কথিত দশ হাজার মৃত ভোটারের তালিকায় যে তারিখে তারা মারা গেছেন বলে বলা হচ্ছে, আমাদের কাছে পরিষ্কার প্রমাণ আছে যে সেই তারিখের পরও তারা বেঁচে আছেন বা ছিলেন। এই অনুসন্ধান থেকে এটা একেবারে পরিষ্কার যে, কিছু মানুষের তথ্যের সঙ্গে অন্য কিছু ভুল তথ্য জুড়ে দিয়ে এই 'মৃত ভোটারদের' তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, দশ হাজার লোকের তালিকা থেকে আমরা মাত্র ৩১ জনের নাম বাছাই করেছিলাম। কিন্তু আমাদের অনুসন্ধানে এটা স্পষ্টতই বেরিয়ে এসেছে যে ট্রাম্পের সমর্থকরা যে তালিকাটি শেয়ার করেছেন সেটিতে অনেক ত্রুটি আছে।

সেখানে বলা হয়, আমাদের অনুসন্ধানে এটা পরিষ্কার আমরা যে ৩১ জনের ঘটনা যাচাই করে দেখেছি। তার প্রত্যেকটিতেই মিশিগানের প্রকৃত ভোটারদের তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য জায়গায় মারা যাওয়া একই নামে, একই বছর একই মাসে জন্ম নেওয়া লোকের তথ্যের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ছিল তাদের একই লোক বলে দেখানো।

আরও পড়ুন : জো বাইডেন : যুক্তরাষ্ট্রের কনিষ্ঠতম সিনেটর থেকে প্রবীণতম প্রেসিডেন্ট

প্রফেসর জাস্টিন লেভিট গণতান্ত্রিক আইন বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ। বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, যদি কেবল নাম আর জন্ম তারিখের ভিত্তিতে এই দুটি তালিকা মেলানো হয়, মিশিগানের মতো একটি রাজ্যে আপনি নিশ্চিতভাবেই কিছু ভুয়া মিল খুঁজে পাবেন।

বর্তমানে সমস্যাটিকে বলা হয় 'দ্য বার্থডে প্রবলেম'। একটি ক্লাসে একই নামের দুই জন শিক্ষার্থীর জন্মতারিখও যখন একই দিনে হয়, তখন এ রকম একটা সমস্যা আমরা দেখি।

কাজেই মিশিগানের লক্ষ লক্ষ ভোটারের তালিকাকে যদি আপনি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সব মৃত মানুষের ডেটাবেজের সঙ্গে মেলান, তখন আপনি নিশ্চিতভাবেই অনেক মিল খুঁজে পাবেন। বিশেষ করে ভোটার তালিকার তথ্যভাণ্ডারে যখন কোন মানুষের জন্ম-মাসটাই শুধু দেওয়া আছে, জন্ম তারিখের উল্লেখ থাকে না।

আরও পড়ুন : সন্ত্রাসী হামলায় ভারতের ‘সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ’ দিল পাকিস্তান

জাস্টিন লেভিট বলেন, এটা আসলে একটা পরিসংখ্যানগত ব্যাপার। আপনি যদি লক্ষ লক্ষ মানুষের রেকর্ড লক্ষ লক্ষ অন্য মানুষের রেকর্ডের সঙ্গে মেলান, আপনি বিরাট সংখ্যায় অনেক ভুয়া মিল খুঁজে পাবেন। আমরা এর আগেও এটা দেখেছি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড