• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আরও একটি লজ্জাজনক নির্বাচন দেখল মিশর 

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৫ অক্টোবর ২০২০, ১৪:০৯
আরও একটি লজ্জাজনক নির্বাচন দেখল মিশর 
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি (ছবি : বিবিসি নিউজ)

উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মিশরে পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। শনিবার (২৪ অক্টোবর) শুরু হওয়া প্রথম ধাপের নির্বাচনে পরদিন রবিবারও ভোট দেবেন ভোটাররা। এবারের নির্বাচনেও প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সমর্থকরা প্রাধান্য বিস্তার করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কয়েকটি ধাপে হবে এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচন। দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে আগামী ৭ ও ৮ নভেম্বর। অপর দিকে নভেম্বরের শেষ ও ডিসেম্বরের শুরুতে হবে শেষ ধাপের ভোট।

মিশরের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ রয়েছে। কারণ দেশটিতে টাকা দিয়ে ভোট কেনা, বিরোধী প্রার্থীদের বন্দি করার মতো ঘটনা খুবই সাধারণ। কিন্তু এভাবে নির্বাচন হওয়াটা মোটেও গণতান্ত্রিক নয়।

গ্রেপ্তার, ভয় দেখানো এবং ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকার তার বেশিরভাগ সমালোচককে সরিয়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়াদের বেশিরভাগই সিসির সমর্থক। ধনী ব্যবসায়ীরা সরকার সমর্থিত দলগুলোর পেছনে কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করেন।

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের নির্বাচনের ফলাফল কি হবে তা জানতে আপাতত ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কিন্তু এবারের নির্বাচনেও আগের প্রতিফলন থাকবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এবার নতুন ইলেক্টোরাল আইনের অধীনে পার্লামেন্ট নির্বাচন হচ্ছে মিশরে।

আরও পড়ুন : ইরাকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ভয়ঙ্কর নিষেধাজ্ঞা ইরানের

বিতর্কিত এ আইনের অধীনে মোট ৫৬৮টি আসনের মধ্যে ৫০ শতাংশ আসন আগে থেকেই বাছাইকৃতদের জন্য বরাদ্দ রাখা হবে। এর মাধ্যমে সিসির সমর্থকরা বিশেষ সুবিধা পাবেন বলে সমালোচকরা জানিয়েছেন। বাকি ৫০ শতাংশ আসনের জন্য প্রার্থীরা লড়বেন। প্রেসিডেন্ট সিসি সর্বোচ্চ ২৮ জন আইনপ্রণেতাকে সরাসরি নিয়োগ দিতে পারবেন।

২০১৩ সালের অভ্যুত্থানে দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মুসলিম ব্রাদারহুডের মুহাম্মদ মুরসিকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপর ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। তিনি ছিলেন একজন সাবেক জেনারেল।

নির্বাচিত হওয়ার পর দেশজুড়ে সব ধরনের বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন সিসি। ফলে দেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব হয়। ২০১৮ সালেও অবৈধ পন্থায় নির্বাচনে জয়ী হন তিনি।

দ্বিতীয় মেয়াদের পর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করেননি সিসি। ২০১৯ সালে মিশরের সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়। এর ফলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত দেশটির ক্ষমতায় থাকার পথ পাকাপোক্ত করেন এই প্রেসিডেন্ট।

আরও পড়ুন : তুরস্ক বললেই কেবল আর্মেনিয়ায় আক্রমণ বন্ধ করবে আজারবাইজান

রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে তিনি নিজেকে মিশরীয়দের নেতা হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন। ২০১৮ সালে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তারা সবাই বলে থাকে কিন্তু ‌‌‌‌আমি কোনো রাজনীতিবিদ নই।

তার মন্ত্রিসভার অধিকাংশই টেকনোক্র্যাটস মন্ত্রী। আঞ্চলিক গভর্নর হিসেবে প্রেসিডেন্ট যাদের নিযুক্ত করেছেন তাদের অধিকাংশই সেনাবাহিনী বা নিরাপত্তা বাহিনীর অভিজ্ঞ ব্যক্তি।

সিসি এমন আচরণ করেন যেন তিনি সব ধরনের বিরোধের ঊর্ধ্বে। যদিও তার দলের লোকেরা আসলে কাদায় নিমজ্জিত। তাদের ওপর জনগণের কোনো আস্থা নেই। দেশটির সবচেয়ে বড় দল ন্যাশনস ফিউচার পার্টি মূলত সামরিক গোয়েন্দাদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, লাখ লাখ টাকায় আগেই ভোট কিনে নিচ্ছে সরকারের সমর্থন পাওয়া ব্যক্তিরা। সম্প্রতি একটি ভিডিওতে এক আইনজীবী দাবি করেছিলেন, যারাই অর্থ ব্যয় করতে পারবেন তারাই নিজেদের আসন কিনে নিতে পারবেন। এমন অভিযোগের পর ওই আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে ভোট কেনার অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করা হয়।

আরও পড়ুন : এরদোগানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ইসলামিক জিহাদ গ্রুপ

মিশরের রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের একটি বড় প্রভাব রয়েছে। দেশটির পূর্ববর্তী স্বৈরশাসক হোসনি মোবারক ১৯৮১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দেশ শাসন করেছেন। কিন্তু সে সময় দেশটির জনগণ যে কোনো বিষয়ে অভিযোগের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের চেয়ে বেশি স্বাধীনতা পেয়েছিল।

রাজনীতিবিদরা ভোটারদের সাথে কথা বলতে পারতেন, তাদের অভিযোগ শুনতে এবং সেগুলো সংসদে উত্থাপন করতে পারতেন। ২০১০ সাল পর্যন্ত এই স্বাধীনতা বহাল ছিল। কিন্তু তারপরেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হোসনি মোবারক যখন ক্ষমতা আরও শক্ত হাতে ধরে রাখেন সেটাই তার বিপদ ডেকে আনে। লাখ লাখ বিক্ষোভকারীর প্রতিবাদে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।

আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি হয়তো হোসনি মোবারকের কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছেন। স্বৈরশাসকদের ধারণা জনগণকে বেশি স্বাধীনতা দিলে তারাই হয়তো ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে। তবে জনগণের ওপর এতো প্রভাব বিস্তারের পরেও গত আগস্টে ভোটারদের কাছ থেকে আশঙ্কাজনক বার্তা পেয়েছেন সিসি।

সে সময় পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের নির্বাচনে ৮৫ শতাংশ ভোটরই অংশ নেননি। সে সময় সিনেট নির্বাচনে ভোট না দেওয়ায় ৫ কোটি ৪০ লাখ ভোটারকে দেশটির পাবলিক প্রসিকিউটরের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

৩০০ আসনের এই ভোটে ভোটারদের ২০০ প্রার্থী নির্বাচিত করা সুযোগ ছিল। কিন্তু অধিকাংশ ভোটারই তাতে অংশ নেননি। তবে দেশটিতে সিনেটের বিশেষ কোনো গুরুত্ব নেই। এটি একটি অলংকারিক কমিটি মাত্র।

আরও পড়ুন : আর্মেনিয়ার যুদ্ধবিমান-ড্রোন ধ্বংস করে সেনাদের আটক করছে আজারবাইজান

জাতীয় রাজনীতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে এর কোনো ভূমিকাও নেই। এ বিষয়ে দেশটির নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান লাসেন ইব্রাহিমের মতামত হচ্ছে, যে কোনো ভাবে এই ভোট বর্জনকারীদের থেকে ৫শ মিশরীয় পাউন্ড জরিমানা আদায় করতে হবে। কারণ আইনে তাই বলা রয়েছে। নির্বাচনের বৈধতা এবং জনগণের ভোটাধিকার ইস্যুতে এখনও অভ্যন্তরীণ সংকটে রয়েছে মিশর।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড