আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আর্মেনীয় সেনাদের হাত থেকে বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখের অধিকাংশ অঞ্চলের দখল নিতে পেরেছে মুসলিম রাষ্ট্র আজারবাইজান। বুধবার (২১ অক্টোবর) এক টেলিভিশন বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আজারি প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিজেভ। তিনি বলেন, ফ্রন্টলাইনের যুদ্ধে আমাদের সেনারা আর্মেনীয় বাহিনীর চেয়ে হাজার গুণ এগিয়ে। তাই আমরা নাগোরনো-কারাবাখের অনেক অঞ্চলকে অবৈধ দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করেছি।
এ দিকে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনইয়ান জানিয়েছেন, কূটনৈতিক আলোচনায় সমাধান সূত্র মিলবে না। ভিডিও বিবৃতিতে দেশবাসীর কাছে তার আবেদন, এই সংকটকালে সকলে হাতে অস্ত্র তুলে নিন এবং দেশের জন্য লড়াই করুন।
এক দিকে যখন তীব্র লড়াই অব্যাহত, তখনই মস্কোয় ফের বৈঠকে বসেছেন আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেওর সঙ্গে তাদের বৈঠক আয়োজনের করার কথা রয়েছে।
মাঠের চেয়ে বেশি লড়াই চলছে মুখে
দুই পক্ষই আশ্রয় নিচ্ছে বাগাড়ম্বরের। নিজেদের ছোঁড়া গোলায় সাধারণ মানুষ মারা গেলেও যুদ্ধের নিয়ম না মানার জন্য দুই পক্ষই অপর পক্ষকে দুষছে। হামলা নিয়ে উভয় পক্ষের পালটা দাবিতে সংকট আরও বাড়ছে।
আরও পড়ুন : মুক্ত করা ২৪ গ্রামে পতাকা উড়াল আজারবাইজান (ভিডিয়ো)
নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার এখনো পর্যন্ত কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতির চুক্তি ব্যর্থ হওয়ার পরে লড়াই আরও তীব্র হয়েছে। প্রতিবেশী দুই দেশরই অভিযোগ, সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। আজারবাইজানে একের পর এক শহর ধ্বংস করেছে আর্মেনিয়ার গোলা।
অন্য দিকে আজারি ফৌজও নাগোরনো-কারাবাখের বিশাল এলাকা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। হাজার হাজার সাধারণ মানুষ গৃহহীন। আশ্রয়ের খোঁজে তারা পালাতে শুরু করেছেন।
এরই মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঢুকে পড়েছে আর্মেনিয়া এবং নাগোরনো-কারাবাখেও। বহু মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন। কিন্তু তাদের সাধারণ চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে তুরস্ক জানিয়েছে, আজারবাইজানকে যুদ্ধে সব রকম সাহায্যের জন্য প্রস্তুত তারা। প্রয়োজনে সৈন্য পাঠিয়ে সাহায্য করতেও তৈরি তেহরান। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তেইয়্যেপ এরদোগান প্রথম থেকেই এই সংঘাতে আজারবাইজানকে সমর্থন করছিলেন। আর্মেনিয়া তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিযোগও জানিয়েছে। কিন্তু এতে এখন পর্যন্ত কোনো ফল হয়নি।
আরও পড়ুন : আজারবাইজানে আর্মেনীয় গোলাবর্ষণ বন্ধে এবার মাঠে যুক্তরাষ্ট্র
তুর্কি প্রেসিডেন্ট ফের জানিয়ে দিয়েছেন, নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের অবিভক্ত অংশ। আজারি ফৌজ সেই অংশ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। তুরস্ক সব রকম ভাবে তাদের সাহায্য করবে।
যদিও আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, কূটনৈতিকভাবে এই সংঘাতের অবসান হওয়া মুশকিল। কারণ, আর্মেনিয়া কখনোই নিজেদের মানুষের উপর অত্যাচার মেনে নেবে না। নাগোরনো-কারাবাখের আর্মেনীয় মানুষের উপর লাগাতার বোমা বর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে আজারবাইজান। আর্মেনিয়া তার জবাব দেবেই।
দেশের মানুষের কাছে আর্মেনীয় প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, সকলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোন। হাতে অস্ত্র তুলে নিন। আর্মেনিয়াকে রক্ষা করুন। তবে একই সঙ্গে ইরানের কাছেও বার্তা পাঠিয়েছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তার বক্তব্য, তেহরান যদি শান্তিপূর্ণ সমাধানের রাস্তা তৈরি করতে পারে, তা হলে আর্মেনিয়া তা মেনে নেবে।
আরও পড়ুন : ইরানের অর্ধেক দেশ নিয়ে শুরু ভয়ঙ্কর সামরিক মহড়া
বস্তুত, আর্মেনিয়া ব্রাসেলসেও প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। সেই প্রতিনিধি দলটি ন্যাটো এবং ইইউর সঙ্গে আলোচনা করবেন। তাছাড়া মস্কোতেও তৃতীয় দফার বৈঠক শুরু হয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফের বৈঠক শুরু করেছেন। শুক্রবার মস্কোতেই তাদের বৈঠক করার কথা মার্কিন সচিব মাইক পম্পেওর সঙ্গে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে