• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আজেরিদের আক্রমণে 'ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির' কথা স্বীকার আর্মেনিয়ার

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৫ অক্টোবর ২০২০, ১১:৪৬
আজেরিদের আক্রমণে 'ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির' কথা স্বীকার আর্মেনিয়ার
সীমান্তে গোলাবর্ষণ করছেন সেনা সদস্যরা (ছবি : প্রতীকী)

বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের দখলকে কেন্দ্র করে আজারবাইজানের সঙ্গে হওয়া সংঘাতে আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনীর অনেকে হতাহত হয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনইয়ান।

যদিও পাশিনইয়ানের দাবি, আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনী এখনো ঐ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। এ দিকে চলমান এই যুদ্ধ বন্ধ করতে তুরস্ক ও রাশিয়ার নেতারা দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে গত চার দশক ধরে এই দুই দেশ দ্বন্দ্বে লিপ্ত। নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের বলেই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। যদিও এটি নিয়ন্ত্রণ করে জাতিগত আর্মেনিয়ানরা।

বর্তমানে ঐ অঞ্চলকে ঘিরে দুই দেশের মধ্যে যে সহিংসতা চলছে তা গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু। গেল কয়েক দশকের মধ্যে নাগোরনো-কারাবাখকে নিয়ে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত এটি। দুই পক্ষেরই শত শত মানুষ এরই মধ্যে মারা গেছে। গত সপ্তাহে রাশিয়ার মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতি চুক্তি করলেও তা খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

আরও পড়ুন : ফিলিস্তিনিদের অকৃতজ্ঞ জাতি বলছে ইসরায়েলের বন্ধু আমিরাত

৮০'র দশকের শেষে এবং ৯০'এর দশকের শুরুতে এই অঞ্চলের দখলকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছিল। ১৯৯৪ সালে দুই দেশ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও তারা কখনোই স্থায়ীভাবে শান্তিচুক্তি করতে পারেনি।

প্রধানমন্ত্রী পাশিনইয়ান কী বলছেন?

বুধবার (১৪ অক্টোবর) টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়া এক ভাষণে পাশিনইয়ান বলেন আর্মেনিয়ার 'বহু হতাহত' হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমি আমাদের সকল ভুক্তভোগী, শহীদ, তাদের পরিবার, অভিভাবক, বিশেষ করে শহীদদের মায়েদের উদ্দেশ্যে নতজানু হয়ে সম্মান জানাই। তাদের এই ক্ষতিকে আমি আমার ও আমার পরিবারের ব্যক্তিগত ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করছি।

পাশিনইয়ান আরও বলেন, আমাদের সবার জানা প্রয়োজন যে আমরা একটা কঠিন পরিস্থিতি পার করছি। জনশক্তি ও উপকরণের ক্ষয়ক্ষতি হলেও আর্মেনিয়ার সেনারা এখনো নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। এতে প্রতিপক্ষের জনশক্তি ও উপকরণের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি করেছে।

আরও পড়ুন : এবার ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে লেবানন

তার মতে, আমাদের জয়ী হতেই হবে, আমাদের বেঁচে থাকতেই হবে। আমাদের নিজেদের ইতিহাস তৈরি করতে হবে। আর আমরা এরই মধ্যে ইতিহাস তৈরি করছি। তৈরি করছি আমাদের বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের গল্প, আমাদের মহাকাব্য।

কী হচ্ছে ঐ অঞ্চলে?

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিজেভ অভিযোগ তুলেছেন, আর্মেনিয়া তাদের গ্যাস ও তেলের পাইপ লাইনে আক্রমণ করেছে। তুরস্কের প্রচার মাধ্যম হেবারতুর্ককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আর্মেনিয়া আমাদের পাইপলাইন আক্রমণ করে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে।

তার মতে, শত্রুরা যদি সেখানকার পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আমি বলতে পারি যে এর পরিণতি গুরুতর হবে।

অপর দিকে এই দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বুধবার (১৪ অক্টোবর) নিজেদের মধ্যে টেলিফোনে আলোচনা করেছেন।

আরও পড়ুন : আজারবাইজানকে রক্ষার ঘোষণা ইরানের

এতে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সহিংসতা বন্ধ করার লক্ষ্যে অতি দ্রুত যৌথ উদ্যোগ নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নাগোরনো-কারাবাখ দ্বন্দ্বের সমাধান করার ব্যাপারে তারা আলোচনা করেছেন।

নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল :

৪,৪০০ বর্গ কিলোমিটার (১,৭০০ বর্গ মাইল) আয়তনের একটি পর্বতাঞ্চল। ঐতিহাসিকভাবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী আর্মেনিয়ান এবং মুসলিম তুর্কিদের আবাসস্থল।

সোভিয়েত আমলে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পায়। আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত, কিন্তু জনসংখ্যার অধিকাংশই জাতিগত আর্মেনিয়ান।

১৯৮৮-৯৪ সালের যুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয় এবং প্রায় ৩০ হাজার মানুষ মারা যায়। ১৯৯০ এর যুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী আজারবাইজানের কাছের ছিটমহলের কাছে কিছু জায়গা দখল করে।

আরও পড়ুন : আজারবাইজানের পক্ষ নেওয়ায় তুরস্ককে হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

১৯৯৪ সালের যুদ্ধবিরতির পর থেকে অনেকটাই অচল অবস্থা বিরাজ করছিল। তুরস্ক প্রকাশ্যেই আজারবাইজানকে সমর্থন দিচ্ছে। এমনকি আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা