• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে এবার ফিলিস্তিনিদের পিঠে খঞ্জর বসাচ্ছে সৌদি!

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১১ অক্টোবর ২০২০, ১০:১১
ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে এবার ফিলিস্তিনিদের পিঠে খঞ্জর বসাচ্ছে সৌদি!
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (ছবি : খালিজ টাইমস)

মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক রাষ্ট্র সৌদি আরবের শাসকরা ঐতিহাসিকভাবেই ছিল ইহুদিবাদী দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েল এবং তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি যে আচরণ করে- তার সমালোচক। এবার তারাই কি শেষ পর্যন্ত সেই দেশটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে। আরব মিডিয়ায় অতীতে যে দেশটিকে ইহুদিবাদী শক্তি বলা হতো? সামাজিক মাধ্যমে সম্প্রতি এ নিয়ে প্রবল জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

কারণ: আল-আরাবিয়া টিভিতে প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকার - যা দিয়েছেন প্রিন্স বান্দার বিন সুলতান আল-সউদ, সাবেক সৌদি গোয়েন্দা প্রধান, এবং যিনি ওয়াশিংটনে দীর্ঘকাল সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।

সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করায় ফিলিস্তিনি নেতারা যেভাবে উপসাগরের আরব দেশগুলোর সমালোচনা করেন- তার তীব্র নিন্দা করেছেন প্রিন্স বান্দার। তিন পর্বে প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারে সৌদি প্রিন্স বলেন, যে কর্মকর্তারা তাদের লক্ষ্যের প্রতি সারা বিশ্বের সমর্থন পেতে চান- তাদের কাছ থেকে এত নিম্ন স্তরের এই বিতর্ক আমরা আশা করি না।

প্রিন্স বান্দারের মতে, উপসাগরীয় দেশগুলোর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি নেতাদের এই বাড়াবাড়ি এবং নিন্দনীয় কথাবার্তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

আরও পড়ুন : যুদ্ধে হেরে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে আর্মেনীয়রা (ভিডিয়ো)

সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন যখন ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তখন ফিলিস্তিনি নেতারা একে 'বেইমানি' এবং 'পিঠে ছুরি মারা' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজ জানিয়েছে, প্রিন্স বান্দার ওয়াশিংটনে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ছিলেন একটানা ২২ বছর। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের এতই ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে অনেকে তাকে 'বান্দার বিন বুশ' নামেও ডাকতেন।

আল-আরাবিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রিন্স বান্দার ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের ঐতিহাসিক ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বলেন, তারা ধরেই নিয়েছিল যে সৌদি আরব সব সময়ই আমাদের সমর্থন দিয়ে যাবে।

সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের দাবি অবশ্যই ন্যায়সংগত। কিন্তু তারা যে এত বছরেও একটা শান্তি চুক্তি করতে পারল না। এর জন্য ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব উভয়কেই সমানভাবে দায় নিতে হবে।

আরও পড়ুন : সৌদিতে দফায় দফায় ড্রোন হামলা ইয়েমেনের

ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব এখন বিভক্ত। পশ্চিম তীরে শাসনকাজ চালাচ্ছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, অন্যদিকে গাজার ক্ষমতা দখল করে আছে ইসলামপন্থি আন্দোলন হামাস।

প্রিন্স বান্দার এ দিকেই ইঙ্গিত করে বলেন, ফিলিস্তিনিদের নেতারা যখন নিজেদের মধ্যেই একমত হতে পারছেন না, তখন তারা একটা চুক্তিতে পৌঁছাবে কীভাবে?

সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন কর্মকর্তা বলছিলেন, সৌদি রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেলে এ ধরণের বক্তব্য কখনোই প্রচার হতে পারে না - যদি বাদশা সালমান এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আগে থেকে এটা অনুমোদন না করেন।

ঐতিহাসিকদের সন্দেহ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পর সৌদি আরব ''নীরবে'' তা অনুমোদন করেছে। এর কিছুদিন পরই সৌদি প্রিন্স বান্দার এই সাক্ষাৎকারটি দিলেন।

এতে মনে হতেই পারে যে সৌদি আরবের নেতৃত্ব ইসরায়েলের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনের পথে তাদের জনগণের চাইতেও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন : ভারত সীমান্তে ৬০ হাজার সেনা চীনের, যুদ্ধের প্রস্তুতি নয়তো?

অনেক বছর ধরে - বিশেষ করে সৌদি আরবের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাগুলোতে যারা বাস করেন, সেই সৌদিরা শুধু যে ইসরায়েলকেই শত্রু হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন তাই নয়, সব ইহুদিদের ক্ষেত্রেও তাই।

আমার মনে আছে, আসির প্রদেশে একটি পার্বত্য গ্রামের বাসিন্দা এক সৌদি আমাকে খুব গুরুত্ব দিয়েই বলছিলেন, বছরের একটি দিন আছে যেদিন ইহুদিরা শিশুদের রক্ত পান করে।

ইন্টারনেট আর স্যাটেলাইট টিভির কারণে, এখন সৌদি আরবে এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব অনেক বিরল ব্যাপার হয়ে গেছে। সৌদিরা অনলাইনে দিনের অনেকটা সময় কাটায়, এবং অনেক সময় বিশ্বের নানা রকম খবর বা ঘটনা সম্পর্কে তারা পশ্চিমা দেশের লোকদের চাইতে বেশি জানেন।

যদিও সৌদি আরবের মানুষের কিছু অংশের মধ্যে অন্য দেশের লোকদের সম্পর্কে সন্দেহ ও জাতিবিদ্বেষ থাকলেও- এর পরিবর্তন হতে সময় লাগবে। মূলত সে কারণে হয়তো সৌদি আরব তার উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের অনুসরণ করে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি করার জন্য তাড়াহুড়ো করছে না।

সাদ্দাম হোসেন বিপর্যয়

ফিলিস্তিনিদের সাথে সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর ইতিহাস বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। উপসাগরীয় দেশের সরকারগুলো দশকের পর দশক ধরে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ফিলিস্তিন ইস্যুকে নামমাত্র সমর্থন দিয়ে গেছে।

আরও পড়ুন : যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে আজারবাইজানে নির্লজ্জের মতো গোলাবর্ষণ আর্মেনিয়ার

কিন্তু ১৯৯০ সালে ইরাকের কুয়েত অভিযান ও দেশটি দখল করে নেবার পর যখন ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পক্ষ নিলেন- তখন তারা নিজেদেরকে প্রচণ্ডভাবে প্রতারিত বোধ করেছিল।

এরপর ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম নামের অভিযান চালিয়ে যখন কুয়েতকে মুক্ত করা হলো। তখন কুয়েত সে দেশ থেকে সকল ফিলিস্তিনিকে বহিষ্কার করে, এবং তাদের শূন্যস্থান পূরণ করে হাজার হাজার মিশরীয়কে দেশে নিয়ে আসে।

সেই বছর আমি কুয়েত সিটিতে গিয়েছিলাম। তখনো দেশটি এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। একটি পরিত্যক্ত পিৎজা রেস্তোরাঁর পাশেই দেখা যায় একটি দেয়াল লিখন।

তাতে লেখা, আল-কুদস দা'ইমান লিল' সিহিউনিন, ওয়া'আনা কুয়েতি- অর্থাৎ জেরুজালেম হচ্ছে ইহুদিদের চিরন্তন আবাসভূমি এবং এ কথা লিখছি আমি - একজন কুয়েতি।

এই অঞ্চলের বয়স্ক শাসকদের অনেক সময় লেগেছিল আরাফাতের ওই "বেইমানি" র ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে।

আরও পড়ুন : আর্মেনিয়ার তিনশ সেনাকে হত্যা করল আজারবাইজান (ভিডিয়ো)

উল্লেখ্য, আরব বিশ্বে সেই ক্ষত সারিয়ে তুলতে অন্য অনেকের চেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিলেন যিনি। তিনিও অবশ্য একজন কুয়েতি - গত মাসেই ৯১ বছর বয়সে মৃত্যু হয় আমির শেখ সাবাহ আল-আহমেদ আল-সাবাহ নামে সেই শাসকের।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড