আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দক্ষিণ কোরিয়ার এক সরকারি কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন বিরল ক্ষমা প্রার্থনা করলেও ঘটনাটি আরও তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে সিউল। শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকের পর দ. কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বিবৃতির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে।
সেখানে বলা হয়, ঘটনাটি নিয়ে উভয় পক্ষের বক্তব্যে ভিন্নতা থাকায় প্রয়োজনে পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে যৌথ তদন্ত করা হবে। তারপরও উত্তর কোরিয়ার প্রতি নরম মনোভাব পোষণ করছেন- নিজ দেশে এমন সমালোচনার মুখে পড়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
দুই দেশের সীমান্তবর্তী সামুদ্রিক জলসীমা থেকে গত মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিখোঁজ হয় দক্ষিণ কোরিয়ার এক মৎস্য কর্মকর্তা। বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী জানায় উত্তর কোরীয় সেনারা ওই কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যা করে মরদেহ তেল দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
যদিও উত্তর কোরীয় সরকার এক অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে হত্যার কথা স্বীকার করলেও মরদেহ পোড়ানোর কথা অস্বীকার করে। তাদের দাবি, পিয়ংইয়ংয়ের জলসীমা প্রবেশের পরও ওই ব্যক্তি সেনা সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে গুলি করা হয়।
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সিউলের পক্ষ থেকে জানানো হয় ওই ঘটনার জন্য বিরলভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। আন্তঃকোরীয় সম্পর্ক দেখভাল করা উত্তর কোরিয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ফ্রন্ট ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে কিমের বার্তা সিউলে পাঠানো হয় বলে জানানো হয়।
আরও পড়ুন : এবার মার্কিন রণতরীতে নজরদারির ভিডিও ছাড়ল ইরান
সেখানে বলা হয়, ঘটনাটিকে অপ্রত্যাশিত এবং দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা এ জন্য গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন কিম জং উন। তবে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এখনো এনিয়ে কিছু জানায়নি।
শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকের পর প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা উত্তর কোরিয়াকে অতিরিক্ত তদন্ত করার অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া প্রয়োজন পড়লে উত্তরের সঙ্গে যৌথ তদন্তেরও অনুরোধ জানানো হবে।
একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে দুই দেশের সীমান্তবর্তী সামুদ্রিক এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়। নিহত কর্মকর্তার মরদেহ খুঁজতে সামুদ্রিক সীমান্তের পশ্চিমাঞ্চলে বেশ কিছু জাহাজ ও শত শত কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্টগার্ড।
এ দিকে শনিবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান বিরোধী দল পিউপিল পাওয়ার পার্টির তরফ থেকে বলা হয়, কিম জং উনের ক্ষমা প্রার্থনা যথার্থ নয়। মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তুলতে সিউলের প্রতি আহ্বান জানায় দলটি।
আরও পড়ুন : নর্দমা পরিষ্কারে নেমে মিলল চোখ ছানাবড়া দৈত্যাকার ইঁদুর! (ভিডিও)
উত্তর কোরিয়ার সেনা সদস্যদের হাতে মৎস্য কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ জোরালো হচ্ছে। সমালোচকদের অভিযোগ, মুন জায়ে ইন উত্তর কোরিয়ার প্রতি নরম মনোভাব পোষণ করছেন আর নাগরিকদের জীবন রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন।
তাদের দাবি, ওই কর্মকর্তার ওপর গুলি চালানোর ছয় ঘণ্টা আগে শনাক্ত করা হলেও তাকে রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেয়নি মুন জায়ে ইনের সরকার।
সীমান্তবর্তী দ্বীপ ইয়োনপিয়ংয়ের কাছে একটি মাছ ধরা নৌকায় দায়িত্বরত অবস্থায় নিখোঁজ হয়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা। দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর দাবি, ওই ব্যক্তি সম্ভবত উত্তর কোরিয়ায় পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। যদিও তার ভাই এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, নিশ্চয় সেখানে কোনো কিছু ঘটেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনায় কিম জং উন যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তা খুবই বিরল। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা নিরসনের প্রয়োজন পড়লে কখনো কখনো অনুতাপ প্রকাশ করেছে উত্তর কোরিয়া।
আরও পড়ুন : ট্রাম্পের বাড়ি গেলেই ময়লা কাপড় সঙ্গে নেন নেতানিয়াহু!
যেমন ২০১৫ সালে মাইন বিস্ফোরণে দক্ষিণ কোরিয়ার দুই সেনা সদস্য নিহত এবং ২০০৮ সালে উত্তর কোরিয়ার অভ্যন্তরে এক দক্ষিণ কোরীয় পর্যটককে গুলি করে হত্যার পর দুঃখ প্রকাশ করে পিয়ংইয়ং। তবে উত্তর কোরিয়ার কোনো নেতার এই ধরণের ক্ষমা প্রার্থনা খুবই বিরল।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড