• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুসলিম বলে হোটেল থেকে শিক্ষকদের তাড়িয়ে দিল হিন্দুরা

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:২৩
মুসলিম বলে হোটেল থেকে শিক্ষকদের তাড়িয়ে দিল হিন্দুরা
নির্যাতনের শিকার মুসলিম শিক্ষকরা (ছবি : এনডিটিভি)

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার কাছাকাছি একটি এলাকার দুটি গেস্ট হাউস থেকে ১০ জন মুসলমান শিক্ষককে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অগ্রিম অর্থ দিয়ে ঘর বুকিং করার পরেও 'পাড়ার লোকেরা মুসলমানদের থাকতে দিতে চায় না'-এই অজুহাতে গেস্ট হাউসের কর্মীরা তাদের চলে যেতে বলেন। পুলিশ ওই গেস্ট হাউস দুটির তিনজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

ওই ১০ জন মাদ্রাসা শিক্ষক মালদা থেকে সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) খুব ভোরে পৌঁছেছিলেন বিধাননগরে। তাদের কেউ প্রধান শিক্ষক, কেউ সহকারী শিক্ষক। এবার তারা মূলত রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরে সরকারি কাজে এসেছিলেন।

ক্লান্ত শিক্ষকরা অগ্রিম টাকা দিয়ে বুক করে রাখা গেস্ট হাউসের ঘরে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে চাইছিলেন দ্রুত। একটু পরে রাস্তায় বেরিয়ে খাবার খেতে গিয়েছিলেন। তখনই লোকজন তাদের দাড়ি-টুপি-পাজামা-পাঞ্জাবী দেখে সন্দেহ করেছেন। এটা অনেক পরে বুঝতে পারেন ওই দলে থাকা মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান নামের একজন প্রধান শিক্ষক।

তিনি বলেছেন, সবাই রাত জেগে এসেছি। তাই গোসল করে খাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলাম। ফিরে এসে ঘরেই কয়েকটা কাজ করছিলাম। এমন সময়ে গেস্ট হাউসের একজন এসে জানায় যে, আপনাদের আরও ভাল ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমার সঙ্গে চলুন। আমরা সেই কথা শুনে তার সঙ্গে যাই।

আরও পড়ুন : কাশ্মীর ইস্যুতে ফের ভারতের রোষানলে পাকিস্তান!

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় ওই গেস্ট হাউসে আমাদের বসিয়েই রাখে বেশ কয়েক ঘণ্টা। যখন তাদের বলি যে কী ব্যাপার। এখানে নিয়ে এসে বসিয়ে রেখেছেন, ঘর দিচ্ছেন না? ম্যানেজার তখন বলে আপনাদের এখানে থাকতে দেওয়া যাবে না। আপনারা চলে যান।

তারা সবাই খুব অবাক হয়েছিলেন এভাবে হেনস্থা হওয়ার জন্য। কিন্তু কারণটা তখনও বুঝতে পারেননি। যে শিক্ষক সংগঠনের নেতার মাধ্যমে ঘর বুকিং করেছিলেন তাকে খবর দেন তারা।

আরও পড়ুন : ইরান ইস্যুতে চীন-রাশিয়াকে ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের

নির্যাতনের শিকার এই শিক্ষক বলেন, তখনও আমরা কারণটাই বুঝতে পারছি না যে কেন এমন ব্যবহার করল। আমাদের সংগঠনের নেতা মইদুল ইসলামকে ফোন করি। তিনি ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে আমাদের জানান যে থাকতে হবে না আপনাদের ওখানে। বেরিয়ে আসুন। এমন ঘটনায় তারা খুব অপমানিত হয়েছেন।

ওই শিক্ষকরা সকলেই একটি অরাজনৈতিক শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মুক্তি মঞ্চ নামের ওই সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মইদুল ইসলামের মাধ্যমেই ওই শিক্ষকরা ঘর বুকিং করেছিলেন।

আরও পড়ুন : লিথুয়ানিয়ায় সেনা মোতায়েন যুক্তরাষ্ট্রের, সতর্ক বেলারুশ

শিক্ষকদের হেনস্থার খবর পেয়ে যখন তিনি যোগাযোগ করেন গেস্ট হাউসে, তাকে জানানো হয় যে এলাকার মানুষদের আপত্তিতেই থাকতে দেওয়া হয়নি।

মইদুল ইসলাম বলেন, আমরা স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াই 'মোরা একই বৃন্তের দুটি কুসুম - হিন্দু মুসলমান। মাদ্রাসা হলেও অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী হিন্দু, স্টাফরাও অনেকে হিন্দু। সেরকম জায়গায় দাড়ি-টুপি আর পাজামা-পাঞ্জাবী দেখে বয়স্ক শিক্ষকদের গেস্ট হাউস থেকে তাড়িয়ে দেয়া হল - এটা কি আমাদের বাংলার সংস্কৃতি? এই ঘটনা সত্যিই উদ্বেগজনক।

আরও পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে রুহানির হুঁশিয়ারি

কলকাতায় সাধারণভাবে হোটেল গেস্ট হাউসে ধর্মীয় পরিচিতির কারণে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না - এমন ঘটনা সচরাচর শোনা যায় না। যদিও বেশ কয়েকজন বলছেন, বাংলাদেশ থেকে কলকাতার হোটেলে থাকতে গিয়ে তারা বাধা পেয়েছেন শুধুমাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে।

যদিও বিধাননগর বা সল্ট লেক মূলত শিক্ষিত লোকজন বসবাস করেন। সে রকম একটি এলাকার মানুষ দাড়ি-টুপি পরা মুসলমানরা এলাকায় ঘোরাঘুরি করছে দেখে আপত্তি তুললেন? তাদের থাকতে না দিতে গেস্ট হাউসের মালিককে চাপ দিলেন।

আরও পড়ুন : হিজবুল্লাহর অস্ত্র গুদামে বিস্ফোরণের রোমহর্ষক ভিডিও প্রকাশ

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা ও লেখিকা মীরাতুন নাহার অবশ্য মনে করেন, সম্পন্ন মানুষদের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক মনোভাব বেশি দেখা যায়।

তার মতে, আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, সম্পন্ন, তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই সাম্প্রদায়িক মন বেশি দেখা যায়। সাধারণ মানুষকে কখনও কখনও সাম্প্রদায়িকতার নামে উস্কানি দেয়া যায়, কিন্তু তাদের মনে সাম্প্রদায়িকতা থাকে না। একজন হিন্দু পটল-ওয়ালা কিন্তু মুসলমান কুমড়ো-ওয়ালার পাশে বসেই বাজারে সবজি বিক্রি করে।

আরও পড়ুন : দেড় লাখ রকেট নিয়ে ইসরায়েলে আক্রমণের অপেক্ষায় হিজবুল্লাহ!

তিনি আরও বলেন, আসলে আমাদের দেশের ক্ষমতায় আছে যে দলটি, তারা তো একটা বিষয়ের ওপরেই খুব মনোযোগ দিয়েছে - হিন্দু রাষ্ট্র গড়তে হবে। এ দিকে রুজি নেই, চিকিৎসা নেই, শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে সেসব দিক থেকে মানুষের মন সরিয়ে একটা দিকেই মনোযোগ দেওয়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। তারই ফলশ্রুতি এই ঘটনা।

ওই ঘটনায় মইদুল ইসলাম একটি অভিযোগপত্র পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর দপ্তরে। চিঠি পেয়েই দুটি গেস্ট হাউসের মোট পাঁচজন কর্মীকে আটক করে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন : চীনা যুদ্ধবিমানকে ধাওয়া করল তাইওয়ানের জঙ্গিবিমান

এর মধ্যে তিনজনকে মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) গ্রেপ্তার করে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দু'দিনের পুলিশ হেফাজতের আদেশ দিয়েছে আদালত। পুলিশ বলছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া, বিশ্বাসভঙ্গ এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির চারটি ধারায় মামলা করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড