• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কেন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে বাহরাইন? 

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২২:০২
করোনা
ছবি : সংগৃহীত

প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি এক প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানানোর প্রায় ২৬ বছর পর উপসাগরীয় অঞ্চলের ক্ষুদে দ্বীপ রাষ্ট্র বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে রাজি হয়েছে। তবে বাহরাইনের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এই ঘোষণায় খুব বেশি অবাক হওয়ার কিছু নেই।

গত ১৩ আগস্ট সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইসরায়েল কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হয়েছে বলে ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই ঘোষণার পর বাহরাইনও একই পথে হাঁটতে পারে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের মিডল ইস্ট সেন্টারের ভিজিটিং ফেলো ইয়ান ব্ল্যাক বলেন, যদিও গত মাসে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে বাহরাইন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছিল ছোট্ট এই দ্বীপ রাষ্ট্র। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বৈরীতা ভেঙে আমিরাত সম্পর্ক স্থাপন করায় একইপথ অনুসরণ করল বাহরাইন।

মার্কিন নৌবাহিনীর আঞ্চলিক সদর দফতর রয়েছে বাহরাইনে; যেখান থেকে সৌদি আরবের পথ মাত্র ২৫ কিলোমিটারের। গত কয়েক বছর ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে অনীহা খুব কম দেখা গেছে বাহরাইনের।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল খলিফা যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আরব দেশগুলোর 'বয়কট ইসরায়েল' নীতির বিরোধিতা করেন তিনি। পরে বাহরাইনের সরকার বাদশাহর এই মন্তব্যে সমর্থন জানায়। বাহরাইনের বাদশাহর এই মন্তব্যের জেরে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পরপরই ইসরায়েল সফরে করে বাদশাহ হামাদ।

শুক্রবার ইসরায়েল-বাহরাইন চুক্তির মাধ্যমে আরব বিশ্বের আরেকটি দেশ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বিশ্বাসঘাতকতা করল বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনিরা। ইয়ান ব্ল্যাক বলেন, এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, এটি ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরকটি চরম আঘাত। এক দৃষ্টিতে এটি পরিষ্কার যে, আরব শাসকদের জন্য ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ আর কোনও অগ্রাধিকারের পাবে না।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধের আগের ডি-ফ্যাক্টো সীমান্ত অনুযায়ী একটি স্বাধীন রাষ্ট্র চান ফিলিস্তিনি নেতারা। ওই যুদ্ধের পর পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা এবং পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরায়েল। অবৈধ এই দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে আরব রাষ্ট্রগুলো। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি শরণার্থী সমস্যার সমাধান এবং স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতের মাধ্যমে স্বাধীন এবং স্থায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেই কেবল ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা হবে বলে জানিয়ে আসছিল।

যদিও আঞ্চলিক অন্যতম শক্তিধর এবং ইরানের প্রধান শত্রু সৌদি আরব ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য এখন পর্যন্ত প্রস্তুত নয়। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরবের সমর্থন ছাড়া সাম্প্রতিক চুক্তিগুলো সম্ভব নয়।

ফিলিস্তিনের নীতি-নির্ধারণী নেটওয়ার্ক আল-শাবাকার সদস্য মারওয়া ফাতাফতা বলেছেন, বাহরাইনের রাজনৈতিক এজেন্ডার বেশিরভাগই সৌদি আরবের নির্দেশনায় পরিচালিত হয়।

২০১৮ সালের শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তথাকথিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন একটি সম্মেলনের আয়োজক হতে রাজি হয় বাহরাইন। প্রথম দিকে এই সম্মেলন আয়োজনে আগ্রহ না দেখালেও সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কুয়েত ১০ বিলিয়ন অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে চাওয়ায় সিদ্ধান্ত পাল্টায় মানামা।

প্রতিবেশিদের ওপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল হওয়া ছাড়াও ইসরায়েলের সঙ্গে বাহরাইনের নতুন সম্পর্ক দেশটির বাদশাহর ক্ষমতাকে আরও সুদৃঢ় করবে। স্বাভাবিকভাবে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার প্রতিবাদে যেকোনও ধরনের গণতান্ত্রিক প্রতিরোধ বা প্রচেষ্টা গড়ে উঠলে তা চূর্ন করতে বাহরাইনের ক্ষমতাসীনদের সহায়তা করবে ইসরায়েল।

২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় বাহরাইনে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী পাঠায় সৌদি আরব। দেশটিতে সেই সময় রাজতন্ত্রবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এই বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই শিয়া মতাবলম্বী; যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে নিপীড়িত হয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জাদালিয়ার সহ-সম্পাদক মঈন রব্বানি বলেন, যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহরে যোগদান করাটা নিজ দেশের মানুষের কাছ থেকে বাহরাইনি রাজতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। রোববার বাহরাইনের শিয়া নেতা আয়াতুল্লাহ শেখ ইসা কাসিম ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করে এর বিরুদ্ধে ওই অঞ্চলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা সুদৃঢ় করার অর্থ এই অঞ্চলের অন্যান্য প্রধান মোড়ল তুরস্ক এবং ইরানকে একঘরে করে ফেলা। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক স্তরেই নয়, বরং আঞ্চলিক এজেন্ডা থেকেও ফিলিস্তিনি স্বার্থ মুছে ফেলার সম্প্রসারিত প্রচেষ্টা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল। আরব-ইসরায়েল সংঘাতকে আরব-ইরান সংঘাতে রূপ দিয়ে এটি করা হচ্ছে।

মারওয়া ফাতাফতা বলেন, একই সাধারণ ভূরাজনৈতিক স্বার্থে উপসাগরীয় অঞ্চলের এই দল গঠন চলছে। এক নম্বর শত্রু ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে শক্তিশালী মিত্র হিসেবে পেয়েছে তারা। কয়েকটি দেশের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানি হুমকি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশি ইয়েমেন, সিরিয়া এবং লেবাননে; যাদের সঙ্গে ইসরায়েলের সীমান্ত রয়েছে।

২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। একই সঙ্গে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের সমর্থনে শিয়া-লেবানিজ গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে সৌদি আরব। হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে আরব আমিরাত এবং ইসরায়েলি বিমানের জন্য নিজেদের আকাশপথ উন্মুক্ত করে দেয় সৌদি আরব। এসব পদক্ষেপের ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের পদাঙ্ক সৌদি আরবও অনুসরণ করতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।

মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং ইসরায়েলের চুক্তি সাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। তিন দেশের কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক, নিরাপত্তা ও অন্যান্য সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে এই চুক্তি সাক্ষর হবে।

ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের দীর্ঘদিনের থমকে থাকা দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ১৯৯০ সালের অসলো অ্যাকর্ড অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ হয়ে আসছে। অসলো ফিলিস্তিনিদের সামান্য সহায়তা করলেও ওয়াশিংটনের সমর্থন নিয়ে ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনি অঞ্চলে আরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চলেছে।

ওডি/

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড