• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণ

যোদ্ধার লড়াকু মানসিকতাই যুদ্ধজয়ের নিয়ামক!

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৫:১৮
যোদ্ধার লড়াকু মানসিকতাই যুদ্ধজয়ের নিয়ামক!
যুদ্ধরত সেনা সদস্যরা (ছবি : প্রতীকী)

২০১৪ সালের জুনে ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মসুল আক্রমণ করে প্রায় দেড় হাজার আইএস (ইসলামিক স্টেট) অনুসারী। সেই সময় শহরটিকে রক্ষার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মীদের তুলনায় আক্রমণকারীদের সংখ্যা ছিল একেবারেই নগণ্য। একেকজন আইএস সদস্যকে সামলাতে নিরাপত্তারক্ষী ছিল প্রায় ১৫ জন। সেই হিসাবে লড়াইয়ের ফলাফল তো অবধারিতই- আইএসের ভরাডুবি! যদিও বাস্তবের ফল হলো এর সম্পূর্ণ উল্টো। শত্রুদের আক্রমণের মুখে শহর ছেড়ে পালিয়ে যায় সরকারি বাহিনী।

এ ঘটনাকে যুদ্ধে কী ঘটবে তা জানতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান জেমস ক্ল্যাপার। সম্মুখ যুদ্ধে কোনো বাহিনীর লড়াইয়ের ইচ্ছার অভাবকে ‘অনিশ্চিত দুর্বলতা’ বলেও বর্ণনা করেন তিনি।

পৃথিবীর ইতিহাসে বহুবার শুধু সেনা সংখ্যার ভিত্তিতে যুদ্ধের জয়-পরাজয়ের হিসাব ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে বলতে হয় ভিয়েতনাম যুদ্ধের কথা। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটি আক্রমণের সময় তাদের যোদ্ধাদের দৃঢ় চরিত্রের বিষয়টিকে উপেক্ষাই করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যার ফল ভোগ করতে হয়েছে মার্কিনিদের।

একইভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভার্দুন দুর্গ রক্ষায় ফরাসিদের সংকল্প উপেক্ষা করেছিল জার্মানি। জার্মানরা ভেবেছিল, তারা খুব সহজেই এ লড়াইয়ে জিতে যাবে। যদিও শেষ পর্যন্ত দুপক্ষেরই তিন লাখের বেশি সেনা হতাহত হয়েছিলেন সেই যুদ্ধে।

আরও পড়ুন : ভারতীয় সেনাদের শ্যুটিং রেঞ্জে চলে এসেছে চীনা বাহিনী, গুলি ছুড়লেই যুদ্ধ!

শত্রুর মনোবল মূল্যায়ন যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিষয়ক গবেষক ব্রুস বুয়েনো দ্য মেসকিতার মতে, প্রতি ১০টি যুদ্ধের মধ্যে চারটিতেই যাদের লড়ার ইচ্ছা রয়েছে তারাই জয়ী হবে। সামরিক পরিকল্পনাকারীরা দীর্ঘদিন থেকেই সেনার সংখ্যা, অস্ত্র-সরঞ্জামের কার্যকারিতা, গোলা-বারুদের মজুত, সাঁজোয়া যানের সংখ্যা প্রভৃতি তথ্য কম্পিউটারে বিশ্লেষণের মাধ্যমে লড়াইয়ে জয়ের সম্ভাব্যতা নির্ধারণ করছেন। এর পরবর্তী ধাপ হচ্ছে, লড়াইয়ের মুখে সৈন্যরা পালিয়ে যাবে নাকি প্রতিরোধ গড়ে লড়বে সেটি বিশ্লেষণের মাধ্যমে মনোবলের জায়গাটি আরও প্রসারিত করা।

আরও পড়ুন : ইরাকে মার্কিন অবস্থানে হামলা বাড়ার স্বীকারোক্তি সেনাদের

সাম্প্রতিক সময়ে যোদ্ধাদের মনোবলের বিষয়টি নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে অ্যারিজোনা-ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক আর্টিস ইন্টারন্যাশনাল। ইরাকে আসলেই কী ঘটছে তা ভালোভাবে বুঝতে আর্টিসের গবেষকরা ইরাকি বাহিনীর সদস্য, সুন্নি যোদ্ধা, কুর্দিস্তানের স্বাধীনতাকামী পেশমার্গা যোদ্ধাসহ মার্কিন বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা কেন যুদ্ধ করছে, তাদের ইচ্ছা বা দাবি কী, রাস্তায় বিক্ষোভ থেকে শুরু করে আত্মঘাতী হামলায় অংশ নেবে কি না, এ ধরনের বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়েছিল যোদ্ধাদের।

আরও পড়ুন : ইয়েমেনে সৌদি জোটের ভয়াবহ বিমান হামলা

গবেষকরা দেখতে পান, যারা নিজেদের বলিদান দিতে প্রস্তুত তারা শারীরিক আরাম-আয়েশ ও ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অনাগ্রহী।

লড়াইয়ের আগ্রহ হারিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে বাহিনীর মধ্যে হতাহতের পরিমাণের প্রভাবও উঠে আসে এ গবেষণায়। সাধারণত কোনো যোদ্ধা বাহিনীর এক-তৃতীয়াংশ ধ্বংস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাকিরাও ভেঙে পড়ে। তবে কুর্দি এবং ইরাকের কিছু বাহিনী আরও ভয়াবহ বিপর্যয়ের পরেও লড়াইয়ের মানসিকতা দেখিয়েছে। তাদের এমন সাহসিকতার পেছনে কী ধরনের বিশ্বাস কাজ করছে তা খোঁজার চেষ্টা করছে আর্টিস।

আরও পড়ুন : এবার ফ্রান্সকে ভয়ঙ্কর যুদ্ধের হুঁশিয়ারি তুরস্কের

গবেষকরা দেখেছেন, যেসব যোদ্ধা তাদের পরিবারকে মানসিকভাবে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বা তৃতীয় অবস্থানে নামিয়ে দিয়েছে তারা তুলনামূলক বেশি যুদ্ধবাজ বা শক্ত মনোবল সম্পন্ন। যেমন, পেশমার্গা যোদ্ধাদের অনেকের কাছে কুর্দিস্তানের স্বাধীনতাই সবার আগে।

এক্ষেত্রে তারা খেলাফত এবং শরিয়াহর পর জায়গা দিয়েছে নিজেদের পরিবারকে। এ ধরনের বিশ্বাস সম্পন্ন যোদ্ধারা ১০ ভাগের সাত ভাগ সঙ্গী হারিয়েও লড়াইয়ে চালিয়ে যেতে পারে।

ইরাকে পাওয়া ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আর্টিসের ৪৫ জন গবেষক ব্রিটেন, মিশর, গুয়েতেমালাসহ অন্তত ২১টি দেশে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য একটাই- লড়াকু মানসিকতার বিষয়টিকে কম্পিউটারে সফটওয়্যারের মাধ্যমে হিসাব করে ভবিষ্যদ্বাণী করা।

আরও পড়ুন : পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে পাল্টা হুঁশিয়ারি রাশিয়ার

যুক্তরাষ্ট্রে অনেকটা একই কাজ করছে দেশটির বিমান বাহিনী একাডেমির যোদ্ধাদের কার্যকারিতা গবেষণা কেন্দ্র (ডব্লিউইআরসি)। তারা আর্টিসের ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করছে, মনোবলের বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে কোন ধাপে গেলে যুদ্ধের ফল বদলে যেতে পারে।

সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড