আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি জোটের আরোপিত দীর্ঘ তিন বছরের অবরোধের ইতি ঘটছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এ অবরোধ শেষ হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ সংক্রান্ত আলোচনায় এরই মধ্যে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে নমনীয়তা দেখা গেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শীর্ষ কূটনীতিক ডেভিড শেনকার অবশ্য জানিয়েছেন, আলোচনায় এখনো এমন কোনো মৌলিক পরিবর্তন হয়নি যাতে করে দ্রুত সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়া যায়।
ওয়াশিংটনভিত্তিক ব্রুকিংস ইন্সটিটিউটের এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এ ইস্যুতে কথা বলেন ডেভিড শেনকার। সেখানে তিনি বলেছিলেন, আমি পুরো কূটনৈতিক আলোচনায় যেতে চাই না। তবে কিছুটা অগ্রগতি রয়েছে। আমার মনে হয়, অবরোধ উঠে যেতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
আরও পড়ুন : হুথিদের ভয়ঙ্কর ড্রোন হামলায় বিধ্বস্ত সৌদির বিমানবন্দর
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারে সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইরানের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট গঠনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও সৌদি জোটের কাতারবিরোধী অবরোধে ওই চেষ্টায় ফাটল ধরে।
তেহরানের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হওয়ার বদলে দোহার মতো প্রভাবশালী মিত্রের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে রিয়াদ। এমন বাস্তবতায় সৌদি জোটের কাতারবিরোধী অবরোধ তুলে নেওয়ার ব্যাপারে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেয় যুক্তরাষ্ট্র ও কুয়েত। দৃশ্যত ওই মধ্যস্থতা সফল হচ্ছে।
আরও পড়ুন : ফিলিস্তিনকে ধ্বংসের দায়ে আজ ভাঙনের মুখে আরব বিশ্ব
ওয়াশিংটন মনে করে এ অঞ্চলে তার মিত্রদের মধ্যে বিবাদ ইরানকেই লাভবান করবে। ফলে যে কোনো মূল্যে নিজের মিত্রদের ইরানবিরোধী একই প্ল্যাটফর্মে রাখতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন।
ডেভিড শেনকার বলেন, এখনো মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত আলোচনায় আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছ থেকে কিছুটা নমনীয়তা দেখতে পেয়েছি। ফলে আশা করছি আমরা উভয় পক্ষকে এক জায়গায় নিয়ে আসতে পারব এবং এই বিবাদের অবসান ঘটাতে সক্ষম হব।
আরও পড়ুন : হুথিদের ছোড়া ড্রোনকে ভূপাতিতের দাবি সৌদি সেনাদের
ডেভিড শেনকার জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই কূটনৈতিক উদ্যোগে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও যুক্ত ছিলেন।
সৌদি-আমিরাত-ইসরায়েল বলয়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প শুরুতে কাতারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত কৌশলগত দিক বিবেচনায় ওই অবস্থান থেকে সরে আসেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটির অবস্থান কাতারে। ওয়াশিংটনের কাছে আল উদেইদ নামের এই ঘাঁটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
আরও পড়ুন : মহানবীকে অবমাননা করায় ফরাসি ম্যাগাজিনকে অভিশাপ খামেনির
২০১৭ সালের ৫ জুন কথিত সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের অভিযোগ এনে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশর। তবে সৌদি জোটের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে কাতার। বরং এ অবরোধকে রক্তপাতহীন যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান আলে সানি। তার ভাষায়, সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন কয়েকটি আরব দেশ দোহার বিরুদ্ধে প্রকারান্তরে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
পরে অবরোধ প্রত্যাহারে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরে সৌদি জোট। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আল জাজিরা টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া, কাতার থেকে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি প্রত্যাহার এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা।
আরও পড়ুন : মুসলিম উম্মাহর একক ভরসা হতে চান এরদোগান
যদিও সৌদি জোটের দাবি প্রত্যাখ্যান করে উল্টো রিয়াদের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ তুরস্ক ও ইরানের দিকে আরও বেশি ঝুঁকে পড়ে কাতার। আর এই ইরানবিরোধী জোট গঠনেই অবরোধের ইতি টানতে উদ্যোগী হয় ট্রাম্প প্রশাসন।
সূত্র : আল-জাজিরা
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড