• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুসলিম উম্মাহর একক ভরসা হতে চান এরদোগান

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:০৫
মুসলিম উম্মাহর একক ভরসা হতে চান এরদোগান
মুসলিম নেতাদের সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান (ছবি : আল-জাজিরা)

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান সব সময়ই চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন জলসীমা নিয়ে বহুপাক্ষিক বিরোধ, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জেরে গ্রিসের সঙ্গে যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে চাপে রয়েছেন তিনি। যদিও এগুলোকে আধুনিক উপনিবেশবাদের খুব সাধারণ উদাহরণ বলেই মনে করছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।

গত ১ সেপ্টেম্বরের ভাষণে তিনি জোর গলায় ঘোষণা দিয়েছেন, কয়েক শতাব্দী ধরে আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত কোনও অঞ্চলই শোষণ করতে যারা বাদ রাখেনি, কোনো সম্প্রদায়কেই হত্যাযজ্ঞ থেকে রেহাই দেয়নি এবং একজন মানুষকেও যারা অনিপীড়িত রাখেনি, তাদের দিন শেষ হয় আসছে।

নিজ ঘরে দেশপ্রেমিক সমর্থন পেতে বহুদিন ধরেই পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন এরদোগান। এবার বিশ্বব্যাপী ভক্ত বাড়ানোর দিকে নজর দিয়েছেন তিনি। তুরস্কের এ নেতা নিজেকে মুসলিম উম্মাহ এবং বিশ্বের দরিদ্র মানুষদের কণ্ঠ হিসেবে তুলে ধরতে চান।

এতদিন এরদোগানের প্রধান লক্ষ্য ছিল মূলত ইউরোপ। তুরস্ক ঐতিহ্যগতভাবেই নিজেকে ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও জার্মানির মতো দেশগুলোতে বসবাসকারী তুর্কিদের রক্ষাকর্তা হিসেবে মনে করে। তবে এরদোগান এখন আরও বড় পরিসরে ভাবতে শুরু করেছেন।

আরও পড়ুন : মহানবীকে অবমাননা করায় ফরাসি ম্যাগাজিনকে অভিশাপ খামেনির

জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের গবেষক সিনেম আদার বলেন, তুরস্ক নিজেকে ইউরোপে মুসলিমদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। এই নীতি ইতোমধ্যেই বলকান এলাকায় সফল হয়েছে। সেখানে বসনিয়াক, আলবেনিয়ান ও কসোভারদের সহানুভূতি পেতে উপসাগরীয় অর্থের বিপরীতে লড়তে হয়েছে তুরস্ককে।

তুর্কিদের কৌশলের একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে ইসলামোফোবিয়ার (ইসলামভীতি) বিরুদ্ধে প্রচারণা। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশে তুর্কি দূতাবাস, সহযোগিতা সংস্থা, লবিং গ্রুপগুলোকে সক্রিয় করেছে এরদোগান সরকার। মুসলিমদের যে কোনো ধরনের হয়রানি বা বিদ্বেষমূলক ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে তুর্কি দূতাবাসগুলোতে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : লাঠি, বর্শা, রাইফেল দিয়ে সীমান্তে চীনা বাহিনীর আক্রমণ!

ইউরোপে মুসলিম বিদ্বেষ একটি বড় সমস্যা ঠিকই; তবে সমালোচকদের দাবি, এরদোগানের এ প্রচারণা পশ্চিমা সরকারগুলোর বিরুদ্ধে অসন্তোষ উসকে দেয়া এবং তার নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্যকে বৈধতা দেওয়ার জন্য চালানো হচ্ছে।

ইউরোপের পাশাপাশি আমেরিকার মুসলিম এবং কৃষ্ণাঙ্গদেরও পাশে দাঁড়াচ্ছে তুরস্ক। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ওয়াশিংটনের কাছে একটি ইসলামিক সেন্টার চালু করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। বিখ্যাত বক্সার মোহাম্মদ আলীর শিকাগোর সম্পত্তি কিনে নেওয়া হয়েছে। সেখানে মুসলিম শিশুদের জন্য গ্রীষ্মকালীন স্কুল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তুরস্কের।

আরও পড়ুন : আসামিদের ২,৭৬৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে দৃষ্টান্ত গড়ল তুর্কি আদালত

কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক মুসলিম হিরো ম্যালকম এক্সের মেয়েদের সঙ্গে দেখা করেছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। ম্যালকমের এক কন্যা বেশ কয়েকবার বলেছেন, তুরস্কের এ নেতা তার মরহুম পিতার উত্তরাধিকারের মূর্ত প্রতীক। এর কিছুদিন পরেই আঙ্কারায় মার্কিন দূতাবাসের পাশের একটি সড়কের নাম পরিবর্তন করে ‘ম্যালকম এক্স এভিনিউ’ রেখেছে তুরস্ক।

তবে সবকিছুই যে এরদোগানের পক্ষে যাচ্ছে তা কিন্তু নয়। চীনের উইঘুর মুসলিমদের নিপীড়নের বিষয়ে কার্যত নীরবতাই পালন করছে তুরস্ক। এ নিয়ে সমালোচকদের তোপের মুখে পড়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাটিকে ‘অন্যায় আদেশের বেদনাদায়ক বহিঃপ্রকাশ’ বলে মন্তব্য করেছিলেন এরদোগান। এর জবাবে একটি কৃষ্ণাঙ্গ সংগঠন অত্যন্ত বাজে মন্তব্যসহ তাকে নিজের কাজে মন দিতে বলেছিল।

আরও পড়ুন : ইসরায়েল-আমিরাতের চুক্তি নিয়ে বিশ্বের দুইশ আলেমের ফতোয়া

বিশ্লেষকদের মত, প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কথায় আরও ভালো প্রভাব পড়ত যদি তার সরকার সন্ত্রাসের নাটকীয় অভিযোগে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার বন্ধ করত এবং কুর্দিদের দমনে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জেলে না ভরতো।

এছাড়া ভেনেজুয়েলায় নিকোলাস মাদুরো এবং সুদানে ওমর আল-বশিরের দমনাত্মক সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিলেন এরদোগান। গত মাসে বেলারুশের স্বৈরশাসক আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোকে বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী ঘোষণার পর অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। এধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডগুলো এরদোগানকে অদ্ভুত এক অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।

আরও পড়ুন : ফিলিস্তিনকে ধ্বংসের দায়ে আজ ভাঙনের মুখে আরব বিশ্ব

যদিও এসব সমালোচনাও এরদোগানের আকাঙ্ক্ষা কমাতে পারেনি। তিনি নিজেকে শুধু মুসলিম বিশ্বের কণ্ঠ নয়, গোটা দক্ষিণার্ধের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান মানবিক সহায়তা দেয়ার কৃতিত্ব তিনি দাবি করতেই পারেন।

সোমালিয়ার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিশাল বস্তি নির্মাণ করে দেওয়া, কাশ্মীরে ভারতীয় আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানানো, প্রতিবেশী সিরিয়ার প্রায় ৪০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ায় প্রশংসা পেতে পারেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।

আরও পড়ুন : মুসলিমদের নির্যাতন করেই তবে কি নোবেল পাচ্ছেন ট্রাম্প?

আফ্রিকা এবং এশিয়াতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে রেসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের। ফিলিস্তিনের ৭৫ শতাংশ এবং জর্ডানের প্রায় একই সংখ্যক মানুষ তুরস্কের নীতিকে সমর্থন করছেন। পাকিস্তানে এরদোগানের জনপ্রিয়তা দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমান। এ নিয়ে কৌতুক করে অনেকেই বলছেন, পাকিস্তানের আগামী নির্বাচনে দাঁড়ালে হয়তো এরদোগান সহজেই জিতে যাবেন।

আরও পড়ুন : বিশ্বাসঘাতকদের শাস্তির হুঁশিয়ারি রুহানি-এরদোগানের

তুর্কি প্রেসিডেন্ট এবং তার অনুসারীদের বিশ্বাস, পুরনো বিশ্ব ব্যবস্থা ক্রমশ ধসে পড়ছে এবং নতুন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চান তারা। এরদোগানের পরিকল্পনাকে হয়তো অনেকেই ভণ্ডামি, বিদ্বেষমূলক বলে অভিযোগ করতে পারেন, তবে সেটিকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করার উপায় নেই।

সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড