• বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফিলিস্তিনকে ধ্বংসের দায়ে আজ ভাঙনের মুখে আরব বিশ্ব

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:১৩
ফিলিস্তিনকে ধ্বংসের দায়ে আজ ভাঙনের মুখে আরব বিশ্ব
ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় আহত ফিলিস্তিনিকে উদ্ধার করা হচ্ছে (ছবি : আল-জাজিরা)

মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদিবাদী দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েল ও কথিত মুসলিম রাষ্ট্র আমিরাতের মধ্যে কথিত ঐতিহাসিক চুক্তির প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বৈঠকে বসছেন আরব লিগের নেতারা। মূলত সেখানে ফিলিস্তিন ইস্যুতে জোর আলোচনা হতে পারে। তবে বরাবরের মতো এ ধরনের বৈঠকে পারস্পরিক ঐক্যের বদলে এবার বিভাজন সৃষ্টির সম্ভাবনাই বেশি।

ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করণের চুক্তি করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০০২ সালের আরব শান্তি পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে নির্যাতিত মুসলিম রাষ্ট্র ফিলিস্তিন। ওই পরিকল্পনা অনুসারে ইসরায়েলের ১৯৬৭ সালের সীমান্ত প্রত্যাহার, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের বিষয়ে স্থায়ী সমাধান এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরেই কেবল ইসরায়েলিদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা আরব দেশগুলোর।

ফিলিস্তিনি প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হুসেইন হামায়েল বলেছেন, শান্তি পরিকল্পনার খসড়ায় বিরোধিতা করে বাহরাইন নিজেকে আরব ও মুসলিমদের শত্রুপক্ষে দাঁড় করিয়েছে।

ফিলিস্তিনি স্বার্থ বলি দেওয়ার কারণ

গত ১৩ আগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল-আমিরাত চুক্তির কথা ঘোষণায় রীতিমতো হতবাক হয়েছিল ফিলিস্তিনি প্রশাসন। এর জন্য তারা আমিরাতের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে প্রতারণারও অভিযোগ করেছে।

আরও পড়ুন : তুরস্কের পথে সেনা পাঠাল গ্রিস, সীমান্তে উত্তেজনা

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আরব বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশ শিগগিরই আমিরাতের পথ অনুসরণ করবে। ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বাহরাইন এবং ওমান।

লন্ডনের কিংস কলেজের নিরাপত্তা গবেষণা বিষয়ক সহকারী অধ্যাপক আন্দ্রেস কিং বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুটি ঐতিহ্যগতভাবেই আরব লিগকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে। তবে চলতি বছর সেই ইস্যুটাই বিভাজনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এমন অবস্থায় ফিলিস্তিনি নেতাদের উত্থাপিত অনেক প্রস্তাবেই উপসাগরীয় দেশগুলো আর সমর্থন করবে না বলে মনে করেন এ বিশ্লেষক।

আরও পড়ুন : বিশ্বাসঘাতকদের শাস্তির হুঁশিয়ারি রুহানি-এরদোগানের

তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে হয়তো আরব বিশ্বের আর কোনো দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না। তবে ইসরায়েলিদের সঙ্গে লেনদেন ও ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়বে, যেখানে ফিলিস্তিনি স্বার্থের কোনো যোগসূত্র থাকবে না।

আন্দ্রেস কিং বলেছেন, আমিরাত, বাহরাইন ও সুদানের ক্ষেত্রে আরব-ইসরায়েল দ্বন্দ্বকে ফিলিস্তিন- ইসরায়েলের সমস্যা বলে ধরা হয়েছে, যার ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নে কোনো বাধা থাকার কথা নয়।

ফিলিস্তিনি পলিসি নেটওয়ার্ক আল-শাকাবার সদস্য মারওয়া ফাতাফতাও এ বিষয়ে একমত। তিনি মনে করেন, ভূরাজনৈতিক স্বার্থের কারণেই ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিষয়টি চাপা পড়ছে।

আরও পড়ুন : মহানবীকে অবমাননা করায় ফরাসি ম্যাগাজিনকে অভিশাপ খামেনির

মারওয়া বলেন, উপসাগরীয় অনেক দেশই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী। সেক্ষেত্রে ইসরায়েল-আমিরাত চুক্তি বরফ ভাঙার সূচনা মাত্র।

তার ভাষায়, ইসরায়েলের সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্কোন্নয়নের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং এটি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ফলে আরব লিগের বৈঠক থেকে ফিলিস্তিনিদের জন্য বড়জোর মৌখিক আশ্বাসই আসতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

সৌদির অবস্থান

আঞ্চলিক পরাশক্তি সৌদি আরব ফিলিস্তিনিদের স্বার্থরক্ষা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না বলে ঘোষণা দিলেও আমিরাতের সিদ্ধান্তের কোনো প্রতিবাদ জানায়নি।

আরও পড়ুন : লাঠি, বর্শা, রাইফেল দিয়ে সীমান্তে চীনা বাহিনীর আক্রমণ!

বিশ্লেষকদের মতে, এ অবস্থায় রিয়াদ হয়তো আরব শান্তি পরিকল্পনার পক্ষে মৌখিক সমর্থন লাভের চেষ্টা করবে। যদিও বিরোধীদের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত অবস্থানে না গিয়ে তারা আরব দেশগুলোর জন্য স্বতন্ত্রভাবে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পথ খোলা রাখতে পারে।

আন্দ্রেস কিং বলেন, সৌদি আরব মৌখিকভাবে ফিলিস্তিনি স্বার্থ, জেরুজালেম ইস্যু ও আরব শান্তি পরিকল্পনার পক্ষে প্রচারণা চালাবে। তবে কাজের ক্ষেত্রে রিয়াদ কী করবে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।

আরও পড়ুন : কাশ্মীরি যোদ্ধাদের বোমায় আহত দুই ভারতীয় সেনা

তিনি বলেন, নেতৃস্থানীয় আরব দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতোমধ্যেই আমিরাতি নাগরিকদের সন্তুষ্ট করতে ফিলিস্তিনি স্বার্থকে বলি দিয়েছে। এ অবস্থায় আরব শান্তি পরিকল্পনার পক্ষে বহুপাক্ষিক সমর্থন তৈরি কঠিনই হবে।

মারওয়া ফাতাফতা বলেন, সৌদি আরব অতীতে বহুবারই ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী, বিশেষ করে ইরানের ক্রমবর্ধমান হুমকির প্রেক্ষিতে। বস্তুত, সৌদি আরব দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচলে নিজেদের আকাশসীমা খুলে দিয়ে ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করণের পথ সহজ করে দিয়েছে।

সূত্র : আল-জাজিরা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড