• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফিলিস্তিনিদের গুহাতেও থাকতে দিচ্ছে না ইসরায়েলের সেনারা

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৩ আগস্ট ২০২০, ১২:৪১
ফিলিস্তিনিদের গুহাতেও থাকতে দিচ্ছে না ইসরায়েলের সেনারা
গুহায় বসবাসরত ফিলিস্তিনি পরিবার (ছবি : রয়টার্স)

ফিলিস্তিনি যুবক আহমেদ আমারনাহের বয়স ৩০। পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বহুদিন ধরেই নিজের পরিবারের সঙ্গে পশ্চিম তীরের ফারাসিন গ্রামে একটি পাহাড়ি গুহায় বাস করেন তিনি। যদিও ইসরায়েল এখন বলছে, তাদের এই ঘর সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে। তাই এটা ভেঙে দেওয়া হবে। বাড়ি ভেঙে দিতে ইতোমধ্যে একটি নোটিশও জারি করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। যদিও ইহুদিদের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন আহমেদ।

তিনি বলছেন, আমার এই বাড়ি প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়েছে। ইসরায়েল কোনোভাবেই বলতে পারে না, এই বাড়ি অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। খবর আল-জাজিরার।

শুধু আহমেদ আমারনাহের বাড়িই নয়। অধিকৃত পশ্চিম তীরের বহু পরিবারের ঘরবাড়িই ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেককেই আবার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার বলছে, এখন থেকে এই অঞ্চলে নতুন কোনো বাড়ি নির্মাণ করতে অবশ্যই ইসরায়েলের অনুমতি নিতে হবে। এছাড়া ইতোমধ্যে যেসব বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।

১৯৯০ সালে স্বাক্ষরিত অসলো শান্তিচুক্তি অনুযায়ী পশ্চিম তীরের কিছু এলাকায় স্বায়ত্তশাসনের অধিকার পায় ফিলিস্তিনিরা। তবে এই অঞ্চলের ৬০ শতাংশ এলাকাই ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যা এরিয়া-সি নামে পরিচিত। এরিয়া-সি’তেই ফারাসিন গ্রাম অবস্থিত।

এলাকাটিকে এখনো ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড বলে মনে করে জাতিসংঘ। যদিও আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ ও নিষিদ্ধ হলেও ইহুদি বসতি স্থাপনের জন্য পুরো এলাকা জবরদখলের চেষ্টা করছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলের এই দখল দারিত্বের কারণে আহমেদ ও তার মতো অনেকেই ধরেই নিয়েছেন, এরিয়া-সি এলাকায় বাড়ি নির্মাণের অনুমতি তারা কখনই পাবে না। আর তাই ফারাসিন গ্রামের একপ্রান্তে পাহাড়ি এলাকার একটি প্রাকৃতিক গুহায় পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন আহমেদ।

আরও পড়ুন : ড্রোন হামলার জন্য তুরস্ককে দোষারোপ ইরাকের, সফর বাতিল

তিনি মনে করেছিলেন, গুহা যেহেতু প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। তাই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে না যে, এটা অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়া ওই গুহাটি তার নামেই রেজিস্ট্রি করে দিতে সম্মত হয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখানেও জোর-জবরদস্তি করে উচ্ছেদ করতে চাইছে ইসরায়েলি সেনারা।

আরও পড়ুন : ভুলে নিজেদের ড্রোন ভূপাতিত করল ইসরায়েল

আহমেদ তার গুহাবাড়ির মুখ একটি পাথর দিয়ে আটকে দিয়েছেন। একই সঙ্গে একটি কাঠের দরজা সেট করেছেন। এরপর গুহাটিকে সুন্দর করে সাজিয়েছেন। একটি রান্নাঘর, পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য একটি থাকার ঘর আর নিজের ও স্ত্রীর জন্য একটি আলাদা ঘর বানিয়ে নিয়েছেন। অতিথির জন্য একটি বসার জায়গাও রয়েছে গুহার মধ্যে।

আরও পড়ুন : নিজেদের শহরেই ভুলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল ইসরায়েল

মা-বাবা আর স্ত্রী-ছেলেমেয়ে নিয়ে গত দেড় বছর ভালোই চলছিল তার সংসার। কিন্তু জুলাই মাসেই তার এই সাজানো-গোছানো গুহাবাড়ি ভেঙে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলের পক্ষ থেকে নোটিশ জারি করা হয়। আহমেদ একা নন, ফারাসিন গ্রামের অন্তত ২০টি পরিবারকে একই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন : বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত লেবাননকে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিল ইসরায়েল

অধিকৃত পশ্চিম তীরের দায়িত্বে থাকা ইসরায়েলি সামরিক শাখা সিওজিএটি বলেছে, ফারাসিন গ্রামের কয়েকটি বাড়িকে ভেঙে ফেলার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কারণ ওই অবকাঠামোগুলো যথার্থ কর্তৃপক্ষে অনুমতি ও অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।

নোটিশের ব্যাপারে আহমেদ বলেছেন, অবৈধভাবে নির্মাণের কথা শুনে তিনি বেশ অবাক হন। তার ভাষায়, ওই গুহা আমি নিজে তৈরি করিনি। সেই প্রাচীনকাল থেকেই এটা এখানেই ছিল।

আরও পড়ুন : চীনে হামলা চালাতে পুরনো রাফাল বিমান কিনেছে ভারত!

আহমেদ আরও বলেন, আমার ঠিক বোধগম্য নয়, তারা (ইসরায়েল) কিভাবে আমাকে এই গুহায় বসবাস করা বাধা দিতে পারে। প্রাণীরাও গুহায় বাস করে আর তাদেরকে কেউই বের করে দিতে পারে না। তাহলে তারাও আমার সঙ্গে প্রাণীর মতোই আচরণ করুক। আমি এই গুহাতেই থাকব।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড