• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাবরি মসজিদ-রাম মন্দির বিতর্ক : যা বলছে ইতিহাস

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০১ আগস্ট ২০২০, ১২:১৭
বাবরি মসজিদ-রাম মন্দির বিতর্ক : যা বলছে ইতিহাস
অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ও রাম মন্দির (ছবি : স্ক্রোল ইন)

ভারতের বহু প্রতীক্ষিত অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ও রাম মন্দির নিয়ে করা মামলার রায় সুপ্রিম কোর্টে ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে বাবরি মসজিদের বিরোধপূর্ণ জমি রামজন্মভূমি ট্রাস্টকে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। সেক্ষেত্রে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণে আলাদা বিকল্প কোনো জমি বরাদ্দের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। খবর ‘এনডিটিভির’।

সাবেক প্রধান বিচারপতি তার রায় ঘোষণায় বলেছেন, এই রায় সম্পূর্ণ ঐকমত্যের একটি রায়। তবে মসজিদের নিচে ঠিক কোন স্থাপনা ছিল এখনো তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি অর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া।

ভারতের সর্বোচ্চ আদালত আরও জানিয়েছে, কোনো ফাঁকা জায়গায় মসজিদ তৈরি হয়নি। ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে এখানে শেষবার নামাজ হয়েছিল। সেক্ষেত্রে বিকল্প জমি পাবে মুসলিমরা। এমনকি শর্তসাপেক্ষে হিন্দুদেরও মূল বিতর্কিত অংশ থেকে জমি দেওয়া হবে।

বিতর্কিত এই পবিত্র স্থানের ইতিহাস পর্যালোচনা করে গণমাধ্যম ‘বিবিসি বাংলা’ জানায়, ১৯৯২ সালে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় শহর অযোধ্যায় বাবরি মসজিদকে আরও একবার ধ্বংস করা হয়েছিল। ধর্মীয়ভাবে পবিত্র হিসেবে বিবেচিত এই অঞ্চলটিতে বহুবছর যাবত হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

আরও পড়ুন : ইরানের বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভিডিও ভাইরাল

১৫২৮ সাল : স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু লোকদের মতে, হিন্দুদের অন্যতম আরাধ্য দেবতা রাম যেখানে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন সেখানেই মোঘল সম্রাট বাবরের নির্দেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়।

১৮৫৩ সাল : ধর্মকে কেন্দ্র করে প্রথমবারের মতো অঞ্চলটিতে সহিংসতার ঘটনা ঘটে।

১৮৫৩ সাল : ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসন এই ধর্ম দুটির লোকজনের উপাসনার জন্য জায়গাটিকে পৃথক করার উদ্দেশ্যে বেষ্টনী নির্মাণ করে। যেখানে বেষ্টনীর ভেতরের চত্বর মুসলিমদের এবং বাইরের চত্বর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ব্যবহার করার জন্য নির্ধারিত হয়।

আরও পড়ুন : লিবিয়ায় যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে রুশ বিমানের অবতরণ

১৯৪৯ সাল : মসজিদের ভেতর ভগবান রামের মূর্তি স্থাপন করা হয়। স্থানীয় হিন্দুদের বিরুদ্ধে মূর্তিগুলো রাখার অভিযোগ ওঠে। এতে মুসলিমরা প্রতিবাদ জানালে দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করে। পরবর্তীকালে সরকার চত্বরটিকে একটি বিতর্কিত স্থান বলে ঘোষণা করে এবং যার দরজা সকলের জন্য পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১৯৮৪ সাল : বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) নেতৃত্বে ভগবান রামের জন্মস্থান পুনরুদ্ধার এবং তার সম্মানের একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কমিটি গঠন করা হয়। তৎকালীন বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি (পরবর্তীকালে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) ঐ প্রচারণার নেতৃত্ব নেন।

১৯৮৬ সাল : জেলার বিচারক নির্দেশ দেন যেন বিতর্কিত মসজিদের দরজা উন্মুক্ত করণের মাধ্যমে হিন্দুদের সেখানে উপাসনার সুযোগ করে দেওয়া হয়। মুসলিমরা এই নির্দেশের প্রতিবাদে বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি গঠন করে।

আরও পড়ুন : নেপাল থেকে ভারতে ঢুকছে জঙ্গিরা, সীমান্তে সতর্কতা

১৯৮৯ সাল : বিতর্কিত মসজিদ সংলগ্ন স্থানে রাম মন্দিরের ভিত্তি স্থাপনের মাধ্যমে নতুনভাবে প্রচারণা শুরু করে ভিএইচপি।

১৯৯০ সাল : ভিএইচপির কর্মীরা হামলা চালিয়ে মসজিদের আংশিক ক্ষতিসাধন করে। তখন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখর সকলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিতর্ক সমাধানের চেষ্টা করেন। যদিও পরের বছর তা বিফল হয়ে যায়।

১৯৯১ সাল : অযোধ্যা উত্তরাঞ্চলীয় যে রাজ্যে অবস্থিত, সেই উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতায় আসে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি।

১৯৯২ সাল : ভিএইচপি, বিজেপি এবং শিব সেনা দলের সমর্থকরা মসজিদটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে গোটা ভারতে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে হওয়া দাঙ্গায় ২ হাজারের অধিক লোকের প্রাণহানি হয়।

১৯৯৮ সাল : তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির অধীনে পুনরায় জোট সরকার গঠন করে বিজেপি।

আরও পড়ুন : যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কখনো আত্মসমর্পণ করবে না ইরাক

২০০১ সাল : মসজিদ ধ্বংসের বার্ষিকীতে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা শুরু হয়। যে কারণে স্থানটিতে ফের মন্দির তৈরির দাবি তোলে ভিএইচপি।

২০০২ সালের জানুয়ারি : প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ি নিজের কার্যালয়ে একটি অযোধ্যা সেল গঠন করেন। যেখানে সংশ্লিষ্ট হিন্দু ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিনিয়র কর্মকর্তা শত্রুঘ্ন সিংকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ফেব্রুয়ারি ২০০২ : উত্তরপ্রদেশের উপনির্বাচনের তফসিলে বিতর্কিত স্থানে মন্দির নির্মাণের বিষয়টি বাদ দেয় ক্ষমতাসীন বিজেপি। যদিও ভিএইচপি একই বছরের ১৫ই মার্চের মধ্যে মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরুর ঘোষণা দেয়। এতে শত শত স্বেচ্ছাসেবক বিতর্কিত স্থানে জড়ো হতে শুরু হয়। তখন অযোধ্যা থেকে ফিরতে থাকে হিন্দু অ্যাক্টিভিস্টদের বহনকারী একটি ট্রেনে হামলার ঘটনায় অন্তত ৫৮ জনের প্রাণহানি হয়।

আরও পড়ুন : অযোধ্যায় মুসলিমদের দমনে কঠোর পুলিশি পাহারা

মার্চ ২০০২ : ট্রেনে হামলার জের ধরে গুজরাটে ব্যাপক দাঙ্গার সৃষ্টি হয়। যেখানে প্রায় ১ হাজার থেকে ২ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে।

এপ্রিল ২০০২ : ধর্মীয়ভাবে পবিত্র এই স্থানটির প্রকৃত মালিকানার দাবিদার ঠিক কারা, মূলত তা নির্ধারণের জন্য হাইকোর্টে তিন বিচারক শুনানি আয়োজন করেন।

২০০৩ সালের জানুয়ারি : ঐতিহাসিক এই স্থানটিতে ভগবান রামের মন্দিরের কোনো নিদর্শন আছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য আদালতের নির্দেশে নৃতত্ববিদরা জরিপ শুরু করেন।

অগাস্ট ২০০৩ : প্রকাশিত জরিপের ফলাফলে যে মসজিদের নিচে মন্দিরের চিহ্ন পাওয়া যায়। যদিও মুসলিমরা এই দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। হিন্দু অ্যাক্টিভিস্ট রামচন্দ্র পরমহংসের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ি বলেন, ‘আমি মৃত ব্যক্তির আশা পূরণ করতে চাই এবং অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণ করব।’ যদিও তখন তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘কেবল আদালতের নির্দেশে এবং সকলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই দ্বন্দ্বের সমাধান হবে।’

আরও পড়ুন : ইরানের বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভিডিও ভাইরাল

সেপ্টেম্বর ২০০৩ : বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পেছনে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় সাতজন হিন্দু নেতাকে বিচারের আওতায় আনা উচিত বলে রুল জারি করেন আদালত। তখন তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদভানির- যিনি ১৯৯২ সালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। যদিও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।

অক্টোবর ২০০৪ : বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতা আদভানি জানান, তার দল এখনো অযোধ্যায় মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ এবং তা অবশ্যম্ভাবী।

নভেম্বর ২০০৪ : উত্তর প্রদেশের একটি আদালত রায় প্রদান করেন, মসজিদটি ধ্বংস করার সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় বিজেপি নেতা আদভানিকে রেহাই দিয়ে আদালতের জারি করা পূর্ববর্তী আদেশ পুনর্যাচাই করা উচিত।

আরও পড়ুন : স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্বব্যাপী ইদ উদযাপন

জুলাই ২০০৫ : সন্দেহভাজন মুসলিম সন্ত্রাসীরা বিস্ফোরক ভর্তি একটি জিপ দিয়ে বিতর্কিত স্থানটিতে হামলা চালিয়ে সেখানকার চত্বরের দেয়ালে গর্ত তৈরি করে। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হয় ছয়জন, যাদের মধ্যে পাঁচজনই জঙ্গি বলে দাবি করে নিরাপত্তা রক্ষীরা।

জুন ২০০৯ : মসজিদ ধ্বংস হওয়া সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে থাকা লিবারহান কমিশন তদন্ত শুরু করার ১৭ বছর পর তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।

নভেম্বর ২০০৯ : প্রকাশিত লিবারহান কমিশনের প্রতিবেদনে মসজিদ ধ্বংসের পেছনে বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভূমিকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। যদিও তা নিয়ে সংসদে ব্যাপক হট্টগোলের শুরু হয়।

আরও পড়ুন : শাপলা মিডিয়ার ‘আগস্ট ১৯৭৫’ চলচ্চিত্রের পোস্টার রিলিজ কাল

সেপ্টেম্বর ২০১০ : আল্লাহাবাদ হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন, স্থানটির নিয়ন্ত্রণ ভাগাভাগি করে দেওয়া উচিত। আদালতের রায় অনুযায়ী সেখানকার এক-তৃতীয়াংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ মুসলিমদের, এক-তৃতীয়াংশ হিন্দুদের এবং বাকি অংশ ‘নির্মোহী আখারা’ গোষ্ঠীর কাছে দেওয়া উচিত।

এতে যেই অংশটি বিতর্কের কেন্দ্র এবং যেখানে মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল, মূলত তার নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয় হিন্দুদের কাছে। একজন মুসলিম আইনজীবী বলেন, ‘আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।’

২০১১ সালের মে মাস : ২০১০ সালের রায়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় হিন্দু ও মুসলিম উভয় পক্ষই আদালতে আপিল করে। যা প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায় বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট।

আরও পড়ুন : সরকারের অনুমতি ছাড়া ভারতীয় সেনাদের নিয়ে ছবি নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা

নভেম্বর ২০১৯ : বিতর্কিত এই স্থানটিতে মন্দির তৈরি এবং মুসলিমদের জন্য অন্য স্থানে মসজিদ নির্মাণের পক্ষে চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট।

উল্লেখ্য, আগামী সপ্তাহে অযোধ্যার বাবরি মসজিদের স্থানে বিতর্কিত রাম মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড