• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পাকিস্তানে ইসলাম অবমাননাকারীকে আদালতে খুন, ক্ষেপল যুক্তরাষ্ট্র 

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

৩১ জুলাই ২০২০, ১৭:১৬
করোনা
ছবি : সংগৃহীত

পাকিস্তানের পেশোয়ারে গতকাল বুধবার ভরা আদালত কক্ষে ঢুকে ইসলাম অবমাননার মামলায় বিচারাধীন অভিযুক্ত তাহির আহমেদ নাসিমকে গুলি করে হত্যা করেছেন এক তরুণ। এই ঘটনার পর খালিদ খান নামের ওই তরুণকে আটক করা হয়েছে। ইসলাম অবমাননায় অভিযুক্তকে হত্যা করায় তরুণদের আইকন হিসেবে অভিহিত করছে বেশ কিছু স্থানীয় গণমাধ্যম। তাকে ন্যাশনাল হিরোও বলা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিংহের সঙ্গে তুলনা করছেন অনেকেই। সিংহের সঙ্গে খালিদের ছবি যুক্ত করে ভয়ে গেছে যোগাযোগমাধ্যম।

স্থানীয় এক গণমাধ্যমে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ছবিতে গোলাপের পাপড়ি বর্ষণ করা হচ্ছে। তাকে আশিক-ই-রসুল (নবী প্রেমিক) হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। এমনকি পাকিস্তানি নেতারাও এই তরুণের প্রশংসায় গান বাঁধছেন।

এর আগে তাহির আহমেদ নাসিম নামের অভিযুক্ত নিজেকে নবী বলে ঘোষণা করায়, দুই বছর আগে ধর্মদ্রোহিতা ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত বুধবার আদালত কক্ষে আচমকা হামলায় গুলিবিদ্ধ তাহির আহমেদকে হাসপাতালে পাঠানোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।

সংখ্যালঘু আহমদিয়া সম্প্রদায়ের তাহির নাসিম ছিলেন মার্কিন নাগরিক। তাকে এভাবে হত্যা করা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, এই ধরনের লজ্জাজনক ঘটনা যাতে আর না হয়, তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিতে হবে পাকিস্তানকে। আর তাহিরকে মারার পিছনে যারা আছে, সকলের শাস্তি হওয়া দরকার।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বিবৃতিতে জানিয়েছে, আমরা ব্যথিত, আতঙ্কিত এবং ক্ষুব্ধ। নাসিমকে প্রলোভন দেখিয়ে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারপর তাঁকে ফাঁদে ফেলে ধর্মনিন্দার আইনে বিচার শুরু হয়। পাকিস্তানে ধর্মনিন্দা সংক্রান্ত আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রায়ই অপব্যবহার করা হয়। তাই আমাদের আবেদন, পাকিস্তান অবিলম্বে ব্যবস্থার সংস্কার করুক। আর তাহিরকে যে বা যারা গুলি করে হত্যা করেছে, তাঁদের যেন আইনানুযায়ী শাস্তি হয়।

নাসিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি একটি ইসলামিক স্কুলে গিয়ে ছাত্রদের বলেছিলেন, তিনিও নবী। তাই পয়গম্বরকে অপমান করাসহ একাধিক অভিযোগে তাঁর বিচার হচ্ছিল। একটি কট্টরপন্থী ইসলামিক গোষ্ঠী বৃহস্পতিবারই তাহিরের হত্যাকারীর মুক্তি দাবি করেছে। তাহিরকে হত্যার পর প্রশ্ন উঠছে, কী করে হত্যাকারী রিভলভার নিয়ে আদালতকক্ষে ঢুকল? কারণ, বাইরে থেকে আদালতকক্ষে ঢোকা পর্যন্ত একাধিক জায়গায় তল্লাশি করা হয়।

ধর্মদ্রোহিতা পাকিস্তানে বরাবরই খুব বিতর্কিত, জটিল একটি বিষয়। ধর্মদ্রোহিতায় দোষী সাব্যস্তকে যাবজ্জীবন কারাবাস বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধি আছে বটে, কিন্তু অনেক সময়ই আইন আদালতের তোয়াক্কা না করে মারমুখী জনতাই বিচারকর্তার ভূমিকা হাতে তুলে নিয়ে চটজলদি ফতোয়া দিয়ে অভিযুক্তকে মেরে ফেলে বা তাতে প্ররোচনা দেয়। বিচার বিভাগের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আইনি এক্তিয়ার আছে, তবে স্রেফ কেউ ধর্মদ্রোহিতায় অভিযুক্ত হলেই ধুন্ধুমার হয়ে যায়। ধর্মদ্রোহিতার অভিযোগকে হাতিয়ার করে ব্যক্তিগত বদলা নেওয়া হয় বা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ পাকিস্তানের ঘরোয়া, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর।

আসিয়া বিবি নামে ধর্মদ্রোহিতায় অভিযুক্ত এক খ্রিস্টান মহিলার পক্ষ নেওয়ায় ২০১১ সালে নিজের দেহরক্ষীর গুলিতে প্রাণ হারান পঞ্জাবের গভর্নর। আসিয়ার মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল। দীর্ঘ আট বছর কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি মামলা থেকে মুক্তি পান। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে জোর আলোড়ন হয়। তবে ছাড়া পাওয়ার পর কট্টরপন্থী মৌলবাদীদের ক্রমাগত প্রাণে মারার হুমকির মুখে গত বছর কানাডায় মেয়েদের কাছে চলে যান আসিয়া।

ওডি/

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড