• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নেপালের মানচিত্রে বিপ্লব আনার পরই সরানো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে!

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৮ জুন ২০২০, ১৫:৪৬
নেপালের মানচিত্রে বিপ্লব আনার পরই সরানো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে!
ভাইরাসে আক্রান্তের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে (ছবি : ইউরো নিউজ)

ভারত সীমান্তের তিনটি বিতর্কিত এলাকাকে দেশের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে যিনি প্রায় রাতারাতি নেপালের জাতীয় নায়কে পরিণত হয়েছিলেন, এবার সেই প্রধানমন্ত্রী কে পি ওলির পদত্যাগের দাবিতে তার দলের ভেতরেই জোরালো বিরোধ শুরু হয়েছে।

কাঠমান্ডুতে এখন কমিউনিস্ট পার্টির যে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক চলছে, সেখানে ওলি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন এবং এই বৈঠকেই তার অপসারণের পথ প্রশস্ত হতে পারে বলে নেপালে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

সাবেক মাওবাদী নেতা ও বর্তমানে নেপালের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির দলীয় প্রধান প্রচন্ডই (পুষ্প কুমার দহাল) কে পি ওলি-র বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

আর প্রতিবেশী ভারত গোটা ঘটনাপ্রবাহের দিকে সতর্ক নজর রাখছে, নেপালে ক্ষমতার সম্ভাব্য পালাবদলে তাদেরও প্রচ্ছন্ন সায় আছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু কে পি ওলি কীভাবে হঠাৎ এই রাজনৈতিক বিপদের মুখে পড়লেন?

আসলে নেপালে বর্তমান শাসক দল কমিউনিস্ট পার্টি যখন গঠিত হয়েছিল, তখন তাতে দুটি অংশ ছিল−সিপিএন-ইউএমএল আর মাওয়িস্ট সেন্টার। প্রথমটির নেতৃত্বে ছিলেন কে পি ওলি আর দ্বিতীয়টির প্রচন্ড।

২৭৫ আসনের পার্লামেন্টে এই দলের এখন মোট ১৭৪ জন এমপি আছেন, যার মধ্যে সিপিএন-ইউএমএলের ১২১ জন আর মাওয়িস্ট সেন্টারের ৫৩ জন, আর এই দুই দলের সংযুক্তির মাধ্যমেই সভায় কমিউনিস্টদের গরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়েছিল।

দুই পার্টির সংযুক্তির সময়েই স্থির হয়েছিল, কে পি ওলি (যার পুরো নাম খড়গ প্রসাদ শর্মা ওলি) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারি ও প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখবেন, দলের কাজকর্মে নাক গলাবেন না। আর প্রচন্ড দলীয় প্রধান হিসেবে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করবেন। কিন্তু এই ফর্মুলা আদৌ মসৃণভাবে কাজ করেনি, প্রথম দিন থেকেই কে পি ওলি ও প্রচন্ডর মধ্যে সংঘাত ছিল, যা এখন চরমে পৌঁছেছে।

নেপালের রাজনৈতিক ভাষ্যকার সজীব শাক্য কাঠমান্ডু থেকে বলছিলেন, প্রচন্ড এখন প্রকাশ্যেই বলছেন কে পি ওলির সঙ্গে সমঝোতা করাটা ছিল তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। তিনি এখন সম্ভবত বুঝতে পারছেন পার্টিতে বেশিরভাগ এমপি-র সমর্থন ওলির কাছ থেকে সরে গেছে, আর সেই সুযোগে তিনি ওলি-কে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট পত্রিকাতো আরও জানাচ্ছে, চলতি সপ্তাহে স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে প্রচন্ড নাকি প্রধানমন্ত্রী ওলিকে সরাসরি হুমকি দিয়েছেন।

পত্রিকাটির ভাষ্য অনুযায়ী, বৈঠকে প্রচন্ড নাকি প্রধানমন্ত্রী ওলির উদ্দেশে বলেছেন, আমরা খবর পাচ্ছি আপনি বাংলাদেশ, আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মতো রাস্তা নিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চাইছেন! সোজাসুজি বলতে চাই, পার্টিতে ভাঙন ধরিয়ে বা বিরোধী দলের সাহায্য নিয়ে আপনি সরকার চালাতে পারবেন না!

নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান বামদেব গৌতমও গত মাসে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, মানচিত্রে পরিবর্তন আনার সব কৃতিত্ব যেন কে পি ওলি একা নেওয়ার চেষ্টা না-করেন। তিনিও এখন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছেন এবং কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সংস্থা স্ট্যান্ডিং কমিটির ৪৪ জন সদস্যের বেশিরভাগই এখন ওলি-বিরোধী শিবিরে।

এই 'বিদ্রোহ' আশঙ্কা করেই কে পি ওলি বহুদিন ধরে দলীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক আটকে রেখেছিলেন। এমনকি দীর্ঘ ছয় মাস পরে যখন এ সপ্তাহে তার বাসভবনেই সে বৈঠক বসে, নিজে বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও তিনি সে বৈঠকে প্রথমে আসেননি। আর ইতোমধ্যে ওলিকে প্রধানমন্ত্রীত্ব সরানোর জন্য ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছেন প্রচন্ড।

নেপালের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ ভারত সে দেশের এই রাজনৈতিক সঙ্কটে প্রকাশ্যে কোনো অবস্থান না নিলেও তাদের প্রচ্ছন্ন সমর্থন যে এখন প্রচন্ডর দিকেই, তা বলাই বাহুল্য। কে পি ওলি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যেভাবে ক্রমাগত চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন এবং ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাতে ওলির বিদায়ে দিল্লি অবশ্যই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।

কিন্তু মাওবাদী আন্দোলনের সময় থেকেই যে প্রচন্ড চীনের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তার ওপর কীভাবে দিল্লি এখন ভরসা রাখছে?

কাঠমান্ডুতে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত মনজীব সিং পুরীর কথায়, মাওবাদী গেরিলা বাহিনীর নেতা প্রচন্ড আর কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান প্রচন্ড- এই দুজন কিন্তু কখনও এক লোক নন। মনে রাখতে হবে প্রচন্ড এর মধ্যে দুদুবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি কখনও ভারতের স্বার্থবিরোধী কোনও পদক্ষেপও নেননি!

প্রাক্তন এই ভারতীয় কূটনীতিবিদ মনে করেন, সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই প্রচন্ড অনুধাবন করেছিলেন স্থলবেষ্টিত দেশ হিসেবে নেপালের কাছে ভারতের গুরুত্ব ঠিক কতটা। গেরিলা নেতার জীবন ছেড়ে আসার পর তিনি বহুবার ভারত সফর করেছেন, ভারতের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতাও অনেক বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, প্রচন্ড এটা বোঝেন যে নেপালকে তার উত্তর ও দক্ষিণের দুই প্রতিবেশী–চীন ও ভারতের মধ্যে একটা ভারসাম্য রেখেই চলতে হবে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারও ঠিক সেটাই করছে। ঢালাওভাবে এক প্রতিবেশীকে চটিয়ে যে কোনও লাভ হবে না, এটা কে পি ওলির তুলনায় প্রচন্ড অনেক ভালো বোঝেন।

এ দিকে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছে, মানচিত্র-বিতর্ক সত্ত্বেও নেপালে কিন্তু জ্বালানি তেল, কুকিং গ্যাস, খাদ্যদ্রব্যের মতো সব ধরনের অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের জোগান অব্যাহত রাখা হয়েছে। যেটা অনুচ্চারিত আছে, তা হলো তিন বছর আগেকার মতো কোনও 'অবরোধ' (ব্লকেড) পরিস্থিতি তৈরি হতে দেওয়া হয়নি বা ভারত তাতে মদতও দিচ্ছে না।

আরও পড়ুন : ভারতের ১৮ কিমি ভেতরে ঢুকেছে চীনের সেনারা!

কিন্তু কে পি ওলি নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকলেও কি ভারত এই সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখবে? রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ কিন্তু ইঙ্গিত দিচ্ছে সেই উত্তরটা 'না' হওয়ার দিকেই ঢলে!

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড