আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পূর্ব চীন সাগরে অবস্থিত বিতর্কিত সেনকাকু দ্বীপপূঞ্জের মালিকানা নিয়ে জাপান ও চীনের মধ্যকার বিরোধ ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দুই দেশ নতুন করে যেভাবে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে তাতে করে এশিয়ায় নতুন করে সামরিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা শুরু হতে পারে।
চীন ও জাপান পূর্ব চীন সাগরের কয়েকটি দ্বীপকে নিজেদের মনে করে। জাপানিরা এই দ্বীপগুলোকে সেনকাকু বলে ডাকে। তবে চীনাদের কাছে এগুলো তিয়াওইউ নামে পরিচিত। জাপানের ইশিগাকি শহরের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল হচ্ছে টোনোশিরো। সেনকাকু দ্বীপগুলো এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
সম্প্রতি অঞ্চলটির নাম পরিবর্তন করে টোনোশিরো সেনকাকু করা হয়। কিন্তু ইশিগাকি শহর কর্তৃপক্ষের এই নাম পরিবর্তন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছে না চীন। বেইজিং এই ঘটনাকে চীনের সার্বভৌমত্বের প্রতি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করে জাপানের এমন পদক্ষেপকে অবৈধ বলে দাবি করছে।
ইশিগাকির এক এলাকার নাম টোনোশিরো। ইশিগাকির এক এলাকা ও প্রশাসনিক অঞ্চলের নামও একই— টোনোশিরো। ফলে এই বিভ্রান্তি দূর করতেই অঞ্চলটির নাম পরিবর্তন করে টোনোশিরো সেনকাকু করেছে জাপান। অক্টোবর থেকে এই নামের ব্যবহার শুরু হবে বলে টোকিও ঘোষণাও দিয়েছে।
এ বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘এই বিল (যার মাধ্যমে ইশিগাকি শহর কর্তৃপক্ষ নাম পরিবর্তন করেছে) চীনের সার্বভৌমত্বের প্রতি বড় চ্যালেঞ্জ, যা অবৈধ। এই দ্বীপ যে চীনের অন্তর্গত তিয়াওইউ দ্বীপ, সে বিষয়ে কোনো পরিবর্তন এই বিলের ফলে হবে না।’
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিঝিয়ান বলেন, চীন তার সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে অবিচল। এ বিষয়ে জাপানকে অভিযোগ করা হয়েছে। সেনকাকু দ্বীপের আরেক দাবিদার তাইওয়ানও জাপানের এই নামবদলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাইওয়ানের কাছে এটি তিয়াওউতাই নামে পরিচিত।
জাপানের পক্ষ থেকেও পাল্টা পদক্ষেপের হুমকি দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে জাপানের কোস্ট গার্ড সেনকাকুর পাশে চীনের সামরিক যানের চলাচলের কথা জানানোর পর দুই দেশ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়াতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে; যা যেকোনো সময় সামরিক সংঘাতে মোড় নিতে পারে।
জাপানের চিফ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ইশোহিদি সুগা বলেছেন, সেনকাকু আমাদের নিয়ন্ত্রণে এবং প্রশ্নাতীতভাবেই তা আমাদের অঞ্চল। ঐতিহাসিকভাবে কিংবা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীও এটা আমাদেরই অংশ। যদি এসব কর্মকাণ্ড চলে তাহলে আমরা চীনকে নিশ্চতভাবেই এর জবাব দেব।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তিয়াওইউ ও এর আশপাশের দ্বীপগুলো ঐতিহ্যগতভাবেই চীনের অংশ। ফলে ওই জলসীমায় টহল এবং আইন প্রয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার অধিকার ঐতিহ্যগতভাবেই তাদের রয়েছে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসও একই সূরে নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।
চীন-জাপানের মধ্যে চলা এই বিতর্ক নতুন করে দেশ দুটিকে রেষারেষির দিকে ঠেলে দিতে পারে মনে করছেন অনেকে। টোকিও থেকে ১২শ' মাইল দূরের এই দ্বীপপূঞ্জ অবশ্য ১৯৭২ সাল থেকেই প্রশাসনিকভাবে জাপানের অন্তর্ভূক্ত। তবে চীন কখনোই এর ওপর জাপানের মালিকানা মেনে নেয়নি।
গত এপ্রিলে দ্বীপটির চারপাশে চীনের ৬৭টি নৌযানকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছে বলে জানায় জাপান। যদি তারা এর বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেয় তাহলে মাঝখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে শামিল হবে। কেননা ওয়াশিংটন-টোকিও সামরিক চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র জাপানকে রক্ষায় এটা করতে বাধ্য।
যৌথ সামরিক চুক্তি অনুযায়ী জাপানের কোনো অঞ্চলে বিদেশি কোনো শক্তি হামলা চালালে ওয়াশিংটন জাপানের হয়ে লড়াই করতে বাধ্য থাকবে। আর এটাকেই দেখা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ঝুকি হিসেবে। যদি শেষ পর্যন্ত এমন কিছু ঘটে তাহলে ওই অঞ্চলে মারাত্মক এক সামরিক সংঘাত তৈরি হবে।
ওডি/
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড