আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত রাষ্ট্র সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইদলিবকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিশ্ব রাজনীতি। কেননা ইস্যুটি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সর্বোচ্চ উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে তুরস্ক। সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষ পিছিয়ে না আসায় দেখা দিয়েছে বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কাও। তবে উত্তেজনার চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে দেশ দুটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। বিশ্লেষকদের মতে, ইদলিব ইস্যুতে রুশ-তুর্কিরা যুদ্ধে জড়ালে জয় পেত তুরস্কই।
মার্কিন ম্যাগাজিন দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের বরাতে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার মাটিতে রুশ-তুর্কিদের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হলেও এখনো বড় ধরনের যুদ্ধে জড়ায়নি তারা। অবশ্য এখনই যে যুদ্ধের সম্ভাবনা কেটে গেছে তা কিন্তু নয়। তবে অঞ্চলটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে রক্তপাত শুরু হলে পুতিনের বিরুদ্ধে জয় পাবেন এরদোগান।
সিরিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়া পরিস্থিতি এখনো শান্ত হয়নি। আগের চেয়ে বরং সংকট আরও বেড়েছে। সিরিয়ার ইদলিব, আলেপ্পো এবং হামায় ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তুর্কি সামরিক বাহিনী। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর জবাবও দিচ্ছে রাশিয়া। তবে তুর্কি হামলায় হতাহত সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে না।
তুর্কি বাহিনীর ভয়ংকর বিমান হামলার মুখে ইদলিব ও আলেপ্পোর আকাশে বিমান উড্ডয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সিরীয় সরকার। যদিও তুরস্ক এই নিষেধাজ্ঞা মানছে না। তারা ড্রোনের মাধ্যমে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি তুর্কি ড্রোন ভূপাতিত করেছে বলে দাবি সিরীয় সেনাদের। অন্যদিকে সিরিয়ার আকাশে কোনো তুর্কি বিমান দেখা গেলে সেটি ধ্বংসের পরোক্ষ হুমকিও দিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর দাবি, সিরিয়ার আকাশে কোনো তুর্কি বিমান এলে সেটির কোনো নিরাপত্তা দেবে না তারা।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তুরস্ক ও রাশিয়া সরকারের মধ্যে ইদলিবের নিরাপদ অঞ্চল নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে এমন আগ্রাসনগুলোকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়।
যদিও চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি রুশ সমর্থিত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের নির্দেশে বিদ্রোহীদের সর্বশেষ ঘাঁটি ইদলিবে জোরালো সেনা অভিযান শুরু হয়। আর এতেই নতুন করে শরণার্থীদের ঢল নামার আশঙ্কায় প্রেসিডেন্ট এরদোগান সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা ও সাঁজোয়া যান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজার মানুষ ইদলিব ছেড়ে পালিয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। বর্তমানে তুরস্কে আশ্রিত অবস্থায় আছে আরও ৩৫ লাখের অধিক সিরিয়ান শরণার্থী। যদিও উত্তেজনার কারণে নতুন করে শরণার্থীদের ঢলের আশঙ্কায় রয়েছে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটি।
পশ্চিমা বিশ্লেষকদের দাবি, সম্মিলিত সামরিক শক্তির দিক থেকে তুরস্কের চেয়ে এগিয়ে আছে রাশিয়া। তবে ইদলিব যুদ্ধের ক্ষেত্রে মস্কোর চেয়ে অন্তত কয়েকগুণ শক্তিশালী আঙ্কারা। এর বেশকিছু কারণ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম একটি ভৌগোলিক অবস্থান।
সিরিয়ায় সমুদ্রপথেই অধিকাংশ সামরিক সরঞ্জাম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠায় রাশিয়া। মূলত সেই পথটির ওপর নির্ভর করেই দামেস্কে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রেখেছে মস্কো। সিরিয়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাঠাতে মূলত তুরস্কের বসফরাস প্রণালিকে ব্যবহার করতে হয় রাশিয়ার।
বিষয়টি নিয়ে সামরিক বিশ্লেষক মাইকেল পেক বলেন, সিরিয়ায় সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে রাশিয়ার জন্য বসফরাস প্রণালি নিশ্চিতভাবেই বন্ধ করে দেবে তুরস্ক। এতে স্বভাবতই মস্কোর সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। এ কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহজেই জয় পাবে তুরস্কই।
অন্যদিকে তুরস্কের মূল ভূখণ্ডে হামলা চালালে রাশিয়া পরিণতি ঠিক কোন দিকে যেত তা বলা কঠিন। কেননা এতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিহাস বলছে ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশের মূল ভূখণ্ডে হামলা হলে অন্য দেশগুলো সেখানে সহায়তা করতে বাধ্য।
আরও পড়ুন : ইরাকের ঘাঁটিতে ভয়াবহ রকেট হামলার ভিডিও প্রকাশ
সে হিসেবে তুরস্কের প্রধান ভূখণ্ডে রাশিয়ার হামলা শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের অনেক দেশই যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য হতো। সেক্ষেত্রে রাশিয়ার পাশেও তার মিত্রদের অবস্থানের কারণে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেখানে ন্যাটো মিত্র তুরস্কের জয় পাওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড