• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিজ্ঞানীদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে যে ভাইরাস

  কে এইচ আর রাব্বী

২৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:২৪
বিজ্ঞানীদের তাক লাগিয়েছে যে ভাইরাস
করোনা ভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা (ছবি : সিবিএস নিউজ)

এশিয়ার পরাশক্তি চীনসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া নতুন আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। মরণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণে এরই মধ্যে শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া আক্রান্ত হয়েছে আরও দুই হাজার। যদিও বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা চার হাজারেরও অধিক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ভাইরাসটির শনাক্তস্থলে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে বাসিন্দারা। কেবল তাই নয়, চীনের সীমানা পেরিয়ে ভাইরাসটি এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আরও অন্তত ১৬টি রাষ্ট্রে। এতে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে বিজ্ঞানীদের।

করোনা নামের এই ভাইরাসটি ঠিক কতটা ভয়ংকর এবং কীভাবে তা ছড়াচ্ছে, এগুলো নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজ।

করোনা ভাইরাস কী?

বিজ্ঞানীদের তাক লাগিয়েছে যে ভাইরাস

করোনা ভাইরাসের আলামত সংগ্রহ (ছবি : সিএনএন)

করোনা ভাইরাসের অপর নাম ‘২০১৯-এনসিওভি’। মরণঘাতী এই ভাইরাস মূলত মানুষের মাধ্যমে ছড়ায়। ভাইরাসটির অনেক রকম প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে কেবল ৭টিই মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।

বিজ্ঞানীদের মতে, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে এরই মধ্যে ‘মিউটেট’ করতে শুরু করেছে। অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ ধারণ করছে এবং সংখ্যাও বৃদ্ধি করছে। ফলে এটি দ্রুত আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন, করোনা ভাইরাস মূলত একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। তাই ভাইরাসটি আগামী সাত দিনের মধ্যে মহামারিতে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের।

বিজ্ঞানীদের ভাষায় কতটা ভয়ংকর এই ভাইরাস :

বিজ্ঞানীদের তাক লাগিয়েছে যে ভাইরাস

চীনের উহান বিমানবন্দরে আগত বিজ্ঞানীরা (ছবি : সিনহুয়া)

করোনা ভাইরাস প্রথমে মানব দেহের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়, পরে শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে অন্য জনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই ভাইরাসটি ছড়িয়ে থাকে। এর পরিণাম স্বরূপ অরগ্যান ফেইলিও বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায়। তাছাড়া নিউমোনিয়া এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটারও আশঙ্কাও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভয়াবহ এই ভাইরাসে আক্রান্তদের প্রায় দুই শতাংশ এরই মধ্যে মারা গেছেন। যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তাই ভাইরাসটি ঠিক কতটা ভয়ংকর, এখন পর্যন্ত তা স্পষ্ট করা যায়নি।

গত দশকে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) নামে এক ভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বে প্রায় আট শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছিল। মূলত সেটিও ছিল এক ধরনের করোনা ভাইরাস। তখন এতে আক্রান্ত হয়েছিল ৮ হাজারেরও অধিক লোক।

তাছাড়া বিশ্ববাসী আরও একটি ভাইরাসজনিত রোগের মুখোমুখি হয়েছিল। যার নাম ছিল মিডল ইস্টার্ন রেসপিরেটরি সিনড্রোম (মার্স)। ২০১২ সালে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছিল ৮৫৮ জন।

করোনা ভাইরাসের লক্ষণসমূহ :

বিজ্ঞানীদের তাক লাগিয়েছে যে ভাইরাস

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হচ্ছে (ছবি : সিনহুয়া)

বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়ায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণগুলো বুঝা যায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর ও কাশি। বিজ্ঞানীদের মতে, ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশের পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিনের মতো সময় লাগে। এর মধ্যে প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। এরপর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আর তখনই রোগীদের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়।

বিশ্বে যেভাবে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস :

বিজ্ঞানীদের তাক লাগিয়েছে যে ভাইরাস

ভাইরাস আতঙ্কে চীনের উহান বিমানবন্দর ছাড়ছেন যাত্রীরা (ছবি : রয়টার্স)

চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে এই রোগের সূত্রপাত। ৩১ ডিসেম্বর এই শহরেই নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখা যায়। চীনা কর্তৃপক্ষ শুরুতেই বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অবগত করে। পরে গত ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

তবে ঠিক কীভাবে সংক্রমণটি শুরু হয়েছিল, এখন পর্যন্ত তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্ভবত কোনো প্রাণীর মাধ্যমেই সংক্রমণটি ছড়িয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রাণী থেকে ভাইরাসটি প্রথমে মানব দেহে প্রবেশ করেছে। এরপর তা একজন থেকে অন্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে।

এর আগে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রথমে বাদুড় এবং পরে গন্ধগোকুলকে দায়ী করা হয়। কেননা এই প্রাণীগুলো থেকেই তখন মানব দেহে ভাইরাস প্রবেশ করেছিল। তাছাড়া ২০১২ সালে মিডল ইস্টার্ন রেসপিরেটরি সিনড্রোম (মার্স) ভাইরাসটি ছড়ানোর পেছনে উট রয়েছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।

বিজ্ঞানীদের তাক লাগিয়েছে যে ভাইরাস

উহান শহরের বন্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয়ের বাজার (ছবি : মঙ্গাবায়)

এ দিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে উহান শহরে সামুদ্রিক একটি খাবারকে দায়ী করা হচ্ছে। স্থানীয় একটি বাজারে গিয়েছিল এমন ব্যক্তিদের মধ্যেই প্রথমে রোগের সংক্রমণ ঘটেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। মূলত সেই বাজারটিতে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণীদের কেনাবেচা হতো।

কিছু সংখ্যক সামুদ্রিক প্রাণী যেমন, বেলুগা জাতীয় তিমি এই ভাইরাসটি বহনে সক্ষম। যদিও উহানের বাজারটিতে কেবল মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, ইঁদুর, ব্যাঙ ও সাপ বিক্রি হতো।

যেভাবে হতে পারে এর চিকিৎসা :

বিজ্ঞানীদের তাক লাগিয়েছে যে ভাইরাস

করোনা ভাইরাসের আলামত (ছবি : বিবিসি নিউজ)

ভাইরাসটি একদমই নতুন হওয়া এখনই এর কোনো টিকা কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার করা যায়নি। এমনকি কোনো চিকিৎসাও নেই, যা রোগটিকে ঠেকাতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে লোকজনকে নিয়মিত এবং ভালোভাবে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছে। হাঁচি কিংবা কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা এবং ঠান্ডা ও ফ্লু আক্রান্ত লোকদের থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। যদিও এশিয়ার বহু অংশের মানুষ এরই মধ্যে সার্জিক্যাল মুখোশ পরা শুরু করেছেন।

আরও পড়ুন : করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারে ব্যর্থ চীন

তাই আপাতত প্রতিকার হিসেবে বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটি বহনকারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে বলেছেন। তাছাড়া লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ, বারবার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা ও ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড