আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিনিদের হামলায় জেনারেল কাসেম সোলাইমানির নিহতের পর নিজেদের সামরিক সক্ষমতা আরও জোরালো করার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। চলমান অস্থিতিশীলতায় ২০১৫ সালে ৬ জাতির সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ। এমনকি ভবিষ্যতে আর কখনোই পরমাণু চুক্তিতে জড়াবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। এতে অনেকেই মনে করছেন ইরান এর মধ্যেই পরমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে। আর সেটা ভেবে আতঙ্কে আছেন পশ্চিমা নেতারা।
গত ৩ জানুয়ারি ইরাকের বাগদাদে মার্কিনিদের ড্রোন হামলায় নিহত হন ইরানের সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে। ইরান এই হত্যাকাণ্ডের কঠিন প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে। ইতোমধ্যে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ মিশন শুরু করেছে তারা।
সবকিছু মিলিয়ে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কে। আর এমন অবস্থাতেই পরমাণু সমঝোতা থেকে বের হয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। গত শনিবার (১৮ জানুয়ারি) এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুহাম্মদ জাভেদ জারিফ বলেছেন, ইরান আর কখনোই পারমাণবিক চুক্তিতে জড়াবে না। বর্তমানে এ সংক্রান্ত কোনো ধরনের সমঝোতায় জড়ানোর মতো পরিস্থিতি নেই।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এক ভাষণে বলেছেন, ২০১৫ সালে পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরের আগে আমরা যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছিলাম, বর্তমানে তার চেয়ে আরও বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছি। আর ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
এছাড়া সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সব ধরনের সীমা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট।
এ দিকে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্য ইয়েভস লি দ্রিয়ান বলেছেন, আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হবে। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি অকার্যকর হয়ে পড়লেই লক্ষ্যে পৌঁছাবে তারা। কারণ দ্রুত সময়ের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর মতো সব ধরনের প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।
অন্যদিকে গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ইসরায়েল বলেছে, ইরান যেভাবে পরমাণু কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তাতে চলতি বছরই পারমাণবিক বোমার মালিক হবে তারা।
অবশ্য এ দাবি মোটেই অযৌক্তিক নয়, বর্তমানে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের হার ৪ শতাংশ। তবে আগামী ৬ মাসে এই হার বাড়িয়ে ২০ শতাংশে নিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব হলো পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর পথে একেকটি পদক্ষেপ।
পরমাণু সমঝোতা থেকে ইরানের বের হয়ে আসার ঘোষণা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর সক্ষমতা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে পশ্চিমা নেতাদের। তাই ইরানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পরমাণু সমঝোতায় জড়াতে চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ।
এজন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের চাপে জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো প্রভাবশালী ইউরোপীয় দেশগুলোও ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের ঘোষণা দিয়েছে। আর তারা এই চাপ প্রয়োগ করছে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ইরানকে নতি স্বীকারে বাধ্য করানোর জন্য।
এমন অবস্থায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। রবিবার (১৯ জানুয়ারি) জার্মানির রাজধানী বার্লিনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর ম্যাক্রো ও জনসন জানিয়েছেন, তারা ইরানকে কিছুতেই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে দিতে চান না। আর ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে সেজন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি প্রয়োজন। তারা সে পথেই এগোতে চাচ্ছেন।
আরও পড়ুন- যোগ্য উত্তরসূরি তৈরি করেই পৃথিবী ছেড়েছেন সোলাইমানি : বিশ্লেষক
তবে ইরান যে কিছুতেই থামবে না সেটার ইঙ্গিত মিলেছে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) জুমার নামাজের খুতবায় বলা কথাগুলোতে। তিনি বলেছেন, তিন ইউরোপীয় দেশ (ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য) আমেরিকার ভৃত্যে পরিণত হয়েছে। এসব দেশের নেতারা ভাবছেন তারা ইরানকে নতজানু করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমেরিকাই যেখানে ইরানের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি, সেখানে ইউরোপীয় দেশগুলোর এ ধরনের হুমকি হাস্যকর।
সূত্র- বিবিসি, মিডল ইস্ট মনিটর, আল-জাজিরা ও পার্সটুডে।
ওডি/এসসা
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড