অভিক ইসলাম
ইউক্রেনের একটি বিমান ধ্বংসের পর ইরানের সমালোচনা করছেন অনেকে। তাদের দাবি, ইরানকে এই ঘটনার জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নতজানু হয়েও থাকতে হবে। তবে অনেকেরই জানা নেই- শুধু ইরান নয়, যুক্তরাষ্ট্রও ভুল করে একটি পরিবহন বিমান ধ্বংস করেছিল। আর সেই বিমানটি ছিল ইরানের।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৮ সালের ৩ জুলাই ইরানের একটি পরিবহন বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস ভিনসেনেস থেকে ওই হামলা চালানো হয়। এতে বিমানে থাকা ২৯০ আরোহীর সবাই নিহত হন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্রে বিধ্বস্ত হওয়া ওই পরিবহন বিমানটি মডেল ছিল এয়ারবাস এ-৩০০। ওই বিমানে থাকা বেশিরভাগ ইরানি আরোহী হজের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছিল।
মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রে নিজেদের পরিবহন বিমান বিধ্বস্ত হওয়ায় প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয় ইরান। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনাও করে। তখনকার ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি আকবর ভেলায়াতি যুক্তরাষ্ট্রের এই কাজকে ‘সন্ত্রাসী কাজ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আহ্বান জানান।
ইরানের এই আহ্বানকে একরকম উড়িয়েই দেন ওই সময়কার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ। বুশ দাবি করেন, যুদ্ধকালীন সময়ে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র যেটা করেছে সেটা পরিস্থিতি বিবেচনায় ঠিকই আছে। অর্থাৎ, ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পরিবহন বিমান ধ্বংসের পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র নিজেদের পরিবহন বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর ১৯৮৯ সালে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করে ইরান। এর প্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তেহরানকে ১৩১ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয় ওয়াশিংটন।
আরও পড়ুন : ইতিহাসের সর্বোচ্চ দুশ্চিন্তায় ইসরায়েল
ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তারা কখনোই এই ঘটনার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি বা দুঃখ প্রকাশও করেনি। ১৯৮৮ সালের ৫ জুলাই বিমান ধ্বংসের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান। ইরানের কাছে ক্ষমা চাওয়ার উদ্দেশেই তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন- হ্যাঁ।
তবে কাছাকাছি সময় অন্য একটি অনুষ্ঠানে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে কখনো ক্ষমা চাইব না। প্রকৃত সত্য কী, সেটা আমি পরোয়া করি না। ক্ষমা চাওয়ার মতো আমেরিকান আমি নই। বুশ দীর্ঘদিন এসব কথা বলে এসেছেন।
ক্ষেপণাস্ত্রে ইরানি বিমান ধ্বংসের পর এমনই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, ইউক্রেনের বিমান ধ্বংসের পর কিছুটা চাপে পরলেও তেমন কিছুই হবে না ইরানের। হয়তো আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তেহরানকে। এমনকি জাতিসংঘে নিন্দা প্রস্তাবও গৃহীত হতে পারে তাদের বিরুদ্ধে। তবে বড় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হবে না ইরান- এমনটিই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এছাড়া ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি ইউক্রেনের হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি কোনো চাপও দিতে পারবে না।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
ওডি/ডিএইচ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড