আন্তর্জাতিক ডেস্ক
নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার তৃতীয় দিনের শুনানির শুরুতে বক্তব্য তুলে ধরেন গাম্বিয়ার পক্ষের আইনজীবী পল রাইখলার। এ দিন তিনি দাবি করেন- নিজের বক্তব্যে গণহত্যার কথা খুব চতুরতার সঙ্গে এড়িয়ে গেলেও, পরোক্ষভাবে ঠিকই স্বীকার করেছেন মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের প্রধান অং সান সু চি।
শুনানিতে পল রাইখলার বলেন, মিয়ানমারের আইনজীবী গণহত্যার উদ্দেশ্য প্রমাণের জন্য সাতটি নির্দেশকের কথা বলেছেন। যা গাম্বিয়ার আবেদনেও রয়েছে। এগুলো মিয়ানমার অস্বীকার করেনি।
এরপর তিনি যোগ করেন, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি আদালতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। আদালত নিশ্চয়ই বিষয়টি লক্ষ করেছেন। তাছাড়া সু চি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) কথা বলতে গিয়ে তাদের মুসলিম হিসেবে তুলে ধরেছেন। আশা করি, আদালত এই মামলার রায় প্রদানের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখবেন।
পল রাইখলার আরও বলেন, প্রথমত মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রতি আচরণে গণহত্যার উদ্দেশ্য অস্বীকার করেছে। দ্বিতীয়ত, গণহত্যার উদ্দেশ্য অনুমান করা হলেও তার ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী আদেশ দেওয়া যায় না। এই মামলায় এসব বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এরপর গাম্বিয়ার পক্ষে বক্তব্য দেন আইনজীবী পিয়েঁর দ্য আর্জেন। তিনি বলেন, গাম্বিয়া ওআইসির মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর মামলা করেছে বলে দাবি করেছেন মিয়ানমারের আইনজীবীরা। কিন্তু এ কথা ঠিক নয়। গাম্বিয়া স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে এই মামলা করেছে। গাম্বিয়া ওআইসির প্রক্সি বা প্রতিভূ হিসেবে মামলা করেনি। গাম্বিয়া ওআইসির সাহায্য চাইতেই পারে। অন্যদেরও সাহায্য চাইতে পারে। সুতরাং গাম্বিয়া ওআইসির সহায়তা নেওয়ায় বলা যাবে না যে সংস্থাটি এই মামলার আবেদনকারী।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের মুখে জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে নতুন করে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। গত ১১ নভেম্বর রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সরকারের নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ অ্যাখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে গাম্বিয়া। আদালত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেন। শুরুতে আন্তর্জাতিক আদালতের দেওয়া তদন্তের নির্দেশ প্রত্যাখ্যানের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত মামলা লড়ার ঘোষণা দেয় মিয়ানমার সরকার।
এই মামলার শুনানিতে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি। গত মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) শুনানির প্রথমদিনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে গাম্বিয়া। পরদিন বুধবার (১১ ডিসেম্বর) নোবেলজয়ী নেত্রী সু চি মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন। নিজের বক্তব্যে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার সব অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
মামলার তৃতীয় দিনের শুনানির শুরুতে গাম্বিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি তুলে ধরেন। আজ বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় নিজেদের যুক্তি তুলে ধরবে মিয়ানমার।
ওডি/এসসা
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড