আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জ্বালানি তেলের মূল্য ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রতিবাদে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সিরজান শহরে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সরকারবিরোধী এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। যাতে অংশ নিচ্ছেন হাজার হাজার লোক।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা ‘রয়টার্স’ জানায়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইরানের বিক্ষোভ নিয়ে এরই মধ্যে একটি বিবৃতি দিয়েছে। যেখানে তাদের দাবি, দ্রুত বাড়তে থাকা এই আন্দোলন প্রতিহতে প্রশাসনকে শক্ত অবস্থান নিতে দেখা গেছে। চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০৬ জনের প্রাণহানি ও আরও অনেক লোক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
যদিও এমন প্রেক্ষাপটে গোটা দেশের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে রুহানি সরকার। তীব্র বিক্ষোভের মুখে রবিবার (১৭ নভেম্বর) থেকে প্রায় সবধরনের ইন্টারনেট সংযোগ ব্লক রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। খবর ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের’।
এ দিকে বুধবার (২০ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘আইআরআইবিকে’ এরই মধ্যে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। যেখানে তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সংখ্যাকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন।
রুহানি বলেন, ‘চলমান বিক্ষোভে শতাধিক নিহতের দাবি ভিত্তিহীন। ইরানের জনগণ ঐতিহাসিক এই পরীক্ষায় আবারও জয়ী হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগ থাকলেও বিষয়টি নিয়ে শত্রুদের বিশেষ কোনো সুবিধা নিতে দেওয়া হবে না।’
ইরানি প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, ‘আপনারা যে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ দেখছেন তা হলো ইরানি জনগণের শক্তির অন্যতম বড় দিক। আমরা এই বিক্ষোভকে শক্তিতে পরিণত করতে চাই।’
এর আগে গত মঙ্গলবার দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছিলেন, ‘বিক্ষোভটা মূলত একটি নিরাপত্তার ইস্যু। এটি জনগণের কোনো আন্দোলন নয়। তাই একে সফলভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’
অপর দিকে কর্তৃপক্ষের বরাতে তুর্কি বার্তা সংস্থা ‘আনাদোলু এজেন্সি’ জানায়, শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাজপথে নেমে রাতভর তীব্র বিক্ষোভ করে সাধারণ মানুষ। গত এক সপ্তাহে দেশটির ২১টি শহরে ছড়িয়ে পড়া এই বিক্ষোভে ইতোমধ্যে গ্রেফতারের শিকার লোকের সংখ্যাও হাজার ছাড়িয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি ঘোষণায় রেশন হিসেবে দেওয়া লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ানোর কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য মাসিক বরাদ্দ হিসেবে তেলের পরিমাণ ৬০ লিটার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর বাইরে বাড়তি পেট্রোল ক্রয় করার জন্যও বলা হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণার পরই দেশজুড়ে ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। যার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে মাশহাদ, কেরমান, তেলসমৃদ্ধ খুজেস্তানসহ বিভিন্ন শহরের রাজপথে নেমে আসেন হাজার হাজার জনগণ। যদিও এই বিক্ষোভের তীব্রতা বেশি ছিল সিরজান শহরে। সেখানেও রাতভর প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নেয় বিক্ষুব্ধ ইরানিরা।
হতাহতদের প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গুলি চালানোর কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে কোনো ব্যক্তি যদি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত কিংবা আহত হন, তার অবশ্যই তদন্ত করা হবে।’
আরও পড়ুন :- ইরানকে নিয়ে নতুন শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের অর্থনীতি এমনিতেই চাপের মুখে রয়েছে। যে কারণে চলমান সংকট কাটাতেই সরকারি রেশন কাটছাঁটের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। আর এ ঘোষণার রাতেই রক্তাক্ত হয় সিরজানের রাজপথ।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড