• মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাগদাদির আস্তানায় যেভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান চালাল যুক্তরাষ্ট্র

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৮ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:০২
সিরিয়ায় মার্কিন অভিযান
সিরিয়ায় অভিযান চালাচ্ছে মার্কিন সেনারা। (ছবিসূত্র : রয়টার্স)

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সিচুয়েশন কক্ষে শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে যখন তার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টাদের নিয়ে বসে ছিলেন, ঠিক তখনই ওয়াশিংটন থেকে প্রায় ৬ হাজার মাইল দূরে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদির আস্তানার সন্ধানে মার্কিন সেনারা এক গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে মেতে ছিল।

সেদিন ইরাকের উত্তরাঞ্চল থেকে মোট আটটি হেলিকপ্টারে চেপে মার্কিন সেনা সদস্যরা গভীর রাতে শত মাইল পাড়ি দিয়ে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে অভিযানটি শুরু করে। একমাত্র টার্গেট ছিল আইএস প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি।

মার্কিন সৈন্যরা তাদের অভিযানের শুরুতে অঞ্চলটির একটি ভবনে পরিবারের সদস্যদেরসহ বাগদাদির অবস্থান শনাক্ত করে। যদিও গত বেশ কিছুদিন যাবত তারা সেই ভবনটিকে নজরদারির মধ্যে রেখেছিল।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাতেই বিশেষ বাহিনীর সেই অভিযানকে ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুঃসাহসী’ বলে অভিহিত করেন। তার ভাষায়, ‘অভিযানটির অবসান ঘটেছে সম্পূর্ণ রাজকীয় ধাঁচে। মার্কিন সেনা অভিযানের খবর পেয়ে বাগদাদি একটি মৃতপ্রায় সুরঙ্গ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

যদিও সেনাদের একের পর এক হামলার মুখে বাধ্য হয়েই আত্মঘাতী ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেকে শেষ করেন আইএসের এই সর্বোচ্চ নেতা। এতে নিজের পাশাপাশি তার তিন সন্তানও প্রাণ হারিয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘বাগদাদি নায়কের মতো মরতে পারেনি। তার কুকুরের মতো মৃত্যু হয়েছে; কাপুরুষের মতো কান্না করেছে, চিৎকার করেছে, নিজের সন্তানদের কাছে এনেছে মরার জন্য। অবশেষে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত হয়।’

যদিও বাগদাদি একেবারে শেষ সময়ে এসে ঠিক কী ধরনের আচরণ করেছিলেন সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন মার্কিন অন্যান্য কর্মকর্তারা। মার্কিন মানবাধিকারকর্মী কায়লা মুয়েলারের নামে অভিযানটির নামকরণ করা হয়েছিল।

অভিযোগ আছে, মার্কিন এই দাতব্য কর্মীকে অপহরণের পর ধর্ষণ এবং পরবর্তীকালে হত্যা করেছিলেন বাগদাদি। যদিও কায়লা মুয়েলারের সেই অপহরণ ও হত্যার ঘটনা এখনো রহস্যের মধ্যেই রয়ে গেছে।

এমনকি আইএস প্রধান বাগদাদিকে হত্যার মিশনটি সম্পন্ন করতে মার্কিন সৈন্যরা ওয়াশিংটনে অবস্থানরত দেশটির জ্যেষ্ঠ কমান্ডারদের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করেছিলেন; সেই বিষয়টিও এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেনি। তবে রবিবার (২৭ অক্টোবর) সকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক রকম ব্যঙ্গাত্মক ও কটূক্তিপূর্ণ ভাষায় অভিযানের বিবরণ প্রকাশ করেছিলেন। যেখানে আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিকবাহিনীর গত পাঁচ বছরের লড়াইয়ের অন্যতম সাফল্য বলে দাবি করেন তিনি।

এ দিন হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘ওয়াশিংটনে বসে সিরিয়ায় অভিযান শুরুর প্রস্তুতির (বিকেল পাঁচটা) সময় থেকে আমি খোঁজ রাখছিলাম।’ অজ্ঞাত এক প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযানের চিত্র দেখার দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটা ছিল সম্পূর্ণ সিনেমা দেখার মতো।’

মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, রবিবার বিকাল চারটার দিকে গলফ খেলার পর হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন ট্রাম্প। যদিও এর প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে সেখানকার সিচুয়েশন কক্ষে প্রবেশ করেন তিনি। তখন স্যুট-টাই পরে একটি টেবিলের সামনে বসেন। এ সময় তার পাশেই ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মার্ক এসপার, হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও ব্রায়েন, সেনাপ্রধান জেনারেল মার্ক মিলে ও বিমানবাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল স্কট হোওয়েলসহ আরও বেশ কয়েকজন।

মধ্যপ্রাচ্যে তখন মাঝরাত, অভিযানটি সফলভাবে পরিচালনার জন্য মার্কিন সামরিকবাহিনীর হেলিকপ্টারকে ইরাক, তুরস্ক এবং রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত আকাশসীমা দিয়ে যেতে হবে। যদিও অনুমতি ছাড়া তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যে কারণে মার্কিন কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে জানান, তারা একটি বিশেষ অভিযানের পরিকল্পনা করেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়।

সিরিয়ায় রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই যোগাযোগকে একটি ‘কমিউনিকেশন ডিকনফ্লিকশন’ বলে দাবি করছে পেন্টাগন। এ ধরনের যোগাযোগ রক্ষা করায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা কিংবা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভুল হামলা থেকে বিরত থাকে সেনারা।

আরও পড়ুন :- ‘বাগদাদি নিহত’ ইস্যুতে এবার যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান-রাশিয়ার উপহাস

অভিযানটির শুরুতেই মার্কিনবাহিনী বাগদাদির অবস্থানরত ভবনের আশপাশের বিভিন্ন গর্ত উড়িয়ে দেয়। যাতে করে ভবনের পেছনের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। যদিও বাগদাদি বিষয়টি বুঝতে পেরেই ভবন থেকে বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে একটি সুরঙ্গের ভেতরে প্রবেশ করেন। আর তখনই মার্কিনবাহিনী তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া মাত্রই সুরঙ্গের দিকে একের পর এক বোমা মারতে শুরু করে। তবে শেষমেশ আইএস প্রধান নিজের বিস্ফোরক ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সব কিছুর সমাপ্তি টানেন।

সূত্র : ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’

ওডি/কেএইচআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড