আলাউদ্দিন আদর
পাহাড় ঘেরা ছোট্ট একটি গ্রাম সুন্দরপুর। গ্রামের শেষ প্রান্তের শেষ বাড়িটি নানি বুড়ির বাড়ি। তারপর আর বাড়িঘর নেই। কেবল পাহাড়, ঝোঁপ-জঙ্গল। তবে ভয়ের কিছু নেই, এই জঙ্গলে সাপ ছাড়া অন্য কোনো ভয়ংকর প্রাণীর বসবাস নেই। নানি বুড়ি ভীষণ সাহসী; বাঘ ভাল্লুক কিংবা অন্য কোনো ভয়ংকর প্রাণী থাকলেও বোধহয় সমস্যা হতো না। বরং ওরাই উল্টো নানি বুড়িকে ভয় পেত!
আরে হ্যাঁ, জঙ্গলে যে কয় প্রকারের প্রাণী বসবাস করে সবাই নানি বুড়িকে ভীষণ ভয় পায়। তাই তো সবাই লুকিয়ে লুকিয়ে বুড়িকে পাহারা দেয়। কখন বুড়ি বাড়ি থেকে বাজারের উদ্দেশে বের হয়, সেই অপেক্ষায় থাকে। যেই না বুড়ি বাড়ি ছাড়ে; দুষ্টু একটি বানর তা সাথে সাথে সারা জঙ্গলে রটিয়ে দেয়। আর অমনি ওরা দলে দলে হামলে পড়ে বুড়ির বাড়িতে! শিয়ালের দল এসে, হাঁস-মুরগির খামার ও ডিমে চুরির ফন্দি আঁকে। কাঠ বিড়ালির দল এসে নারকেল, আম-কাঁঠালে হামলা চালায়। দুষ্টু বানর দলবল নিয়ে ঢোকে ফলের বাগানে। মগডালে বসে খায় মজার মজার ফল; বুড়ি ফেরার আবাস পেলেই সবাইকে সর্তক করে দেয়। মুহূর্তেই সবাই পালিয়ে যায়।
প্রায়শই বুড়ি বাড়ি ফিরে দেখে পাজি পশুরদল সব খেয়ে শেষ করে গেছে। বুড়ির ভীষণ মন খারাপ হয়। রাগে কাঁপতে থাকে। লাঠি উঁচিয়ে বলে- ব্যাটা চোরের দল। একবার ভাগে পাই, পিটিয়ে বাপের নাম ভুলিয়ে দেব। দূর থেকে দুষ্টু বানর দেখে, আর হি-হি করে মিটিমিটি হাসে। আর বলে, আমাদের ধরা অত সহজ নয়; নানি বুড়ি...হি...হি...
কীভাবে এই পাজি পশুগুলোকে শায়েস্তা করা যায় তা ভাবতে ভাবতে বুড়ি অনেক রাত পার করে। কিন্তু কোনো বুদ্ধি বের করতে পারে না। একদিন সন্ধ্যায় বুড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে, তার উঠোনে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। বুড়ির খুব মায়া হলো। ছেলেটিকে কাছে ডেকে জানতে চাইল, ছেলেটির পরিচয়; কান্নার কারণ?
ছেলেটি জানাল সে এই গ্রামেরই ছেলে। ছেলেটির মা অনেকগুলো পাকা কলা ঝাকিতে ভরে দিয়েছে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে। কলাভর্তি ঝাকিটি মাথায় নিয়ে সে বাজারের পথে রওনা হলো। পথিমধ্যেই মাথার বোঝা হাল্কা মনে হওয়ায়, ঝাকি নামিয়ে দেখে- হায়! হায়! একটা কলাও নেই! উপরে তাকিয়ে দেখে গাছের ডালে বসা পাজি বানরগুলোর হাতে কলা...অ্যাঁ। শত কাকুতি মিনতি করেও কলাগুলো ফেরত নিতে পারেনি। তারপর, তারপর মায়ের পিটুনি খাওয়ার ভয়ে বাড়ি না গিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এখানে চলে এসেছে।
ছেলেটির কান্না দেখে, কষ্টের কথা শুনে বুড়ি নিজেও কেঁদে দিল। নিজের কষ্টের কথা ছেলেটি বলল। বুড়ির সব কথা শুনে, ছেলেটি বুড়িকে বলল- নানি বুড়ি, আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। ওই পাজি বানরটাই যেহেতু নাটের গুরু। ওরে শায়েস্তা করতে পারলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
বুড়ির তর সই ছিল না! বলল, আমিও তো তা-ই চাই। তা ওই দুষ্টু বানরকে কীভাবে শায়েস্তা করব দ্রুত বলো, দ্রুত বলো...
ছেলেটি বলল, নানি বুড়ি বেশি তাড়াহুড়ো করলে চলবে না। কাজ করতে হবে ঠান্ডা মাথায়, কৌশলে। খুব খিদে লেগেছে, কিছু খেতে দাও। বুড়ি ছেলেটিকে নারিকেলের মোয়া খেতে দিল। ছেলেটি খেতে খেতে সব পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিল। রাতে বুড়ির সাথেই রইল। যা যা লাগবে সব জোগাড় করল। ঘুমানোর সময় আবার সব বুঝিয়ে দিল।
পরিকল্পনা মতো পরদিন সকালে বুড়ি গাছের সব পাকা কলা কেটে উঠোনের মাঝে রেখে একটা ছাটাই দিয়ে ঢেকে রাখল। বানর কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে সব দেখছে। আর মিটমিট করে হেসে বলছে- লুকিয়ে লাভ নেই; ছাঁটাইর তলে যে পাকা কলা আছে তা আমি দেখেই ফেলেছি! হি...হি...হি... এবার বুড়ি বের হলেই হয়। আজ সব একাই সাবাড় করব..হি...হি...
বুড়ি ঘরে ঢুকলে ছেলেটি বুড়ির হাতে শক্ত লাঠিটি দিয়ে বলল, নানি বুড়ি এখন আমি আপনার বোরকাটি পরে নকল লাঠি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাব। যখন বানর কলা খেয়ে ভারী হয়ে যাবে, তখনই ধরে মাইর শুরু করবেন।
দুষ্টু বানর দেখল ঘর থেকে লাঠি হাতে বুড়ি বেরিয়ে গেছে। বোরকা পরা বুড়ি বাড়ির সীমানা অতিক্রম করার পর, নিশ্চিন্তে উঠোনে নেমে এলো। ছাঁটাইয়ের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে দেদারছে শুরু করল কলা খাওয়া।
কলা খেয়ে বানরের যখন পেট ভারী হলো, অমনি হাতের লাঠি দিয়ে বুড়ি এমন মার দেয়; ওরে বাপ রে...মরে গেলুম... মরে গেলুম, আর জীবনেও এসব করব না... বলে কোনো মতে ছুটে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পায় দুষ্টু বানর।
ওডি/এএস
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড