• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঐশির ইচ্ছে পূরণ

  আমির সোহেল

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:০৫
ঐশির ইচ্ছে পূরণ

ঐশি মনি। এবার প্রাইমারি স্কুলের পড়াশোনা সফলতার সাথে শেষ করেছে। হাই স্কুলে ভর্তি হয়েছে। সে পিএসসি পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রেখেছে। গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের এই সময়ে তার এই ভালো রেজাল্ট ফেক না। তার ভার্সিটি পড়ুয়া মামাদের কাছে পরীক্ষার আগের রাত্রে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন আসলেও প্রশ্ন তাকে দেয়নি। শুধু তাকে কিছু কথাই বলেছে যে, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট দেখতে চাই না। তোমার সত্যিকারের মেধায় কোনো রকম পাস করলেই হবে। ফেল করলেও কাউকে বকতে দেব না। আর তোমার কোনো রকম পাস করাও সেইসব ফেক ভালো রেজাল্ট করাদের ভবিষ্যতে ভালো ভার্সিটি, মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি প্রতিযোগিতায় অথবা জবের পরীক্ষায় হারিয়ে দিতে পারবে। কারণ ওগুলোই আসল প্রতিযোগিতা। ওই পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্ন ফাঁসের সুযোগ নেই! মামার কথায় উৎসাহ নিয়ে কোনো চাপ ছাড়াই পরীক্ষা দিয়েছে। ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল জাতীয় পরীক্ষায়ও সেরা রেজাল্টটাই করেছে। ঐশি কোমল আর নরম মনের। কারও কষ্টে নিজের কষ্ট ভেবে কেঁদে ফেলে। তবে সে ভীতু না সাহসী। এ যুগের মেয়ে সে ভয়ে কাঁপার কোনো সুযোগ নেই। নতুন মাধ্যমিক স্কুলে নতুন পরিবেশে ক্লাস করছে। ভালোই লাগছে। ক্লাসমেট সবাই নতুন। কয়েকজন ছাড়া। নতুন দুটা মেয়ের সাথে ঐশির বন্ধুত্বও হয়ে গেছে। ভালোই কাটছে এই স্কুলে। দারুণ উপভোগ করছে। আজ স্কুলে বিরতির সময় একটা ঘটনা ঘটেছে। বিরতির সময় টিফিন করতে গিয়ে দেখল আম্মু তার পানির বোতল দেয়নি। আম্মু ভুলে গেছে মনে হয়। সেও খেয়াল করেনি। টিফিন করতে গিয়ে খেয়াল হলো। তার ব্যাগে আম্মু সব সময় বিশ টাকা দিয়ে রাখে। সে টাকা দিয়ে পানি কিনতে দুই বান্ধবীকে নিয়ে স্কুল গেটের বাহিরে গেল। দোকানে পানি কিনে দাঁড়াতেই ঐশির বয়সি একটা উসকো-খুশকো নোংরা পোশাকের মেয়ে তাদের দিকে এগিয়ে এলো। ভিক্ষা চাইল কাতর কণ্ঠে। দুদিন ধরে কিছু খায়নি বলল। কিছু খাওয়ার জন্য ভিক্ষা চাইল। ঐশির নরম মনটা মেয়েটির কথা শুনে খারাপ হয়ে গেল। সে তো সকালেও খেয়ে স্কুলে এসেছে। আর আমার মতো মেয়েটিই আজ দুদিন খায়নি! কী আশ্চর্য! খুব কষ্ট লাগল তার। ভাবল, আমি কি একদিন না খেয়ে সহ্য করতে পারব! কখনোই না! হাতে থাকা টিফিন মেয়েটিকে দিয়ে দিল। বান্ধবীরা মানা করা সত্ত্বেও! একটু পানি খেয়ে পুরো বোতলটা ও পানি কিনে যে পাঁচ টাকা বেঁচেছে তাও মেয়েটিকে দিয়ে দিল! নোংরা পোশাকের মেয়েটি খুব খুশি হলো। মেয়েটির চোখটাও আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে গেল। এসব দেখে ঐশিরও ভালো লাগল। পরে তার বান্ধবীরা তাদের টিফিন থেকে তাকে খাওয়াতে চাইলেও খায়নি। স্কুল ছুটির পর বাসায় এসে খেয়েছে। আম্মুকে বলেছে টিফিন দিয়ে দেওয়ার কথা। শুনে আম্মু হেসেছে। তবে বলেছে, মানুষের উপকার অবশ্যই করবে। মহৎ কাজ করতে মানা নেই। তবে কিছুটা নিজের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়। কিছু অংশ নিজের জন্য রেখে দিতে পারতে। তাহলে বিরতির পর ক্লাসগুলো করতে বেশি কষ্ট হতো না। খালি পেটে থাকাতে যেমন হয়েছে। এখন রাতে ঘুমানোর জন্য শুয়ে ঐশি এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে অন্য জগতে চলে গেছে তার খবর নেই। হঠাৎ দেখল টিভিতে একটা চ্যানেলের স্ক্রলিংয়ে একটা মৃত্যু সংবাদ প্রচার করছে, আর সেই সাথে আরও দেখাচ্ছে একজন বিশিষ্ট ভাষা সৈনিকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রী। এটা দেখে তার পুরনো ইচ্ছের কথা আবার মনে পড়ে গেল! এমন সময় তার আম্মু এসে টিভি বন্ধ আর লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে গুড নাইট বলে চলে গেল। ঐশিও ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করে। কিন্তু মাথার ভেতর ইচ্ছেগুলো ঘুরঘুর করছে! রুম হঠাৎ আলোকিত হয়ে উঠল। আলো জ্বলে ওঠাতে ঐশি চোখ খুলল। চোখ খুলে দেখে কি দারুণ একটা ড্রেসে তার বয়সি একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চমকে উঠল সে। তার রুমে এই মেয়ে কোথা থেকে এলো। হাত দিয়ে চোখ ঘষে উঠে বসে আবার তাকাল মেয়েটির দিকে। চেনা চেনা লাগছে মেয়েটাকে। কিন্তু এত রাতে তার রুমে কীভাবে আসলো। ভয় ভয় করছে তার। মেয়েটি আরও কাছে আসলো। হাসছে মেয়েটা। কী দারুণ সুঘ্রাণ আসছে মেয়েটার গায়ে থেকে। মেয়েটি কাছে এসে ঐশিকে বলল ভয় পেয়েও না। আমি আজ দুপুর থেকে তোমার বন্ধু। তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ? ঐশি না বোধক ইঙ্গিতে মাথা নাড়ে। মেয়েটি বলল, আজ দুপুরে তুমি যে মেয়েটিকে তোমার টিফিন দিয়ে দিয়েছিলে আমিই সে মেয়ে। ঐশি বলে, হ্যাঁ, তাইতো চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু তখন তো তুমি নোংরা পোশাকে ছিলে এত দামি পোশাক পেলে কোথায় আর এখানেই বা এলে কী করে? অবাক ঐশির প্রশ্ন শুনে মেয়েটি হাসল। বলল- আমি তোমার বয়সি জিন, তোমরা যাকে ভূত বলো। ভূতের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল ঐশি। যদিও সে ভীতু না। কিন্তু জলজ্যান্ত ভূত সামনে আসলে ভয় না এসে পারে! ঐশি ভয় পাচ্ছে দেখে মেয়েটি পাশে এসে বসে সান্ত্বনা দিয়ে বলল- আমি ভালো ভূত। তোমার কোনো ক্ষতি করব না। আর আজ দুপুর থেকে তোমাকে আমার বন্ধু করে নিয়েছি। আমি আজ মনুষ্য সমাজের তোমার মতো একজন ভালো বন্ধু করতে বের হয়েছিলাম। তাই তোমাদের স্কুলের সামনে গিয়ে ক্ষুধার্ত টোকাইয়ের অভিনয় করলাম। তুমি আমাকে তোমার খাবার দিলে, নিজে না খেয়ে। যার মাধ্যমে আমার ভালো বন্ধু হিসেবে তোমাকে নির্বাচন করলাম। এমন কথায় ঐশি আশ্বস্ত হলো। মেয়েটি নাম কদম্ব। কদম গাছে জন্মেছিল বলে তার নাকি এই নাম রাখা হয়েছে। ঐশী ও কদম্বের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। কদম্ব বলল- আমার বন্ধুর কোনো ইচ্ছে থাকলে পূরণ করে দেব। তোমার কোনো ইচ্ছে আছে? ইচ্ছের কথা বলাতে ঐশির আবার কিছুক্ষণ আগে মনে মনে ভাবা ইচ্ছেটা মনে পড়ে গেল। কদম্বকে সে বলল, আমার খুব ইচ্ছে দেশের খুব প্রভাবশালী তিনজন মানুষের সাথে কাছ থেকে দেখা ও কথা বলার ইচ্ছা। কদম্ব বলল, তারা কে কে? ঐশী বলল- রাষ্ট্রপ্রতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রী। কদম্ব বলল- এটাতো খুবই সহজ ইচ্ছে। এক্ষণি সেই ব্যবস্থা করছি। এই বলে কদম্ব ঐশির সাথে মিশে গেল। এখন ঐশির গায়ে কদম্বর পোশাক আর কদম্ব ঐশির শরীরের সাথে একাকার হয়ে গেল। তার কোনো অস্থিত্বই দেখা যাচ্ছে না আর। ঐশি ভূত হয়ে গেল অতঃপর কানের কাছে কদম্বর কথা শোনা গেল। তুমি চোখ বন্ধ কর দেখবে বিরোধী দলের নেত্রীর কাছে চলে গেছি। কয়েক মিনিট পর কদম্ব চোখ খুলতে বলল। চোখ খুলে ঐশি দেখল একটা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। অদৃশ্য থেকে কদম্ব বলল- দরজায় টোকা দিতে, ঐশি টোকা দিতেই ভেতর থেকে বলল, দরজা খোলা আছে। ভেতরে আস। ঐশি প্রবেশ করতেই দেখল চোখের সামনে বিরোধী পার্টির নেত্রী বসে বসে বই পড়ছেন। তাকে ঢুকতে দেখে অবাক হলেন তিনি। কাছে ডাকলেন। পাশে বসিয়ে আদর করে জানতে চাইলেন, কে তুমি? ঐশী নিজের নাম, পরিচয়, কীভাবে এখানে আসলো তা বলল। শুনে তিনি হাসলেন। পাশে নাস্তার টেবিলে রাখা বিভিন্ন ফল দিলেন খেতে। ফল খেয়ে বিদায় নিয়ে ঐশি এরপর গেল রাষ্ট্রপতির বঙ্গভবনে। দেখল মহামান্য রাষ্ট্রপতি টিভিতে খবর দেখছেন। সেখানেও রাষ্ট্রপতি একি কথা জানতে চাইলেন, ঐশি ঐ একি জবাব দিল। শুনে মুচকি হাসলেন। তিনি বললেন- পৃথিবীতে বড় হতে হলে অনেক বেশি পড়তে হবে। বিদায়ের সময় একটা কলম গিফট দিলেন। এরপর কদম্ব চোখের পলকে নিয়ে গেল গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। তখন তিনি সামনের দিনের সকল পত্রিকায় নজর বুলাচ্ছেন। তাকে রুমে ঢুকতে দেখে প্রধানমন্ত্রী হাসলেন। বললেন, তুমি কি ঐশি? ঐশি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার নাম শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল। মনে মনে ভাবছে, তিনি অলৌকিক খবর রাখেন নাকি। সে পরিচয় দেওয়ার আগেই তিনি সব জেনে গেলেন। তার নাম, সে যে আসবে, এসব। -কি অবাক করে দিলাম? আমাকে অবাক করার পরিবর্তে তোমাকে অবাক করে দিলাম তাই না? তোমার বিস্ময় ভেঙে দিচ্ছি তুমি যে রাষ্ট্রপতির ওখানে গেছ তিনি ফোনে সব বলেছেন আমাকে এইমাত্র। প্রধানমন্ত্রী বললেন। ঐশি ভাবল, এই না হলে প্রধানমন্ত্রী! অগ্রীম সব খবর চলে আসছে। সে দেখল, এই রাতেই আগামী কালকের পত্রিকা আজ পড়ে ফেলছেন। তিনি অনেক আদর করলেন ঐশিকে। অনেক উপদেশ দিলেন। তার রুম থেকে বের হতেই স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) তাকে ধরে ফেলল। এসএসএফ প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। ভুলে সে অদৃশ্য হয়নি। আনন্দ আর খুশিতে আত্মহারা হয়ে রুম থেকে বের হয়ে মানুষের চোখের আড়াল হওয়ার মন্ত্রটা স্মরণ করেনি। আর অনাহূত একটা মেয়েকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে দেখে নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে গ্রেপ্তার করল এসএসএফ! ভীষণ ভয় পেয়ে গেল ঐশি। এসএসএফ সদস্যরা ভীষণ শক্ত করে হাত ধরে রেখেছে। ভয়ে ধুকপুক ধুকপুক করছে বুকের ভেতর। হাত না ছাড়লে সে অদৃশ্য হয়ে বাসায়ও ফিরতে পারবে না। তখন কী হবে। জোর করে হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না... ঠিক এই মুহূর্তে ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভেঙে দেখল সকাল হয়ে গেছে, আম্মু হাত ধরে ডাকছে। বুকের ভেতর তখন ভয়ে ধুকপুক ধুকপুক করছে!

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড