সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
করোনা একটু একটু করে বাতাসে ছড়ানোর উপযোগী হচ্ছে বটে। তার চাইতেও বেশি পরিমাণে মানুষের মনে ছড়িয়ে যাচ্ছে করোনার ভীতি। মানসিক সুস্থতা আমাদের শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে অনেক বেশি সাহায্য করে। তাই, ভয়াবহ এই সময়েও করোনা সংক্রান্ত উদ্বিগ্নতা, মানসিক সমস্যা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন-উত্তর জেনে নিন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে।
১। কী করে বুঝব যে আমার মধ্যে করোনা ভীতি বা উদ্বিগ্নতা তৈরি হয়েছে কিনা?
আপনি যদি করোনা ভাইরাস নিয়ে এত বেশি ভয় পান যে সেটা আপনার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয়, অবসাদ, না ঘুমাতে পারা, দ্রুত নিঃশ্বাস নেওয়া, মনোযোগ না দিতে পারা, প্যানিক অ্যাটাক ইত্যাদি হতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে যে আপনি করোনা সংক্রান্ত উদ্বিগ্নতায় ভুগছেন।
২। বারবার সামনে আসতে থাকা কোভিড-১৯-এর খবরগুলো আমাকে উদ্বিগ্ন করে তুললে কী করব?
আপনি যদি করোনা সংক্রান্ত খবরের দ্বারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, তাহলে বুঝতে হবে যে, আপনি অনেক বেশি পরিমাণে এবং বারবার এই খবর দেখছেন। নির্দিষ্ট ২-৩টি সূত্র অনুসরণ করুন। অন্যগুলো পড়া বাদ দিন। আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই করোনা সংক্রান্ত খবর না পড়ার চেষ্টা করুন।
৩। ঠিক এখনই কোভিড-১৯-এর অতিরিক্ত ভীতি কমাতে আমি কী করতে পারি?
প্রথমত, সারাদিনে কোভিড-১৯ নিয়ে খবর না দেখে নিজেকে অন্য কাজে নিযুক্ত করুন। এছাড়া, করোনা সংক্রান্ত ভয় এবং বাস্তবতাকে আলাদা করে দেখুন। নিজের এবং নিজের পরিবারের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নিন। পরিমিত পরিমাণে ঘুমান এবং পানি পান করুন। এতে করে আপনার মধ্যে উদ্বিগ্নতা অনেকটা কমে আসবে।
৪। আমি কি চিকিৎসকের সঙ্গে কোভিড-১৯-এর ভীতি নিয়ে কথা বলব?
করোনা ভীতি যদি আপনাকে স্বাভাবিকভাবে চলতে বাধা দেয় তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। তবে চেষ্টা করুন যেন চিকিৎসকের সঙ্গে অডিও বা ভিডিও কলে কথা বলা যায়।
৫। কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন বা ঘরে বসে থাকার সময়ে না করা কাজগুলো নিয়ে চিন্তা করা কীভাবে কমাব?
পড়াশোনা বা চাকরিক্ষেত্রে ঘরে থাকার মাধ্যমে আর্থিক কোনো সমস্যা দেখা দিলে সেটা নিয়ে প্রতিষ্ঠান বা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলুন। এছাড়া, কোনো কাজগুলো ঘরে বসেই সম্পন্ন করা যায় সেটাও নিশ্চিত হয়ে নিন।
৬। ঘরে বসে একা মানসিক উদ্বিগ্নতায় ভুগলে কী করব?
ঘরে একা থাকলে বা অনেকটা সময় একলা থাকলে একাকিত্ব অনুভব হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে ফোনে মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। ভিডিও কল করুন। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। অনলাইনেই ক্লাস করুন। নির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন সারাদিনের জন্য। এতে করে আপনার একাকিত্ব কমে আসবে।
৭। বাসায় বসে কাজ এবং সন্তান- একসঙ্গে চালাব কীভাবে?
আপনার সন্তানদের জন্য কিছু মজার পরিকল্পনা রাখুন। সেটা হতে পারে কোনো অঙ্কন প্রতিযোগিতা, খেলা বা অন্য কিছু। নিজের কাজের সময়টা ভাগ করে নিন, যখন আপনাকে সন্তানেরা বাধা দেবে না। আর এ ব্যাপারে কর্মস্থলেও আগে থেকেই জানিয়ে দিন।
৮। আমার পাশের মানুষটি করোনা ভীতিতে ভুগলে কী করব?
তার সঙ্গে কথা বলুন। তাকে সঠিক তথ্য জানান এবং আপনি ও আপনারা যে নিরাপদ থাকার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছেন সেটাও বলুন। এতে করে তার মধ্যকার ভীতি কিছুটা হলেও কমে আসবে।
৯। আমার উদ্বিগ্নতা আমার শিশুদের যদি প্রভাবিত করে তাহলে কী করব?
আপনি কোনো ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হলে সেটার প্রভাব আপনার শিশুর ওপরেও পড়বে। তাই চেষ্টা করুন নিজেকে শান্ত রাখতে। আর একইসঙ্গে আপনার সন্তান যথেষ্ট বড় হলে তাকে করোনা নিয়ে তথ্যগুলো জানান। এতে করে সে এ ব্যাপারে সচেতন হবে।
১০। আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। করোনা থেকে দূরে থাকতে কী করব?
একজন মানুষ শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ার ফলে কোভিড-১৯-এর দ্বারা বিপদেও সবচাইতে বেশি থাকেন। তাই এই সময় নিজেকে যতটা সম্ভব বিচ্ছিন্ন করে ফেলুন সবার কাছ থেকে। কর্মস্থল এবং পরিচিতদের এ ব্যাপারে জানান।
১১। আমার মানসিক স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে এ সময় কী করব?
আপনি যদি আগে থেকেই হতাশা, উদ্বিগ্নতা এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যায় ভোগেন তাহলে করোনা এই একাকিত্ব আপনাকে আর বেশি ভোগাতে পারে। সে ক্ষেত্রে সবসময় চারপাশের মানুষের সঙ্গে ফোনে কথা বলুন। শরীরচর্চা ও অন্যান্য ইতিবাচক অভ্যাসগুলো গড়ে তুলুন।
কোভিড-১৯ মানুষকে শারীরিক ও মানসিক— সবভাবেই বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এর শেষ ফলাফল কী হবে? এই প্রশ্নের উত্তরটা যেমন আমি জানি না, তেমনি আপনিও জানেন না। কিন্তু হ্যাঁ, একটু সচেতন থাকলে ফলাফলটা অবশ্যই ভালো হবে। আর তাই, নিজেকে সুস্থ রাখুন। সবরকম ভাবে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে মানুষ জিতবে এমনটা তো আশা করাই যায়, তাই না?
সূত্র- এভরিডেহেলথ
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড