সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
আমাদের শরীরের সবগুলো অঙ্গই অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। তবে এই অঙ্গগুলোর মধ্যে সবচাইতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে যেই অংশটি সেটি হলো মস্তিষ্ক। আমাদের হাতের ব্যবহার একরকম, পায়ের ব্যবহার একরকম। আমরা চোখ দিয়ে দেখি, মুখ দিয়ে কথা বলি। তবে মস্তিষ্ক এই সবগুলো অঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করে।
মোটকথা মস্তিষ্ক আমাদের শরীরকে সচল রাখতে সবচাইতে বড় ভূমিকা রাখে। আর তাই মস্তিষ্ককে নিয়ে মানুষের চিন্তারও শেষ নেই। মস্তিষ্কের ওপরে চাপ কমাতে প্রতিনিয়িত ভেবে চলেছে মানুষ। নতুন নতুন সব প্রযুক্তি আবিষ্কার করছে।
শুরুটা হয়েছিল সেই ১৯৮০ সালে। সেবার প্রথম প্রাণীদের মস্তিষ্কের যে এক রকমের তরঙ্গ আছে সেটা আবিষ্কার করা হয়। এর পর অনেকদিন কেটে গিয়েছে। অন্যান্য প্রাণীদের মতো মানুষের মস্তিষ্ক ও খুলিতে ইলেকট্রিকাল ওয়েভ কাজ করে সেটা প্রকাশ পেল। এর পরই আবিষ্কার করা হয় ‘ব্রেইন-কম্পিটার ইন্টারফেস’। যেটা কিনা মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করে দিতে সক্ষম।
পুরোপুরি কম্পিউটার না হলেও কম্পিউটারের মতোই যন্ত্রের মাধ্যমে মস্তিষ্ক দিয়েই যন্ত্রের সাথে যোগাযোগ করা যাবে। অনেকটা টেলিপ্যাথির মতো- এমনটাই ছিল পুরো ভাবনাটা। সেই ভাবনার গাছে এখন অনেক ডালপালা।
প্রতি বছরই মস্তিষ্কের সাথে আরও কিছু যান্ত্রিক সুবিধা জুড়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে চলছেন বিজ্ঞানীরা। এই বছর, ২০১৯ সালে, বিজ্ঞানীরা চাচ্ছেন এমন একটি যন্ত্র ব্যবহার করতে যেটির সাহায্যে আমাদের মস্তিষ্ক সহজেই অন্যান্য যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
এর আগে যে এমনটা হয়নি তা নয়। এর আগেও অঙ্গহানির পর মানুষের শরীরে কৃত্রিম অঙ্গ স্থাপন করা হয়েছে এবং সেই অঙ্গকে মানুষ নিজের মানসিক শক্তির মাধ্যমে, মস্তিষ্কের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। কিন্তু এবারের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন।
এবার এমন এক উপায় তৈরি করা হচ্ছে যার মাধ্যমে একজন মানুষ কোনো সার্জারি ছাড়াই ক্ষুদ্র একটি যন্ত্রকে টুপির সাথে যুক্ত করে বা ডিএনএ-তে ভাইরাসের মাধ্যমে প্রবেশ করিয়ে বা মৌখিকভাবে সেবন করে অন্যান্য যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। নিজের শরীরের যে কোনো অংশকে নিয়ন্ত্রণ করাও সেক্ষেত্রে অনেক বেশি সহজ হয়ে পড়বে।
এতে করে ভালো হচ্ছে না খারাপ সেটা নিয়েই এবারের এই লেখাটি। চলুন, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আমাদের মস্তিষ্কের ওপরে হওয়া যন্ত্রের সম্ভাব্য প্রভাবগুলোকে।
মানসিক সক্ষমতা বাড়বে-
মস্তিষ্ককে আমরা কখনোই পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারিনি। কিন্তু, যন্ত্র আমাদেরকে মস্তিষ্ককে পুরোপুরি না হলেও একটু বেশি ব্যবহার করার সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রযুক্তির নতুন এই উন্নয়ন সেই সুযোগকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
অঙ্গহানির সমাধান-
অঙ্গহানি হলে একজন মানুষ বাকিটা জীবন অসম্পূর্ণ হয়ে কাটান। সেই অসম্পূর্ণতা কাটিয়ে তোলার জন্য যন্ত্র সাহায্য করবে। নকল পা বা হাত ব্যবহার করাটা আমাদের সবার কাছেই পরিচিত। তবে, নতুন এই প্রযুক্তি আমাদেরকে মস্তিষ্কের মাধ্যমে আমরা যেমন হাত বা পা পরিচালিত করি, সেভাবেই এই কৃত্রিম অঙ্গগুলোকেও পরিচালিত করতে সাহায্য করবে।
সময়ের গড়মিল-
এখন পর্যন্ত দ্রুততার সাথে যান্ত্রিক অঙ্গকে পরিচালনা করার উপায়টি খুঁজে বের করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। তাই কম্পিউটার পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের যে একটু সময় অপেক্ষা করতে হয়, সেটা এ ক্ষেত্রেও করতে হবে। অবশ্য বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন খুব দ্রুত এই সমস্যাটির সমাধান করার।
মস্তিষ্কের সহ্যক্ষমতা-
আমাদের মস্তিষ্কের সহ্যক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করতে গেলে এর সাথে ব্যবহৃত আলট্রাসাউন্ড এবং অন্যান্য তরঙ্গ মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করবে। আমাদের মস্তিষ্ক কতটা বেশি চাপ নিয়ে পারবে, একসাথে অনেকগুলো কাজ করতে পারবে কি না- এই সবকিছুই দেখার প্রয়োজন রয়েছে।
তবে সঠিকভাবে পুরো ব্যাপারটি জানতে হলে এখনো অনেকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। নতুন এই প্রযুক্তি তৈরি হয়ে গেলেও সেটা ব্যবহার করা এবং এর দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল নেওয়া- এই দুটো ব্যাপার সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তারপরেই এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক, নাকি ক্ষতিকর সে সম্পর্কে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।
সূত্র- মেডিকেল নিউজ টুডে
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড