• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হৃদরোগে মৃত্যু প্রতিরোধ করবে অত্যাধুনিক কার্ডিয়াক ডিভাইস

  নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:৩৩
ড. মহসিন হোসেন
প্রফেসর ড. মহসিন হোসেন। (ছবি : সংগৃহীত)

সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশির ভাগই তাদের কার্ডিও ভাস্কুলার ডিজিজ প্রোফাইল সম্পর্কে জানেন না এবং সাধারণ হৃদরোগ ও আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া আসলে ধমনী ব্লক হয়ে যাওয়ায় রক্তের সংবহনজনিত একটি সমস্যা এবং এর লক্ষণ তৎক্ষণাৎ কিংবা অ্যাটাকের কয়েক ঘণ্টা আগে দেখা যায়। এ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রধানত রয়েছে অ্যাঞ্জাইনা পেইন যা কয়েক মাস ধরে চলতে পারে এমনকি বছর পরও। যদিও আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ক্ষেত্রে, এটি অনেকটা ইলেক্ট্রিক্যাল সমস্যা যা হৃদযন্ত্রের কাজ করা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে হয় এবং যদি স্বল্প সময়ের মধ্যে তাঁর উপযুক্ত চিকিৎসা না করা যায় তাহলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

কার্ডিওলজিস্ট প্রফেসর ড. মহসিন হোসেন জানান, ‘বেশিরভাগ হঠ্যাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ক্ষেত্রে দেখা যায় হৃদযন্ত্রের অনিয়মিত স্পন্দন এর পেছনে দায়ী যার আরেকটি নাম হল অ্যারিদমিয়াস। অস্বাভাবিক ও অনিয়মিত হৃদ স্পন্দন প্রাণঘাতী হতে পারে যা হৃদয়ের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হতে পারে, যদি না উপযুক্ত সময়ে তাঁর চিকিৎসা করা হয়। যদিও এই ধরণের প্রাণঘাতী পর্বে থেকে রক্ষা পেতে, আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে চিকিৎসা করে থাকি যারা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন’।

যে সব রোগী হাইপারটেনসন, ডায়াবেটিস ও ওবেসিটি বা স্থূলত্বের মতো সমস্যার শিকার এবং উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করেন তারা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সব থেকে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এই ধরণের রোগীদের নিয়মিত হার্ট চেক আপ ও বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণ প্রয়োজন।

তবে, যে সব রোগী হৃদযন্ত্র থেকে কম রক্ত পাম্প হওয়ার সমস্যার মধ্যে রয়েছেন যাদের এই সক্ষমতা মাত্র ৩৫৫ অথবা তাঁর কম (এজেকসন ফ্র্যাকশন) এবং ইতোমধ্যেই বাইপাস সার্জারি হয়েছে অথবা স্টেন্টিং করা হয়েছে করোনারি আর্টারি ডিজিজের কারণে, তারা এই ধরণের হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সব থেকে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, যা কি না প্রাণঘাতী হতে পারে এবং খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই মৃত্যু নেমে আসতে পারে।

ড. মহসিন হোসেন এ সম্পর্ক বলেন, ‘এই ধরনের রোগীদের জন্য যারা আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের এর হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিও ভাস্কুলার ডিফাইব্রিলেটর (আইসিডি) ইনসার্ট করা যেতে পারে। (আইসিডি) হল একটি ছোট আকারের মেশিন যা পেসমেকারের মতো হয় এবং অ্যারিদমিয়াসের সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা হয়। এটি হৃদ গতি নিয়ন্ত্রণ করে’।

আইসিডি ধারাবাহিকভাবে হৃদ গতির উপর নজর রাখে। যখন এই হার অতি দ্রুত হয়, বা অস্বাভাবিক ছন্দে চলে তখন এটি এনার্জি ডেলিভার করে (ক্ষুদ্র, কিন্তু শক্তিশালী শক) হৃদ পেশীতে। ফলে হৃদ গতি ফের স্বাভাবিক হয়ে যায়। আইসিডি প্রতিটি এই ধরণের ঘটনার ডেটা রেকর্ড করে, যা ডাক্তারেরা হাসপাতালে রাখা সিস্টেম এর তৃতীয় একটি অংশ দিয়ে প্রত্যক্ষ করবেন।

যে সব রোগীদের আইসিডি ব্যবহার করা হয়েছে তাঁদের হৃদ গতি ধারাবাহিকভাবে নজরে রাখা হয়। এটিকে পেসমেকার এর সঙ্গে একযোগে ব্যবহার করা যায় অন্যান্য অনিয়মিত হৃদ গতির সমস্যা রোধে। কাজেই, যে সব রোগীর হৃদয়ের কার্য্যক্ষমতা কমে এসেছে (এজেকসন ফ্র্যাকশন) এবং অনিয়মিত হৃদ গতি রয়েছে তাদের জন্য একটি পৃথক ডিভাইস সিআরটি-পি ব্যবহার করতে হয়।

যদিও, হৃদ গতির ছন্দের প্যাটার্নের ভিত্তিতে, একজন রোগীকে আরও উন্নত ডিভাইস কার্ডিয়াক রিসিঙ্ক্রোনাইজেশন থেরাপি ডিফাইব্রিলেটর (সিআরটি-ডি) ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এই ডিভাইসটি, যা কম্বো ডিভাইস নামেও পরিচিত, প্রেসমেকার ও আইসিডি এর কম্বিনেশন হিসাবেও গণ্য করা যায়। কারণ তা অনিয়মিত হৃদ গতি সমস্যা সিঙ্ক্রোনাইজেসন এর মাধ্যমে সমাধান করে, হৃদ গতি মনিটর করে এবং প্রয়োজন হলে আকস্মিক কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে রোগীর জীবন রক্ষায় বৈদ্যুতিক শক দেয়।

ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির ক্ষেত্রে একধাপ অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, এই ডিভাইসে রয়েছে বিল্ট-ইন ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিও ভাস্কুলার ডেইফাইব্রিলেটর (আইসিডি)। বুকের ত্বকের ভেতর এটি ইমপ্ল্যান্ট করা হয় এবং এর তাঁর শিরার মধ্যে দিয়ে হৃদ যন্ত্রের সঙ্গে সংযোগ সাধন করে, ফলে হৃদ গতির উপর নজরদারি সম্ভব হয়। যদি কোন সময় অনিয়মিত অথবা কোন ছন্দ না দেখা যায় তাহলে এই ডিভাইস হন্তক্ষেপ করে এবং হৃদযন্ত্রকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসতে সাহায্য করে, বললেন, প্রফেসর ডঃ মহসিন হোসেন।

এককথায় বলতে গেলে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, এই ধরণের হঠ্যাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে মৃত্যু আশঙ্কা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে বিশেষত হৃদ রোগ জনিত কারণে, তবে এর জন্য রোগীকে আরো সতর্ক ও নিজের কার্ডিয়াক প্রোফাইল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।

ওডি/এসএইচএস

স্বাস্থ্য-ভোগান্তি, নতুন পরিচিত অসুস্থতার কথা জানাতে অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ পেতেই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ দেবার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড