• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কুমিরের রক্তে এইডসের প্রতিষেধক!

  ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম

১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:২৮
প্রতিষেধক
ছবি : প্রতীকী

সাধারণত কুমির তাদের পরিবেশে অন্যান্য কুমিরের সাথে ও খাদ্য শিকারের সময় শিকারের সাথে মারাত্মক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই সংঘর্ষের সময় অনেক কুমিরই আঘাত প্রাপ্ত হয়। ফলে তাদের শরীরে মারাত্মক ক্ষতও হতে দেখা যায়।

জলজ পরিবেশে অসংখ্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকে। যেগুলো অন্যান্য প্রাণির ক্ষতকে শুকানোর ক্ষেত্রে বাঁধার সৃষ্টি করে। কিন্তু জীববিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন, কুমিরের ক্ষেত্রে এই ক্ষত বৃদ্ধিকারক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকলেও দ্রুত ক্ষত শুকিয়ে যায়।

তাই বিজ্ঞানীরা গবেষণার জন্য মানুষ ও কুমিরের রক্তের সিরাম বা রক্তরস সংগ্রহ করেন। অতঃপর সংগৃহীত রক্তরসে ২৩ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেইন কালচার করেন। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো প্রচলিত বিভিন্ন এন্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ এই ব্যাকটেরিয়াগুলো প্রচলিত এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে মারা যায় না।

পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, মানুষের রক্তরস মাত্র ৮টি ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সক্ষম হয়। অপর দিকে, কুমিরের রক্ত ২৩ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেইনকেই মেরে ফেলতে সক্ষম হয়।

গবেষকরা, তাদের গবেষণায় Methicillin-resistant Staphylococcus aureus (MRSA) ব্যাকটেরিয়াও ব্যবহার করেন। MRSA হচ্ছে এমন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট ইনফেকশন বা প্রদাহ, যে ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক দ্বারাও মারা যায় না। অর্থাৎ পুরোপুরি এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়েছে এমন ব্যাকটেরিয়াও কুমির ও মানুষের রক্তরসে কালচার করেন। এবার গবেষকরা আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ্য করেন, কুমিরের রক্ত MRSA কেও প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

ম্যাকনিস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়নবিৎ মার্ক মারচ্যান্ট কুমিরের এইসব প্রতিরোধক ক্ষমতা প্রথম লক্ষ্য করে পরীক্ষা করেছিলেন। গবেষকরা এইচআইভি ভাইরাস বা এইডস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত কুমিরের রক্তরসে দিয়ে পরীক্ষা করেন। তারা দেখেন প্রচুর ভাইরাস নষ্ট হয়ে যায়!

বিজ্ঞানী এরপর কুমিরের রক্ত নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করতে থাকেন। তারা কুমিরের রক্তে মানুষের রক্তের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ এক ধরনের প্রোটিন খুঁজে পান। যা হিস্টোন প্রোটিন নামে পরিচিত। যারা এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত তাদের শরীরে এই প্রোটিনের পরিমাণ হ্রাস পায়। তবে এই প্রোটিন সুস্থ মানুষের দেহে এইচআইভি সংক্রমণ মোকাবেলা করতে না পারলেও এইচআইভি ভাইরাসের জীবনচক্রের প্রোটিন সংশ্লেষকে বাধাগ্রস্ত করে।

গবেষকদের একজন ড. ব্রান্স বলেন, “যেহেতু এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে হিস্টোন প্রোটিনের পরিমাণ হ্রাস পায়, তাই মানব শরীরে এই প্রোটিন বৃদ্ধির জন্য কাজ করা যেতে পারে। আর এ জন্য কুমিরের রক্ত হতে পারে নতুন কোনো ওষুধ যা খুবই ভালোভাবে কাজ করবে।”

জানা যায়, আমেরিকার অনেক বড় বড় ওষুধ কোম্পানি ইতোমধ্যেই কুমিরের রক্ত তৈরি ওষুধ ও তেল উৎপাদনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু গবেষকরা মনে করেন মানুষের ওষুধ হিসেবে কুমিরের রক্ত ব্যবহারের পূর্বে আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

তবে যদি এই গবেষণা একটি সফল পরিণতিতে পৌঁছায় তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞানে আরেকটি যুগান্তকারী এন্টিবায়োটিক তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তারা।

তথ্যসূত্র- ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, সায়েন্স টাইমস।

ওডি/এনএম

স্বাস্থ্য-ভোগান্তি, নতুন পরিচিত অসুস্থতার কথা জানাতে অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ পেতেই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ দেবার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড