সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
ঘুম শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু অতিরিক্ত ঘুমানো কি ভালো? ক্লান্তি, শারীরিক অবস্থা ইত্যাদির উপরে ঘুমের পরিমাণ নির্ভর করে। কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, অতিরিক্ত এই ঘুমের কারণ হতে পারে আলঝেইমার্সও। দিনের বেলা এই যে একটু একটু ঝিমুচ্ছেন, আলঝেইমার্সের এই সমস্যা আপনারও আছে কিনা দেখে নিন এখুনি!
আমাদের মস্তিষ্কের যে অংশটি দিনের বেলা জেগে থাকতে সাহায্য করে, আলঝেইমার্সের কারণে সেটি কাজ করতে সমস্যা বোধ করে। ফলে, দিনের বেলায়ও ঘুম চলে আসে। আলঝেইমার্সের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে এটি দেখা দেয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, আলঝেইমার্সের ক্ষেত্রে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হওয়ার আগে আগেই এই সমস্যাটি দেখা দেয়।
শুধু তাই নয়, গবেষণায় দেখা যায় যে, দিনের বেলায় ঘুম না আসার পেছনে মস্তিষ্কের যে অংশগুলো কাজ করে সেগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ‘টাও’ নামক একটি প্রোটিনের কারণে। আর এই একই প্রোটিন আলঝেইমার্স হওয়ার পেছনেও কাজ করে। ফলে যখন এই প্রোটিন মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে, এই ফলে একইসাথে ঘুম বেশি আসা এবং আলঝেইমার্স দুটোই ঘটে থাকে।
এ ক্ষেত্রে গবেষণার সময় মোট ১৩ জন আলঝেইমার্সে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং ৭ জন স্বাভাবিক মানুষকে পরীক্ষা করেন গবেষকেরা। এতে দেখা যায় যে, আলঝেইমার্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুমানোর অভ্যাস দেখতে পাওয়া যায়। স্বাভাবিক মস্তিষ্কের ব্যক্তিদের এই সমস্যায় পড়তে হয় খুব কম।
টাও-এর আক্রমণ দেখা দিলে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশগুলো প্রায় ৭৫ শতাংশ স্নায়ুকোষ হারিয়ে ফেলে। আর এর ফলেই এমন সমস্যা দেখা দেয়। ‘আলঝেইমার্স এন্ড ডিমেনশিয়া’ নামক জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয় যে, প্রোটিনের এই আক্রমণের ফলে মস্তিষ্কের একটি স্নায়ু বা একটি অংশ নয়, জেগে থাকার জন্য মস্তিষ্কের যে অংশটি কাজ করে সেই পুরোটা অংশকেই ভুগতে হয়। পুরো প্রক্রিয়াটিই কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খুব বড় পরিবর্তন আসে।
এর আগে অ্যামিলয়েডকে আলঝেইমার্সের কারণ বলে মনে করা হতো। এটা সত্যি যে আলঝেইমার্সের পেছনে অ্যামিলয়েড অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু তার চাইতেও বড় ভূমিকা পালন করে টাও প্রোটিন। এত দিন অ্যামিলয়েডকে কারণ ধরে নিয়ে আলঝেইমার্সের ওষুধ ও চিকিৎসা বের করার চেষ্টা করেছেন চিকিৎসকেরা। এতে করে খুব একটা লাভ হয়নি।
এবার তাই টাওকে মূল কারণ মনে করে নতুন করে চেষ্টা করবেন তারা। কে জানে, টাও প্রোটিন যদি আলঝেইমার্সের পেছনে থাকা মূল কারণ হয়ে থাকে, এবার হয়তো এই সমস্যাটির সমাধান বের করা সম্ভব হবে।
আলঝেইমার্স ব্যাপারটি হয়তো ভয়ঙ্কর। তবে, এই নতুন তথ্যের মাধ্যমেই আলঝেইমার্সের মতো ভয়াবহ একটি সমস্যাকে কিছুটা হলেও সারিয়ে তোলার বা হারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন চিকিৎসকেরা। যদিও পথটা অনেক লম্বা। আসলেই পরীক্ষার এই ফলাফল কি কোন কাজে আসবে? সেজন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।
চিকিৎসকেরা নিজেদের পাওয়া নতুন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আলঝেইমার্সের প্রতিরোধক বা প্রতিষেধক বের করার। একসময় হয়তো তারা এ ব্যাপারে সফলও হবেন। ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা তো করাই যায়!
তবে হ্যাঁ, আপনার যদি দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুম পায় এবং সারাক্ষণ তন্দ্রাভাব চলতে থাকে, এই অস্বাভাবিক ঘুমের সমস্যাটি নিয়ে চিকিৎসকের সাথে কথা বলতেই পারেন। এতে করে শুরু থেকে ভবিষ্যতের সমস্যা সম্পর্কে সচেতন থাকা যাবে।
সূত্র- ওয়েবএমডি।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড