• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আত্মহত্যাই কি ডিপ্রেশনের শেষ পরিণতি? (পর্ব ১)

  জুবায়ের আহাম্মেদ

০৯ আগস্ট ২০১৯, ০৯:৪৯
একাকিত্ব 
ডিপ্রেশন কমিয়ে দেয় মানুষের জীবনের আনন্দ (ছবি: মেডিকেল এক্সপ্রেস)

ডিপ্রেশন। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে পরিচিত এবং অবহেলিত রোগের নাম বলা চলে তাকে। সারা বিশ্বে প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন মানুষ এই রোগের শিকার। যদিও এই সম্পর্কে সচেতনতার মাত্রা খুবই কম। জীবনে চলার পথে দুঃখবোধ, একাকিত্ব কিংবা অবসাদ যদি আপনাকে কোনোভাবেই মুক্তি না দেয় সেক্ষেত্রে আপনিও একজন ডিপ্রেশনের রোগী। ডিপ্রেশনের সাথে অন্যান্য মানসিক অবসাদগ্রস্থতার বড় পার্থক্য, ডিপ্রেশনের সময় আপনার চাল চলন, আচরণ থেকে শুরু করে আপনার চিন্তাচেতনাও ক্রমশ অসাড় হতে শুরু করবে। ডিপ্রেশনের ফলে আপনার স্বাভাবিক কাজ কর্ম, খাওয়া, ঘুমসহ সব কাজেই বিঘ্নতা আসতে শুরু করবে।

কারো কারো মতে ডিপ্রেশন মানে ব্ল্যাকহোলে বসবাস করা কোনো প্রাণী। কারো কাছে এর অর্থ শূন্যতা, কারো কাছে অনর্থক যন্ত্রণা। কিছু ক্ষেত্রে তীব্র রাগ কিংবা ক্লান্তিও ডিপ্রেশনের প্রকারভেদ হতে পারে। তবে যাইই হোক না কেন আপনি যদি মনে করে থাকেন আপনি ডিপ্রেশনের রোগী, আপনি নিশ্চিত থাকুন আপনার পক্ষেও এটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। শুধুমাত্র জানতে হবে আপনার ডিপ্রেশনের স্বরূপ, কারণ এবং এর লক্ষণ কী কী।

ডিপ্রেশনের লক্ষণ

ডিপ্রেশনের লক্ষণ এবং এর তীব্রতা প্রতিটি মানুষের প্রকৃতি ভেদে আলাদা আলাদা হতে পারে। এখানে স্মরণ রাখা দরকার ডিপ্রেশনের সকল লক্ষণই প্রাত্যহিক জীবনে একদম স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু যত বেশি লক্ষণ আপনার মাঝে বর্তমান থাকবে সেই সাথে এর প্রভাব যত বেশি তীব্র থাকবে আপনার ডিপ্রেশনের মাত্রা ততটাই ভারী থাকবে। ডিপ্রেশনের এইসব লক্ষণ নিজের মাঝে উপলব্ধি করলে আপনার উচিত নিজের জীবন নিয়ে সচেতন হতে শুরু করা।

হতাশা এবং একাকীত্ব

ডিপ্রেশনের সবচেয়ে বড় লক্ষণ অবশ্যই হতাশা। এটি ডিপ্রেশনের একেবারে প্রাথমিক লক্ষণ বলা যেতে পারে। আপনার চারপাশ অসহ্য লাগতে শুরু করবে। আপনার মাঝে এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করবে যে, আপনি সম্পূর্ণ একা এই পরিস্থিতির মাঝে।

দৈনন্দিন জীবনে আগ্রহ হারানো

আপনি নিত্যদিনের জীবন সম্পর্কে উদাসীন হতে শুরু করবেন। দায়িত্ব, পরিবার এবং সমাজ আপনার কোনো ভাবনাতেই আর স্থান পাবে না।

দৈহিক ওজনে তারতম্য

আপনার মানসিক অবস্থার সম্পূর্ণ প্রভাব পড়বে আপনার খাদ্যাভাস এবং ওজনে। বিভিন্ন পরীক্ষালব্ধ তথ্য অনুসারে, ডিপ্রেশনে থাকাকালীন সময়ে আপনার ওজন এক মাসের মাঝেই ৫ শতাংশ বাড়বে কিংবা কমে যাবে।

ঘুমের তারতম্য

ইনসমনিয়া বা রাত্রি জাগরণ যেমন বেড়ে যাবে আপনার ডিপ্রেশনের সময়ে। একইভাবে বেড়ে যেতে পারে আপনার ঘুমের পরিমাণও। রাগ এবং বিরক্তি

ডিপ্রেশনের সময়ে আপনার রাগ এবং বিরক্তি খুব সহজেই আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণ থেকে ছুটে যেতে পারে। আপনার সহ্য শক্তি অনেকটাই কমে আসবে। নিজের প্রিয় মানুষকেও আপনার অসহ্য মনে হতে শুরু করবে।

ক্লান্তি

এটি বেশ পরিচিত একটি লক্ষণ। গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রায় ৯০ শতাংশ ডিপ্রেশনের রোগী মনে করেন, তারা খুব দ্রুত শক্তি হারাচ্ছেন কিংবা সহজেই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছেন।

নিজের প্রতি তীব্র ঘৃণা

ডিপ্রেশনের অন্যতম কারণ কিংবা লক্ষণ দুই ই বলা চলে, নিজের প্রতি নিজের বিরূপ ধারণা। নিজের অতীতকে ঘৃণা করা বা অনুশোচনায় দগ্ধ হতে থাকা দুটোই আপনার মাঝে তীব্রভাবে জেঁকে বসবে ডিপ্রেশনের সময়ে।

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন

ডিপ্রেশনের চূড়ান্ত একটি লক্ষণ অনিয়ন্ত্রিত জীবন। আপনি প্রায়ই এন্টি-ডিপ্রেসিভ ওষুধ, প্রচুর ঘুমের ওষুধ কিংবা ধূমপান বা নেশার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করবেন। সেই সাথে অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজের প্রতি আলাদা টান বোধ করবেন।

মনঃসংযোগের অভাব

আপনার মনের উপর তীব্র চাপ থাকায় খুব পরিচিত এবং অভ্যস্ত কাজেও আপনার মনোযোগ বিঘ্নিত হবে। স্বাভাবিক ভাবেই নিজেকে অনেকটা বিক্ষিপ্ত মনে হবে এই সময়ে।

অস্বাভাবিক শারীরিক যন্ত্রণা

ডিপ্রেশন চলাকালীন সময়ে প্রায়ই মাথাব্যাথা, বুকে চাপ অনুভব করা কিংবা ব্যাক পেইনের মতো শারীরিক সমস্যা আপনার মাঝে জেগে উঠতে শুরু করবে।

ডিপ্রেশন নাকি বাইপোলার ডিজঅর্ডার?

বাইপোলার ডিজঅর্ডার বা ম্যানিয়াক ডিপ্রেশন প্রায় ডিপ্রেশনের মতো রোগ হলেও এর মাত্রা অনেকখানি কম। প্রায়শ ক্ষেত্রে বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভোগা রোগীরা এন্টি-ডিপ্রেসিভ ওষুধসহ নানাবিধ ভুল সিদ্ধান্তের কারণে নিজের পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করেন। তাই আপনার মাঝে সিদ্ধান্তহীনতা বা কনফিউজিং মনোভাব জাগ্রত হলে আগে স্বাভাবিক জীবনের দিকে মনোযোগী হতে চেষ্টা করুন। নিজের প্রতি যত্ন নিতে শুরু করুন। এতে কাজ না হলে বা ডিপ্রেশনের লক্ষণ তীব্র হতে শুরু করলে তবেই চিকিৎসার দিকে মনোনিবেশ করুন।

ডিপ্রেশন

মানুষের জীবনে ডিপ্রেশন কখনোই ভালো কিছু নিয়ে আসে না (ছবি : ন্যাশনাল পোস্ট ডট কম)

ডিপ্রেশন এবং আত্মহত্যা

লিংকিন পার্কের গায়ক এবং আমেরিকান সঙ্গীত শিল্পী চেস্টার বেনিংটনের আত্মহত্যা, কিংবা বাংলার জীবনানন্দ দাশ অথবা নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে সবারই আত্মহত্যার পিছনে জড়িয়ে ছিল ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশন থেকেই বেশির ভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে। ডিপ্রেশন কখন আত্মহত্যার পর্যায়ে যায় সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা দরকার। নিজের মাঝে এমন কিছু দেখা গেলে আপনার উচিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা। মনে রাখা দরকার, আত্মহত্যা কখনোই মানসিক সমস্যার সমাধান হতে পারে না।

১। প্রচুর পরিমাণে নিজের ক্ষতি করা কিংবা মৃত্যু নিয়ে কথা বলা আর চিন্তা করা। ২। নিজের হতাশার কথা প্রকাশ্যে প্রচার করা ৩। মৃত্যু এবং মৃত্যুর পদ্ধতি সম্পর্কে অতিরিক্ত আগ্রহী হতে শুরু করা। ৪। অনিয়ন্ত্রিত এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজের আগ্রহ বেড়ে যাওয়া ৫। ঘনঘন বিদায় নেয়ার প্রবণতা ৬। ডিপ্রেশন থেকে সরে এসে হঠাৎ করে খুব বেশি প্রাণচঞ্চলতা কিংবা হাসিখুশি হতে শুরু করা।

কেবল নিজেরই না আপনার আশেপাশে কারো মাঝে এমন লক্ষণ দেখা দিলে আপনাকেই দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসা দরকার।

বয়স ও লিঙ্গভেদে ডিপ্রেশনের রকমফের, ডিপ্রেশনের বিভিন্ন প্রকারভেদ সেইসাথে ডিপ্রেশনের সময়ে বিভিন্ন করণীয় এবং প্রতিকার থাকছে পরের পর্বে।

তথ্যসূত্র: হেল্প গাইড

ওডি/এএন

স্বাস্থ্য-ভোগান্তি, নতুন পরিচিত অসুস্থতার কথা জানাতে অথবা চিকিৎসকের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ পেতেই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার পরামর্শ দেবার প্রচেষ্টা থাকবে আমাদের।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড