সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
গর্ভবতী নারীকে নিজের ও অনাগত সন্তানের সুস্থতার কথা ভেবে অনেক কিছুই করতে হয়। অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। এই নিয়ম খাবার থেকে শুরু করে চলাফেরা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রকাশ পায়। অনেকসময়, এর পেছনে কুসংস্কার থাকলেও, কিছু নিয়ম যে একেবারে মিথ্যে বা গুরুত্বহীন তা কিন্তু নয়।
গর্ভধারণের সময় পালনীয় এমন একটি নিয়ম হচ্ছে প্রক্রিয়াজাত বা প্রসেসড কোনো খাবার গ্রহণ না করা। সাধারণত মনে করা হয় যে, গর্ভবতী নারীরা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে সেক্ষেত্রে শিশুর এএসডি বা অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ধারণাটি কতটা সত্যি? চলুন, দেখে নেওয়া যাক-
ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার মেডিসিন বিভাগে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণ পিপিএ বা প্রোপায়োনিক এসিড ব্যবহার করা হয়। যেটি ভ্রূণের মস্তিষ্কের গঠনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আমাদের অন্ত্র মস্তিষ্ককে অনেকভাবে প্রভাবিত করে। এটিও তেমনি একটি ব্যাপার।
মূলত, অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল সমস্যা বেশি দেখতে পাওয়া যায়। কেন এমন হয় সেটা জানার জন্য এ নিয়ে পরীক্ষা চালান গবেষকেরা। আর এর ফলে অটিজমে আক্রান্তদের মলে পিপিএ খুঁজে পান তারা।
মাইক্রোমায়োম এবং জিআই- এই দুটি ব্যাপারের মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে কিনা এবং এগুলো মস্তিষ্কের গঠনে প্রভাব রাখে কিনা, সেটি জানাই ছিল গবেষকদের প্রধান লক্ষ্য। গবেষণায় দেখা যায় যে, অন্ত্রে প্রচুর পরিমাণে পিপিএ বিদ্যমান থাকলে সেক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোষের কাজের ভারসাম্য ব্যাহত হয়। এটি মস্তিষ্কের সেই কোষগুলোকে নষ্ট করে ফেলে যেগুলো নিউরনে পরিণত হয়। আর একইসাথে গ্লিয়াল কোষের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে তুলে, যেটি কিনা নার্ভাস সিস্টেমকে প্রভাবিত করে।
সাধারণত, গ্লিয়াল কোষ আমাদের মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি নিউরনের সুরক্ষায় এবং পুষ্টি প্রদানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তবে এই গ্লিয়াল কোষের পরিমাণ কোনো কারণে অনেক বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে মস্তিষ্কে প্রদাহ তৈরি হয়। যেটি কিনা এএসডি-তে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে অনেক বেশি পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায়।
এই কমে যাওয়া নিউরন এবং এদের মধ্যকার সংযোগের অভাব পরবর্তীতে একজন মানুষের মধ্যে নিজের স্বাভাবিক যোগাযোগ করার ক্ষমতাকেও কমিয়ে দেয়। অন্যদের সাথে কথা বলার বা স্বাভাবিক কর্মকান্ড পরিচালনা না করতে পারার ফলে অটিজমের মতো সমস্যা তৈরি হয়।
এর আগে পরিবেশ এবং জিনের কারণে অটিজম হতে পারে, এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হলেও এই প্রথম নার্ভাস সিস্টেম ফাংশনের সাথে অটিজমের যোগাযোগ দেখানোর চেষ্টা করেছেন গবেষকেরা। পরবর্তীতে এ নিয়ে আরো কাজ করার আশা করছেন সবাই। এতে করে জন্মের আগে থেকেই সঠিকভাবে কিছু ছোট্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুর মস্তিষ্ককে আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে। আর কোন বড় সমস্যা ছাড়াই অটিজমকে দূর করা যাবে।
খাবার আমাদের শরীরকে অনেকভাবেই প্রভাবিত করে। আমাদের মস্তিষ্ক গঠনেও এর প্রভাব অনেক। গর্ভকালীন সময়ে তাই এই খাবারের যে কোন প্রভাব শিশুর উপরে পড়ে না এমন্তা ভাবার তাই কোন কারণ নেই।
আপনি কি চান যে, আপনার শিশু অটিজমের হাত থেকে রক্ষা পাক? গবেষণা তো চলছেই। তবে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া থেকে গর্ভধারণের সময় বিররত থাকার চেষ্টা করুন। কে জানে, আপনার এই ছোট্ট চেষ্টাটুকুই হয়তো ভবিষ্যতের আরও ঝামেলা থেকে আপনাকে বাঁচিয়ে দেবে।
সূত্র- ওয়েবএমডি
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড