সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
আমাদের বোন ম্যারোতে তৈরি হওয়া এক ধরনের ক্যানসারের নাম ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়া। আমাদের হাড়ের যে অংশে শ্বেত রক্তকণিকা তৈরি হয়, সেখানেই এই সমস্যা দেখা দেয়। রক্তে শ্বেত রক্তকণিকা অস্বাভাবিক রকমের বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমনটা দেখা দেয়।
ক্যানসারের এই ধরনটির নামে ক্রনিক রয়েছে, কারণ এটি অন্যান্য প্রকারের ক্যানসারের তুলনায় ধীরে ধীরে শরীরে ছড়ায়। অন্যদিকে, মায়েলোজেনাস বলতে এই ক্যানসারের কারণে আমাদের শরীরের কোন কোষগুলো প্রভাবিত হয় সেটা বোঝানো হয়েছে।
সাধারণত যেকোনো বয়সেই এই ক্যানসার হতে পারে। তবে মূলত শিশুদের চাইতে বয়স্ক ও প্রাপ্ত বয়স্কদেরই এই ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্ত করা গেলে এর সমধান তুলনামূলকভাবে বেশি সহজ হয়। এমনটাও দেখা গিয়েছে যে, নিয়মিত চিকিৎসা নেওয়ার ফলে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক অনেক বছর বেঁচে থাকেন।
লক্ষণ কী?
ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়াতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যে লক্ষণগুলো বেশি দেখা যায় সেগুলো হলো-
● হাড়ে ব্যথা ● অতিরিক্ত রক্তপাত ● অল্প খাবার গ্রহণ করলেই পেট ভরে যাওয়া ● জ্বর ● দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়া ● কোন চেষ্টা ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া ● ক্ষুধাবোধ না হওয়া ● অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া ইত্যাদি
আপনি যদি পুরুষ হন, আপনার বয়স যদি বেশি হয় এবং আপনি রেডিয়েশনের খুব কাছে থাকেন- তাহলে ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়ায় আপনার আরও বেশি ভোগার সম্ভাবনা থাকে।
সমাধান কী?
ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়াতে খুব দ্রুতই চিকিৎসা ও আরোগ্য পাওয়া সম্ভব। তবে এ জন্য অনেক রকমের পদ্ধতিই অনুসরণ করতে পারেন আপনি। এজন্য প্রথমেই আপনার প্রয়োজন হবে ভালো কোন হেমাটোলজিস্ট-অনকোলজিস্টের সাথে দেখা করা। সাধারণত রক্তে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধান দিতে পারেন এই বিশেষজ্ঞরাই। এখানে মূল লক্ষ্য হলো রক্ত থেকে বিসিআর-এবিএল জিনকে সরিয়ে ফেলা বা কমিয়ে দেওয়া। এতে করে শ্বেত রক্তকণিকার অতিরিক্ত উৎপাদন নিজ থেকেই কমে যাবে।
প্রাথমিক চিকিৎসা-
আপনি চিকিৎসকের সাথে দেখা করলে এবং আপনার শরীরে ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়া ধরা পড়লে চিকিৎসক প্রথমেই আপনার সমস্যা কোন ধাপে আছে তা চিহ্নিত করবেন। এরপর টাইরোসিন কিনাজে ইনহেবিটরের মতো কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হবে আপনার শরীরে। এই ওষুধ রক্তে টাইরসিন কিনাজে নামক এক রকমের প্রোটিনকে বাধা দেয়।
এই প্রোটিন রক্তে শ্বেত রক্তকণিকার অস্বাভাবিকতাকে বাড়িয়ে দেয়। তাই, একে প্রতিহত করতে পারলে সমস্যা অনেকটা কমে আসার সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসক এক্ষেত্রে বসুটিনিব, ডাসাটিনিব, ইমাটিনিব, পোনাটিনিব ইত্যাদি টিকেআই ব্যবহার করতে পারেন এক্ষেত্রে। ৩ থেকে ৬ মাসের এই প্রক্রিয়ায় যদি আপনার শরীর থেকে শ্বেত কণিকা অতিরিক্ত তৈরি হওার অস্বাভাবিকতাকে দূর করা সম্ভব হয়, তাহলে খুব সহজে ক্যানসার থেকে মুক্তি পাবেন আপনি।
তবে এ সময় টিকেআই ব্যবহারের কারণে ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, অবসাদ, র্যাশ ইত্যাদিও দেখা দিতে পারে। অনেক সময় এই প্রক্রিয়া আপনার শরীরে কাজ নাও করতে পারে। আদৌ এই পদ্ধতিটি আপনার জন্য কাজ করছে নাকি করছে না সেটা জানার জন্য চিকিৎসক কয়েকবার নানারকম পরীক্ষা করতে পারেন। এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমেই নিজের সুস্থতা ও পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন আপনি।
যদি এই প্রক্রিয়া কাজ না করে?
হতেই পারে যে, আপনার শরীর টিকেআই নিয়ে সুস্থ হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে, আপনার চিকিৎসক সাইনিরবোর মতো ওষুধের দিকে চলে যেতে পারেন। এটি শরীরে ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধি পাওয়াকে কমিয়ে দেয়। এছাড়াও ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়া সারিয়ে তুলতে ইমিউনোথেরাপি, কেমোথেরাপি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
ক্যানসারের ক্ষেত্রে পরবর্তী ধাপগুলো সবসময় কিছুটা বেশি কঠিন ও কষ্টকর হয়। তবে দ্রুত ব্যাপারটি সম্পর্কে ধারণা পেলে প্রাথমিক চিকিৎসাতে ওষুধ ব্যবহার করেই ক্রনিক মায়েলোজেনাস লিউকেমিয়া থেকে মুক্ত হতে পারবেন আপনি।
তাই, দেরি না করে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন এবং আপনার এমন কোনো সমস্যা আছে কিনা তা নিয়ে নিশ্চিত হন।
লেখক- মায়ো ক্লিনিক, ওয়েবএমডি ইত্যাদি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড