সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
স্ট্রোক শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও কম-বেশি হয়তো আপনার জানা আছে। কিন্তু, স্ট্রোকের চিকিৎসা কিন্তু কেবল হাসপাতালের সময়টুকুই নয়। সুস্থ হতে হলে পরিবার এবং চারপাশের মানুষকে আক্রান্ত ব্যক্তিটিকে সাহায্য করতে হবে হাসপাতাল থেকে চলে আসার পরেও। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিন এখুনি-
স্ট্রোক কী?
বর্তমানে স্ট্রোক বেশ অহরহ ঘটছে। আর এর পেছনে আছে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন না হওয়া। রক্তনালীর সমস্যা, রক্তপ্রবাহের পথে বাধা ইত্যাদির কারণে এমনটা হতে পারে। এতে করে মস্তিষ্কের একটি অংশ ভোঁতা এবং দুর্বল হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে, আক্রান্ত স্থানের পরিমাণ এবং স্থানের উপরে নির্ভর করে যে রোগী কত দ্রুত সুস্থ হবেন। চিকিৎসার পদ্ধতিটাও রোগের অবস্থার ওপরে নির্ভর করে। ঠিক যে কারণে রক্ত সঞ্চালন ঠিকভাবে হচ্ছে না, সেটার সমাধান করার চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা।
স্ট্রোক রিহ্যাবিলিটেশন কী?
স্ট্রোক হওয়ার পর আক্রান্ত ব্যক্তির স্বাভাবিক কার্যক্রমগুলোকে ফিরিয়ে আনতে যে পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়, সেটিকে স্ট্রোক রিহ্যাবিলিটেশন বলে। স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সাধারণত এই কাজটি শুরু করে দেওয়া হয়। তবে অনেকসময় রোগীর মানসিক স্থিরতার ওপর নির্ভর করে এই প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে নেওয়া হয়।
স্ট্রোক রিহ্যাবিলিটেশনে দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজগুলোর সাথেই রোগীকে আবার অভ্যস্ত করা হয়। এটি হাসপাতাল, অ্যাকিউট কেয়ার ইউনিট, দীর্ঘমেয়াদী কোনো স্থান, বিশেষায়িত রিহ্যাবিলিটেশন ওয়ার্ড ইত্যাদি স্থানে এই স্ট্রোক রিহ্যাবিলিটেশন করা হতে পারে।
স্ট্রোক সাইকোথেরাপি রিহ্যাবিলিটেশন-
স্ট্রোক পরবর্তী সাইকোথেরাপি রিহ্যাবিলিটেশনে আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক গতিকে ঠিকঠাক করে আনা হয়। তার চলাফেরা, ভারসাম্য বজায় রাখা, শরীরের নানান অংশের সামঞ্জস্যতা ইত্যাদি এর মধ্যে পড়ে। এখানে পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করার জন্য চিকিৎসকেরা নানারকম যন্ত্রপাতি, পদ্ধতি ও প্রশিক্ষণ ব্যবহার করেন।
জেনারেল স্ট্রোক রিহ্যাব-
তবে শুধু শারীরিক গতির জন্যই নয়, স্ট্রোকের পরবর্তী সময়ে আরও অনেক কিছুর জন্যেই রিহ্যাবিলিটেশনের প্রয়োজন পড়ে। এর মধ্যে আছে-
- কথা বলা, খাবার খাওয়া, ভাষাগুলোকে ঠিকঠাক করা ইত্যাদির মতো ব্যাপার। এজন্য দরকার পড়ে স্পিচ থেরাপি এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ার। - দৈনন্দিন জীবনের খুব সাধারণ কার্যক্রম, এই যেমন- গোসল করা, খাবার তৈরি করা, কাপড় পরিধান করা ইত্যাদির জন্য জেনারেল স্ট্রোক রিহ্যাবের দরকার হয়।
স্ট্রোক রিহ্যাবিলিটেশন কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
স্ট্রোকের পরবর্তী প্রভাব কখনোই আগে থেকে জানা সম্ভব নয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্ট্রোকের পর দীর্ঘমেয়াদী রিহ্যাবিলিটেশনের প্রয়োজন পরে। এক্ষেত্রে, পরিবার খুব বড় ভূমিকা রাখে। ব্যক্তির মস্তিষ্কের নিউরনের মধ্যকার স্বাভাবিক সংযোগ তৈরি করার জন্যই এর দরকার হয়।
এ জন্য চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধও নিয়মিত সেবন করা প্রয়োজন। সাথে পরিবারের মানুষগুলোর সহায়তায় নিয়মিত স্বাভাবিক কার্যক্রমের অনুশীলন ব্যাপারটিকে আরও সহজ করে দেয়। সাঁতার কাটা, দৈনন্দিন কাজ করা, আনন্দদায়ক কাজ করা, মস্তিষ্কের নানারকম ব্যায়াম ইত্যাদি এ সময় আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য ঘরে বসে প্রয়োগ করতে পারেন।
স্ট্রোক রিহ্যাবিলিটেশন কার্যকরী। তবে, স্ট্রোকের পরিমাণ ও অবস্থার উপরে নির্ভর করে যে এটি কত দ্রুত এবং কত বেশি কার্যকরী হবে। এ ছাড়া-
● কত দ্রুত রিহ্যাবিলিটেশন শুরু করা হয়েছে ● মস্তিষ্কে কতটা ক্ষতি হয়েছে ● স্ট্রোকের পর মানসিকভাবে আক্রান্ত ব্যক্তি কতটা ইতিবাচক আছেন ● রোগীর বয়স এবং শারীরিক অবস্থা ইত্যাদির ওপরে নির্ভর করে যে, স্ট্রোক রিহ্যাবিলিটেশন কতটা কার্যকরী হবে।
স্ট্রোক নিয়ে চিন্তিত? তাহলে স্ট্রোকের পরবর্তী চিকিৎসাগুলো সম্পর্কে না ভেবে আগে থেকেই এটি প্রতিরোধ করার চেষ্টা করুন। আপনার যদি মাথা ঘোরা, দৃষ্টিশক্তি কমে আসা, জ্ঞান হারানো, শরীরে অবশ হওয়ার অনুভূতি ও দুর্বলতা দেখা দেওয়া, কথা ও স্বাভাবিক কাজ করতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় তবে সতর্ক হোন এবং চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
মূল লেখক- আইজ্যাক ওকুমুরা ট্যান, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড