সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
অতিরিক্ত কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্য খারাপ, সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কেন এটি খারাপ? আমাদের শরীরের জন্য কী কী ক্ষতিকর ব্যাপার তৈরি করে এটি, তা কি জানেন? জানতে এক নজরে এই লেখাটি পড়ে নিন-
কোলেস্টেরল কী?
কোলেস্টেরল মোমের মতো এক ধরনের ফ্যাটি পদার্থ। এটি আমাদের রক্তে পাওয়া যায়। মূলত, কোষ তৈরি করতে, হরমোন উৎপন্ন করতে এবং ভিটামিন ‘ডি’ উৎপাদনে এটি প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের শরীরে তৈরি হয়। তবে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মোট দুই ধরনের কোলেস্টেরল আছে। একটি হলো, হাই-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন বা উপকারী কোলেস্টেরল। আর অন্যটি হলো, লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন বা অপকারী কোলেস্টেরল। এলডিএল কোলেস্টেরল রক্তের বিদ্যমান থাকে এবং সেখানেই জমাট বাঁধে। যেটা শরীরের জন্য পরবর্তীতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে, এইচডিএল কোলেস্টেরল যকৃতে ফিরে যায় এবং রক্তে জমাট বাঁধে না।
রক্তে কোলেস্টেরল জমাট বাধলে রক্তনালী সরু হয়ে যায়। রক্ত চলাচলে সমস্যা দেখা দেয় এবং অ্যাথেরোসক্লেরোসিসের মতো সমস্যা তৈরি হয়। অনেকসময় এর ফলে রক্ত জমাট বেঁধে যায় এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো সমস্যা তৈরি হয়। একইসাথে যদি ট্রাইগ্লেসেরিডস জমাট বাঁধা তৈরি করে সেটা আরো বেশি সমস্যা তৈরি করে। ট্রাইগ্লেসেরিড হলো সেই ফ্যাট যেগুলো শরীর ব্যবহার করে না। ফলে সেগুলো রক্তে গিয়ে জমাট বাঁধে। অতিরিক্ত ট্রাইগ্লেসেরিড উৎপন্ন হলে সেটি হৃদপিণ্ডের সুস্থতা নষ্ট করে।
কোলেস্টেরল কতটা বাড়লে আমার চিকিৎসকের সাথে কথা বলা উচিত?
দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, কোলেস্টেরলের কোনো লক্ষণ শরীর সেভাবে দেয় না। এর অর্থ, আপনার চিকিৎসক অন্যকোনো পরীক্ষার মাধ্যমে এর খোঁজ পেতে পারেন। তবে স্বাভাবিকভাবে কোলেস্টেরলের খোঁজ পাওয়াটা কঠিন। সেক্ষেত্রে, আপনার বয়স ৪০+ হলে নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
প্রতি তিন বছরে অন্তত একবার পরীক্ষা করুন। আর যদি আপনার বয়স ৪০-এর নিচে হয় এবং আপনার হৃদপিণ্ডে সমস্যা থেকে থাকে, সেক্ষেত্রেও এই পরীক্ষা নিয়মিতভাবে করুন। এছাড়াও যদি-
● আপনি ধূমপান করে থাকেন ● আপনার ডায়াবেটিস থাকে ● উচ্চ রক্তচাপ থাকে ● আপনার পরিবারে যদি এর আগে কারো হৃদপিণ্ডের সমস্যা বা অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকে
সেক্ষেত্রেও চিকিৎসকের সাথে কথা বলে আগে থেকেই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে পারেন।
এক্ষেত্রে-
প্রতি ডিসিলিটার অব ব্লাডে ১০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকাটাই স্বাভাবিক। এর মাত্রা ১০০-১২৯ মিলিগ্রাম হলে সেটা কিছুটা বেশি হলেও ক্ষতিকারক নয়। পরিমাণ ১৩০-১৫৯ মিলিগ্রাম হলে সেটাকে প্রায় ঝুঁকিপূর্ণ, ১৬০-১৮৯ মিলিগ্রাম হলে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৯০ মিলিগ্রামের বেশি হলে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ- এমনটাই ধরা হয়। আপনার কোলেস্টেরলের অবস্থা যদি প্রায় ঝুঁকিপূর্ণতে চলে যায় তাহলেই চিকিৎসকের সাথে কথা বলে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
প্রাকৃতিকভাবেই রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমানোর কোন উপায় আছে?
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য দৈনন্দিন জীবনপদ্ধতি পরিবর্তন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। খাবার, ওজন ও শরীরচর্চা- এই তিনটি দিকেই পর্যাপ্ত নজর রাখতে হবে। সপ্তাহে মোট মিলিয়ে ১৩০-১৫০ মিনিট শরীরচর্চা করলে আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে আসবে।
এছাড়া খাবারের ক্ষেত্রে, অপাস্তুরিত খাবার, শাক-সব্জি, শস্য, চিনি, মাছ, বাদাম ইত্যাদি আপনাকে রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। এতে করে এলডিএল প্রায় শতকরা ১৫% কমে আসবে। ঘি, চর্বিযুক্ত খাবার, মাংস দিয়ে তৈরি কিছু খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন। আর অতিরিক্ত সুগারের কারণে ট্রাইগ্লেসেরিডস হলে চিনিজাতীয় খাবারও কম গ্রহণ করুন। ফলে সিম্পল সুগার থাকে। তবে পুষ্টির কথা মাথায় রেখে এটি কিছু পরিমাণে গ্রহণ করুন।
কোলেস্টেরল খুব সহজেই এড়িয়ে চলতে পারেন আপনি। তাই বড় রকমের কোনো সমস্যা তৈরি হওয়ার আগেই এ ব্যাপারে সচেতনতা অবলম্বন করুন। এতে করে সুস্থ থাকবেন আপনিই।
মূল লেখক- ডক্টর শ্যারন গোহ, পার্কওয়ে শ্যান্টন।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড