সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
ঠান্ডা-কাশি হলে কফের মতো ছোটখাটো সমস্যা দেখা দিতেই পারে। তবে, সব রকমের কফ কিন্তু হেলাফেলা করার মতো নয়। আবার, একটু সচেতন থাকলেই বিরক্তিকর এই সমস্যাটি থেকে কিন্তু দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে কফকে সারিয়ে তোলার জন্য প্রয়োজন এর সম্পর্কে যথাযথ ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জেনে নেওয়া।
আপনার এই ছোট্ট সমস্যাটি হয়তো এমনিতেই সেরে যাবে। তবে সেটা থেকে দ্রুত পিছু ছাড়ানোর জন্য একবার চোখ বুলিয়ে নিন এই লেখাটির ওপর-
কফ কেন হয়?
কফ কিন্তু কোনো সমস্যা নয়, বরং এটি আপনার শারীরিক কোনো সমস্যার একটি লক্ষণ। আটি আমাদের শরীরের বাতাস প্রবেশের রাস্তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজ করে থাকে। তাই, শরীরে কোনো সংক্রমণ বা প্রদাহ দেখা দিলেই কফের মতো একটি ব্যাপার দেখা দেয়। এটি নিশ্চিত করে যে, মানুষ ঠিকঠাকভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। কিন্তু কিছুক্ষেত্রে কফের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে আমাদের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে পড়ে। কফ হওয়ার পেছনে থাকা কিছু কারণের সাথে পরিচিত হয়ে নিন।
আপার রেস্পিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন
শরীরে কোন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ দেখা দিলে কফ তৈরি হয়। এটি সপ্তাহব্যাপী শরীরে অবস্থান করে। মূলত, আমাদের কফ হওয়ার পেছনে সবচাইতে এবশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে আপার রেস্পিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন। এই সমস্যার লক্ষণগুলো সংক্রমণের ২-৩ দিনের মধ্যেই প্রকাশ পায়, এবং শিশুদের বেলায় ৬-৭ দিন এবং প্রাপ্তবয়স্কদের বেলায় ১৩-১৪ দিন স্থায়ী হয়। এক্ষেত্রে কফের সাথে সাথে জ্বর, সর্দি ইত্যাদি লক্ষণগুলোও দেখা দেয়। এমনটা হলে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন, বিশ্রাম নিন এবং নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন। আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন।
পোঁস্ট ন্যাজাল ড্রিপ
অনেক সময় আমাদের শরীরে অত্যাধিক পরিমাণ সর্দি উৎপন্ন হলে সেটা চারপাশে ছড়িয়ে যায়। আর এভাবেই এটি কফে পরিণত হয়। অ্যালার্জি ও ভাইরাল সংক্রমণের কারণে এমনটা হতে পারে। এই রকমের কফ শুষ্ক ও ভেজা- দুটোই হতে পারে। বিশেষ করে রাতে এটি বেশি সমস্যা তৈরি করে। এমনটা হলে চিকিৎসক আপনাকে অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করার পরামর্শ দিতে পারেন। তবে এছাড়াও সমস্যাটি থেকে দূরে থাকতে আপনি স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।
হাঁপানি
কফের পেছনে অন্যতম বড় কারণ হিসেবে হাঁপানি কাজ করে। এটি শ্বাসনালীকে বন্ধ করে দিয়ে ফুসফুসে বাতাস পৌঁছতে বাঁধা দেয়। ফুলের রেণু, ধুলোবালি, পোষা প্রাণীর লোম ইত্যাদি এমন অনেক কারণেই হাঁপানি হতে পারে। হাঁপানির কারণে হওয়া কফের সাথে নিঃশ্বাস আটকে যাওয়া এবং হাঁচি দেখা দেয়। ইনহেলার ও স্টেরয়েডের মাধ্যমে হাঁপানি থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
গ্যাস্ট্রিক
আমাদের পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক উৎপন্ন হলে সেখান থেকে এসিড শ্বাসনালীতে গিয়ে প্রদাহ তৈরি করে। বিশেষ করে, রাতে এই সমস্যাটি আরো বেড়ে যায়। এমনটা হলে চিকিৎসকের সাথে দেখা করে নিশ্চিত হয়ে নিন যে, আপনার ঠিক কেন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হচ্ছে। এতে করে দ্রুত এই সমস্যা থেকে দূরে থাকা আপনার পক্ষে সম্ভব হবে।
সিওপিডি বা ক্রোমিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ
ধূমপানের কারণেই সাধারণত সিওপিডি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং শ্বাস নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। কফে যদি প্রচুর পরিমাণ লালা থাকে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, হাঁচি আস- তাহলে চিকিৎসকের সাথে দ্রুত এ ব্যাপারে পরামর্শ করুন এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিন।
ওষুধ সেবন
কিছু ওষুধ, বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের কারণে কফ তৈরি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসময় শুষ্ক কফ উৎপন্ন হয় বেশি। ফলে শ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দেয় ও কাশি হয়। ওষুধ পাল্টে নিলেই এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
তবে শুধু এগুলোই নয়, নিউমোনিয়া, হুপিং কফের মতো খুব পরিচিত কিছু কারণে সচরাচর কফজনিত সমস্যায় ভুগি আমরা। একটু সচেতন থাকুন, স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করুন। দেখবেন, আপনার কফের সমস্যা খুব দ্রুতই সেরে গিয়েছে।
মূল লেখক- ডক্টর ভিকেনশরন ভি পারানজোথি, পার্কওয়ে হসপিটাল।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড