সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
মেরুদণ্ডের ওপেন সার্জারির ব্যাপারে সবাই মোটামুটি জানেন। এর সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কেও তাই আমাদের ধারণা রয়েছে। তবে, অনেকেই চান না যে, তাদের শরীরে অপারেশনের দাগ থাকুক এবং পরবর্তীতে এই সার্জারি কোনো সমস্যা তৈরি করুক। আর এজন্যই চিকিৎসাশাস্ত্রে ‘মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি’ শুরু করা হয়েছে। কী এই মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি? শুনেই নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে, খুব অল্প পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সাথে এই সার্জারি করা হয়। মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি করার আগে চলুন, এ নিয়ে কিছু জেনে নেওয়া যাক। মিলিমালি ইনভেসিভ সার্জারি এবং ওপেন সার্জারি : পার্থক্য কী?
মেরুদণ্ডের ওপেন সার্জারি বলতে মূলত পিঠে কেটে, পেশীগুলোকে সরিয়ে মেরুদণ্ডের কাছাকাছি পৌঁছনোকে বোঝায়। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসকেরা শরীরের বাকি অংশগুলোর উপরে কোনো প্রভাব না ফেলে মেরুদণ্ডের নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান, এই যেমন- সরে যাওয়া ডিস্ক ঠিক করা, স্ক্রু বসানো ইত্যাদি কাজগুলোকে করে থাকেন। সার্জারি সফল হলে কাটা অংশটিকে জোড়া দিয়ে দেওয়া হয়, এবং জখম ঠিক হতে কয়েক মাস সময় নেয়।
অন্যদিকে, মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারির ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে থাকেন। ৩ডি ইমেজ, ফ্লুরোস্কোপি, ক্যাট স্ক্যান ইত্যাদি করার মাধ্যমে পুরো ব্যাপারটি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে তারপর সার্জারির দিকে যান তারা। একদম সঠিক স্থানে খুব অল্প কাটার মাধ্যমে সার্জারি শুরু করেন তারা। এরপর বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে আক্রান্ত স্থানের চারপাশে পেশীগুলোকে সরিয়ে সার্জারি করা হয়। ওপেন হার্ট সার্জারিতে এসব পেশী অনেক বেশি আক্রান্ত হয়। সার্জারি শেষে জখম দ্রুত ঠিক হওয়ার জন্য হালকা সেলাই করা হয়।
মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারিতে চিকিৎসক প্রযুক্তির ব্যবহার করে ঠিক যতটা দরকার ততটাই করতে পারেন। বাড়তি কোনো ঝামেলা হয়। ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এতে করে রক্তপাত কম হয়। রোগী খুব সহজেই সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
কোন সার্জারিটি বেশি ভালো?
আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি, নাকি ওপেন সার্জারি- মেরুদণ্ডের জন্য কোনটা বেশি ভালো? এক্ষেত্রে, মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারিকেই সেরা মনে করা হয়। কারণ, এতে করে খুব কম সময়ের মধ্যেই সেরে ওঠা যায়। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা হলেও এতে ত্বকে দাগ পড়ে কম। ওপেন সার্জারিতে যেখানে ৫-৬ ইঞ্চি দাগ পড়ে, সেক্ষেত্রে মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারিতে মাত্র ২ ইঞ্চি দাগ দেখা যায়।
তবে ব্যাপারটি শুধু দাগ নিয়ে নয়। মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারির মাধ্যমে শরীরের পেশীদের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়। রোগী দ্রুত সুস্থও হয়ে ওঠেন এই সার্জারির পর। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অন্যান্য মানুষের মতো সাধারণ সব কাজ করতে পারেন তিনি। এমনকি, ২০১৩ সালে করা এক পরিসংখ্যান অনুসারে মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি ব্যবহার করেছেন এমন রোগীদের-
● অন্যদের চাইতে ৩ গুন কম রক্তপাত হয় ● সার্জারির পর অন্যদের চাইতে ৪ গুন কম পেইনকিলার গ্রহন করতে হয় ● অন্যদের তুলনায় অর্ধেক সময় কম বিছানায় কাটাতে হয় ● অন্যদের চাইতে কম সময় হাসপাতালে কাটাতে হয়
শুধু তাই নয়, এই গবেষণায় দেখা যায় যে, মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি করেছেন এমন রোগীদের শরীরে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা ওপেন সার্জারি রোগীদের চাইতে কম থাকে।
মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারির কোনো নেতিবাচক দিক নেই?
ওপেন সার্জারির চাইতে মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারিতে নেতিবাচক কোনো প্রভাবের সম্ভাবনা কম থাকে। তবে, এটি করার জন্য খুব ভালো একজন চিকিৎসকের প্রয়োজন হবে আপনার। আর সেটা পাওয়াই অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে যায়। অন্যদিকে, তুলনামূলকভাবে নতুন পদ্ধতি হওয়ায় এর মাধ্যমে মেরুদণ্ডের সমস্ত সমস্যা সম্পর্কেও জানাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে হ্যাঁ, চিকিৎসকেরা মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি নিয়ে আরো বেশি দক্ষ ও সচেতন হয়ে উঠছেন। কাজ করছে। তাই, আশা করা যায় যে, খুব দ্রুতই হাতের কাছে এই সার্জারির সুবিধা পাবেন আপনি।
মূল লেখক- ডক্টর ইউ ওয়েই মুন, গ্লেনাগ্লেস হসপিটাল।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড