সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
জাপান ও থাইল্যান্ডসহ বেশ কিছু দেশে জনপ্রিয় খাবার হিসেবে পরিচিত ইউশেং। কিন্তু এই ইউশেং-এই ট্যাপঅর্ম বা ফিতাকৃমি নামে এক রকমের পরজীবী পাওয়া যায়। চিন্তার ব্যাপার হলো, শুধু ইউশেং নয়, মাছ এবং মাছ দিয়ে তৈরি সবগুলো খাবারেই কমবেশি জীবাণু পাওয়া যায়। যদিও মাছে ফিতাকৃমির মতো কিছু খুব কম পাওয়া যায়।
তবে এছাড়াও নানারকম পরজীবী বাস করে আমাদের পরিচিত মাছগুলোর মধ্যে। মাছ খেতে ভালোবাসেন? আপনার খাবারে এমন জীবাণুর আশঙ্কা করছেন আপনিও? তাহলে কি মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন আপনি? চলুন, মাছে থাকা এমন সব পরজীবীদের নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-
খাবার পরিষ্কার আছে তো?
চীন বা জাপানে মানুষ তুলনামূলক বেশি কাঁচা খাবার এবং সেদ্ধ খাবার খেয়ে থাকে। এটি আমাদের শরীরের জন্য ভালো। তবে মজার ব্যাপার হলো, চীন ও জাপানে অন্যান্য দেশের তুলনায় পেটের সমস্যায় ভোগার পরিমাণটাও বেশি।
আপনার খাবারে যে পরজীবী কোনো জীবাণু নেই তা নিশ্চিত করার জন্য এভিএর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়েছে এমন খাবার গ্রহণ করুন। তবে, হতাশার ব্যাপার হলো, চীনে বেশিরভাগ স্থানেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় না। খাবার আগে তাই খাবার ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়েছে কি না তা জেনে নিন।
পরজীবী এসব জীবাণু কি ক্ষতিকর?
আপনার যদি ফিতাকৃমি হয়ে থাকে, তাহলে আপনি খুব একটা সমস্যা বোধ করবেন না। ফিতাকৃমির কোনো লক্ষণ থাকে না। দূর্বল বোধ করা, বমিভাব, সর্দি, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। মলের সাথে কৃমির কিছুটা অংশ নির্গত হতে পারে। তবে ওষুধ সেবন করলেই এই সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
ফিতাকৃমি বাদেও এমন অনেক জীবাণু আছে যেগুলো আপনার জন্য গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে। এতে করে মেনিঙ্গিটিস পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থায় আমাদের মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়ে পড়ে সাথে থাকে জ্বর, বমি ও অন্যান্য লক্ষণ। এমন সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে কথা বলা প্রয়োজন।
আনিসাকিয়াসিস : অপরিচিত এক পরজীবী-
আমরা মূলত ফিতাকৃমির কথাই সবচাইতে বেশি জানলেও, বাস্তবে মানুষের মধ্যে ফিতাকৃমির চাইতে সবচাইতে বেশি থাকে আনিসাকিয়াসিস নামক এক রকমের পরজীবী। আমাদের খাদ্যনালী, অন্ত্র এবং পাকস্থলীর গায়ে এই পরজীবীগুলো আটকে থাকে। কম রান্না করা মাছের মাধ্যমে এই জীবাণুগুলো আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। আপনি এন্ডোসকপির মাধ্যমে এই সমস্যাটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন।
মাছ না খেয়েও আক্রান্ত হতে পারেন-
আপনি যদি ভেবে থাকেন যে, মাছ না খেলেই জীবাণু আর পরজীবী থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন, তাহলে আপনাকেই বলছি। ধারণাটি একেবারেই সত্যি নয়। মাছ ছোঁয়ার মাধ্যমেও এই সমস্যাগুলো হতে পারে। তবে আপনি যদি কিছু অ্যান্টিবায়োটিকস ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব।
পরজীবী চেনার উপায় নেই-
উঁহু, নেই। পরজীবী জীবাণুগুলো এত বেশি ছোট হয় যে, সেগুলোর জন্য আলাদাভাবে মাছে কোনো গন্ধ তৈরি হয় না। মাছের আকৃতিতেও পরিবর্তন আসে না। তাই, অন্যান্য মাছ থেকে আক্রান্ত মাছগুলোকে আলাদা করার কোনো উপায়ও নেই।
ভয় পেয়ে গেলেন? ভয়ের কিছুই নেই। আপনার মধ্যে এই সমস্যা দেখা দিলে এবং চিকিৎসকের সাথে দ্রুত কথা বললে খুব সহজেই পরজীবীর এই সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব হবে। ব্যাকটেরিয়ায় তুলনায় মানুষের শরীরে মাছ গ্রহণের মাধ্যমে তৈরি হওয়া এমন পরজীবী অনেক কম পরিমাণে থাকে।
এই সমস্যাটি থেকে সহজেই দূরে থাকতে খাওয়ার আগে ভালোভাবে মাছ রান্না করে নেওয়াটাই যথেষ্ট। একসাথে বেশি মাছ খাবেন না। আর আপনার শরীর খুব বেশি দূর্বল হলে মাছ খাওয়া থেকেই বিরত থাকতে পারেন আপনি। তবে, যেটাই হোক না কেন, সচেতন থাকুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান, সুস্থ থাকুন।
মূল লেখক- ডক্টর লিওং হো নাম, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড