সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বা কোনোকিছু ভুলে যাওয়া খুব একটা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। মানুষ অনেক কিছুই ভুলে যায়। বিশেষ করে বয়সের সাথে এই সমস্যাটি আরও বাড়তে থাকে। তবে, এটি যেমন একদিন দিয়ে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্বাভাবিক, তেমনি এটি ডিমেনশিয়ার মতো বড় সমস্যার ফলাফলও হতে পারে।
বর্তমানে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত রোগীর পরিমাণ অনেক বেশি। যেটির সংখ্যা ২০২০ সালের শেষে ১,৮৭,০০০ জনে গিয়ে পৌঁছাতে পারে। আপনি কি ইদানিং অনেক কিছুই ভুলে যাচ্ছেন? বয়স নাকি ডিমেনশিয়া- আপনার ভুলে যাওয়ার পেছনে কোন কারণটি কাজ করছে? চলুন, দেখে নেওয়া যাক!
আপনি কি স্মৃতিহীনতায় ভুগছেন?
ডিমেনশিয়ার কারণে স্মৃতিশক্তি কমে যেতেই পারে। এই সমস্যাটির আরও বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হচ্ছে- কথা বলতে সমস্যা হওয়া, পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে না পারা, কোন কাজ শুরু করলে শেষ করতে না পারা, পরিকল্পনার সাথে তাল মেলাতে না পারা, ব্যবহার ও ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন ইত্যাদি। তবে আপনি হুট করেই আপনার ডিমেনশয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবেন না।
কারণ, এই একই সমস্যাগুলো হতাশা, উদ্বিগ্নতা, ঘুমাতে না পারা, পারকিন্সন্স ডিজিজ ইত্যাদির কারণেও হতে পারে। পুষ্টিহীনতা এবং হরমোনের সমস্যার কারণেও এই সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। আপনার ঠিক কোন সমস্যাটি হয়েছে তা সঠিকভাবে জানার জন্য চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। রক্ত পরীক্ষা করার মাধ্যমেই প্রশ্নটির উত্তর জেনে যাওয়া সম্ভব। তাই, আপনার ঠিক কোন সমস্যাটি আছে সেটা জানতেও খুব বেশি বেগ পেতে হবে না আপনাকে।
সমস্যার কারণ পরীক্ষা করার আরও কিছু উপায়-
মস্তিষ্কের স্ক্যান করার মাধ্যমে আপনার সমস্যার কারণ বের করা সম্ভব। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মস্তিষ্কে কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে কিনা তা জানার জন্য স্ক্যান করা হয়। মস্তিষ্কের উপরিভাগে থাকা রক্তের কারণে ডিমেনশিয়ার লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে। মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকেলসের আকার বৃদ্ধি পেলেও কথা বলতে, চলাফেরা করতে সমস্যা দেখা দেয়। সাথে থাকে ভুলে যাওয়ার সমস্যা।
তবে, আপনার যে সমস্যাটিই থাকুক না কেন, সেটা সঠিকভাবে খুঁজে বের করা অসম্ভব প্রয়োজনীয়। কারণ, এর উপরেই নির্ভর করে যে, ঠিক কোন চিকিৎসাটি আপনার জন্য কার্যকরী হবে। কখনো কোনো কারণ ছাড়া, এমনিতেই এই সমস্যাটি দেখা দিলেও, শারীরিক অন্য কোনো সমস্যার প্রভাবেও ডিমেনশিয়া হতে পারে। এই যেমন- স্ট্রোক করার ফলে অনেকের ভাসকুলার ডিমেনশিয়া হতে দেখা যায়।
ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিহীনতার সম্ভাব্য চিকিৎসা কী?
ডিমেনশিয়ার লক্ষণগুলোকে কমিয়ে আনতে বা এর চিকিৎসায় সাধারণত কোলিনেসটেরাজ ইনহিবিটরস এবং মেমান্টিন পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয়। এতে করে ভুলে যাওয়ার প্রভাব কিছুটা হলেও কমানো যায়। শরীরচর্চা এক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো করে তুলতে পারে। নিয়মিত মানুষের সাথে কথা বলা, খেলাধুলা করা- ইত্যাদি এসময় মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ডিমেনশিয়ার সময় একে অন্যের সাথে স্বাভাবিক কথাবার্তা চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটু একটু করে আক্রান্ত ব্যক্তি আরও বেশি করে ভুলে যেতে থাকেন সবকিছু। আর ব্যাপারটি খারাপ থেকে আরও বেশি খারাপের দিকে চলে যায়। ফলে একটা সময় পুরো ব্যাপারটি সবার জন্য হতাশার হয়ে পড়ে। তবে, তার মানে এই নয় যে আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটির ব্যাপারে আশা ছেড়ে দেবেন। তাই, চেষ্টা করুন তাকে ভালো রাখতে। নিজে ভালো থাকতে।
চিকিৎসাশাস্ত্র এখনও পর্যন্ত স্মৃতিহীনতা বা ডিমেনশিয়ার ব্যাপারে খুব ভালো করে কোন পরীক্ষা চালাতে সক্ষম হয়নি। সফলতা অনেক পরের ব্যাপার, কেন ডিমেনশিয়া হচ্ছে সেটাও বুঝতে পারা যায়নি এখনও পুরোপুরি। তবে চেষ্টা চলছে। স্মৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমন একটা দিন হয়তো খুব দ্রুতই আসবে, যখন ডিমেনশিয়ারও চিকিৎসা খুঁজে পাওয়া যাবে। অপেক্ষাটা সেই দিনের জন্যই।
সূত্র- মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড