সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুসারে, পুরো পৃথিবীতে গর্ভবতী নারীদের মধ্যে শতকরা ১০-২০ শতাংশই গর্ভপাতের শিকার হন। সংখ্যাটি কিন্তু খুব একটা কম নয়। তাই, আপনি যদি সন্তান নিতে চান এবং সুস্থভাবে সন্তানের জন্ম দিতে চান, সেক্ষেত্রে গর্ভপাত নিয়ে আপনার সচেতন থাকা উচিত।
সাধারণত, গর্ভধারণের তিন মাস পর গর্ভপাতের সম্ভাবনা বেশি থাকে। অনেকে ভেবে থাকেন যে, পরবর্তীতে গর্ভপাত হওয়ার চাইতে প্রাথমিক পর্যায়ে গর্ভপাত হওয়াটা কম কষ্টকর। বাস্তবে, ব্যাপারটি কখনোই এভাবে তুলনা করে হিসেব করা যায় না।
গর্ভপাত যে পর্যায়েই হোক না কেন, সেটি একজন নারীর জন্য শারীরিক ও মানসিক- উভয়ভাবেই কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। চলুন, আজ তাই গর্ভপাত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যাপার জেনে নেওয়া যাক-
স্বতস্ফুর্ত বা প্রাকৃতিক গর্ভপাত-
গর্ভপাতকে সাধারণত স্বতস্ফুর্ত বা প্রাকৃতিক বলেই মনে করা হয়। কারণ, এক্ষেত্রে মানুষের করার খুব বেশি কিছু থাকে না। গর্ভপাত নিজ থেকেই ঘটে থাকে। এসময় গর্ভপাতের ক্ষেত্রে-
● তলপেট বা পিঠে ব্যথা ● রক্তপাত ● পেটে কাপুনি হওয়া ● জ্ঞান হারানো বা মাথা ঘুরে ওঠা ● জ্বর ● টিস্যু বের হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়
গর্ভপাতের প্রকারভেদ-
গর্ভপাত বেশ কয়েক রকমের হতে পারে।
১। যে ধরণের গর্ভপাতে জরায়ু থেকে পুরোটা টস্যু বের করে আনা যায়, সেটাকে কমপ্লিট মিসক্যারেজ বলা হয়।
২। গর্ভপাত হওয়ার আগে যদি প্রচুর রক্তপাত হয় এবং ব্যথাবোধ হয়, সেক্ষেত্রে সেটাকে থ্রেটেন্ড মিসক্যারেজ বলে।
৩। পরবর্তী অবস্থাকে ব্লাইটেড ওভাম বলা হয়, যেক্ষেত্রে ডিম্বানু ঠিক করে প্রকাশিত হতে পারে না।
৪। আর সর্বশেষ গর্ভপাতকে রিকারেন্ট মিসক্যারেজ বলে। এক্ষেত্রে একজন নারী একাধিকবার গর্ভপাতের শিকার হন।
অনেকে এক্টোপিক গর্ভধারণকে এই তালিকায় ফেলে থাকেন। কিন্তু এই ব্যাপারটিকে ঠিক গর্ভপাত বলতে চান না অনেকেই। কারণ, এক্ষেত্রে জরায়ুর ভেতরে ভ্রূণ তৈরি হয় না। এর বাইরে অবস্থান করে এটি। তাই, যেহেতু এই প্রক্রিয়াটিতে ঠিকভাবে গর্ভধারণ হয় না, তাই একে গর্ভপাত বলতেও চান না অনেকে।
মিসড মিসক্যারেজ-
অনেকসময় গর্ভপাত হয়েছে কিনা সেটা বোঝা সম্ভব হয় না। এসময় গর্ভধারণের লক্ষণগুলো স্বাভাবিক থাকে এবং ভ্রণ বড় হওয়া বন্ধ করে দেয়। সেক্ষেত্রে এই গর্ভপাতকে মিসড মিসক্যারেজ বলে। স্ক্যান করা না হলে এই গর্ভপাত সম্পর্কে বোঝা যম্ভব নয়। চিকিৎসকেরা হৃদস্পন্দনের মাধ্যমেও এই গর্ভপাত বুঝতে পারেন না বেশিরভাগ সময়। আশার কথা হচ্ছে এই যে, এ ধরণের গর্ভপাত একবারের বেশি হয় না।
গর্ভধারণের ব্যাপারে জানার আগেই কি গর্ভপাত হওয়া সম্ভব?
হ্যাঁ, সম্ভব। অনেকসময় খুব প্রাথমিক পর্যায়ে, ১২ সপ্তাহের পর গর্ভপাত হয়ে যায়। আর এসময় গর্ভধারণের লক্ষণও পাওয়া যায় না ঠিকভাবে। সেক্ষেত্রে, অনেক নারীই কিছু বোঝার আগেই গর্ভপাত করে ফেলেন। তবে, এমনটা যদি হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে দেখা করুন। গর্ভপাত হয়ে গেলেও আপনার শরীর সুস্থ আছে কিনা তা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্যই এমনটা করা জরুরী।
গর্ভপাতের কারণ কী?
গর্ভপাতের কারণ নির্দিষ্ট নয়। একেক সময় একেকরকম কারণে গর্ভপাত হয়ে থাকে। এই যেমন-
● ভ্রূণের মধ্যে ক্রোমোজোন সংক্রান্ত অস্বাভাবিকতা থাকলে গর্ভপাত হতে পারে। ● আপনার জীবনপদ্ধতি, দৈনন্দিন কোনো সমস্যা বা দূর্ঘটনার কারণে এমনটা হতে পারে। ● অনেকসময় মায়ের শারীরিক কোনো অসুস্থতার কারণেও এমনটা ঘটতে পারে। ● বয়স গর্ভপাতের পেছনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এই কারণগুলো ছাড়াও আরো নানাবিধ কারণেই গর্ভপাত হতে পারে।
গর্ভপাত থেকে দূরে থাকার কোন একটি উপায় নেই। চিকিৎসকের সাথে নিয়মিত কথা বলে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করে এই সম্ভাবনা আপনি কমিয়ে আনতে পারেন। তবে, যদি তারপরেও গর্ভপাত ঘটে থাকে, সেক্ষেত্রে নিজেকে শক্ত করুন। চিকিৎসকের কথা মেনে চলুন। ওষুধ এবং খাবার গ্রহণ করুন নিয়ম মতো। শরীরচর্চা করুন। তাহলে খুব দ্রুত শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন আপনি।
মূল লেখক- ডক্টর লিম মিন ইউ, গ্লেনাগ্লেস হসপিটাল।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড