সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
মনে করুন, হুট করে আপনি জানতে পারলেন যে, আপনার সার্ভিকাল ক্যান্সার হয়েছে। কী করবেন এমন সময়? হুট করে চলে আসা উটকো এই ঝামেলাটি নিমিষেই আপনার জীবন ও ভবিষ্যত সব পরিকল্পনাকে ভেঙে দিতে পারে। তাই, জরায়ুর সুরক্ষায় এমন কিছু হওয়ার আগেই সেটা নিয়ে সতর্ক থাকা ভালো।
জরায়ুর এমন সমস্যা সম্পর্কে জানার জন্য বর্তমানে সার্ভিকাল স্ক্রিনিং করতে এইচপিভি টেস্টকেই এগিয়ে রাখেন। এ নিয়ে বিস্তারির জেনে নিন-
সার্ভিকাল ক্যান্সার কী?
সার্ভিক্স হচ্ছে শরীরের মূত্রথলির নিচের অংশটুকু। এই অংশ মূত্রথলিকে যোনিপথের সাথে যুক্ত করে। এখানে বাড়তি কোনো অংশ জন্ম নিলে সেটাকে সার্ভিকাল ক্যান্সার বলা হয়। এটি ধীরে ধীরে মানুষের শরীরের অন্যান্য অংশ, এই যেমন- যোনি, মূত্রথলি, জরায়ু, ফুসফুস ইত্যাদিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই পুরো ব্যাপারটির পেছনেই কারণ হিসেবে কাজ করে এইচপিভি ভাইরাস। এটিই সংক্রমণ তৈরি করে।
এইচপিভি কী?
এইচপিভি হচ্ছে হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস। এই সংক্রমণটি বেশ স্বাভাবিক হলেও এর প্রায় ১০০টিরও বেশি প্রকারভেদ রয়েছে। এই ভাইরাস মানুষের ত্বকে পাওয়া যায়। আবার কিছু রক্ত বা অন্য কোনো মাধ্যমেও একজন মানুষের দেহ থেকে অন্য মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। সব এইচপিভি ভাইরাস ভয়ঙ্কর নয়। তবে কিছু ভাইরাস রয়েছে, যেগুলো ক্যান্সার হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব রাখে।
এইচপিভি ভাইরাসের লক্ষণ-
সাধারণত এইচপিভি ভাইরাস নিজ থেকে চলে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর কোনো লক্ষণ খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক সময় যৌনাঙ্গের কিছু অংশ বাইরে চলে আসতে পারে। সাথে চুলকানি থাকলেও এক্ষেত্রে ব্যথা থাকবে না। হাতে ও পায়ে যে ভাইরাস দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো ব্যথা উৎপন্ন করে।
এইচপিভির জন্য টিকা নেওয়া কি জরুরি?
হ্যাঁ। কারণ এই ভাইরাস বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যৌন সংস্পর্শের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর প্রায় প্রতিটি নারীই নিজের বিশ বছরের পরপরই এই ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হন। খুব কম ক্যান্সারের টিকাই এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়। আর সেগুলোর মধ্যে এইচপিভি অন্যতম। সার্ভিকাল ক্যান্সারের হাত থেকে বাঁচতে শুধু নারী নয়, পুরুষদেরও এই টিকা নিতে বলা হয়।
৯ বছর বয়সেই সাধারণত টিকা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়। কারণ, এতে করে যৌন কোনো সংস্পর্শে যাওয়ার আগেই মানুষ প্রস্তুত করে ফেলে তার শরীরকে। বাড়তি ঝামেলাও পোহাতে হয় না আর। শতভাগ ক্ষেত্রে এই টিকা কার্যকরীভাবে কাজ করে।
তবে আপনার মধ্যে যদি এইচপিভির লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। এক্ষেত্রে কোলোনোস্কপি করলেই এই সমস্যার ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব হবে।
এইচপিভির চিকিৎসা কী?
আপনার এইচপিভি হয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসক-
১। সাধারণ পদ্ধতি অনুসারে ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ত্বক থেকে ভাইরাস সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিবেন ২। ক্রিয়োথেরাপির মাধ্যমে ভাইরাসকে তরল নাইট্রোজেন দিয়ে জমিয়ে ফেলবেন ৩। ইলেক্ট্রোকটারির মাধ্যমে জীবাণুকে পুড়িয়ে ফেলার পদ্ধতি অনুসরণ করবেন ৪। এসবে কাজ না করে লেজার সার্জারির মাধ্যমে বাড়তি, অস্বাভাবিক ও আক্রান্ত স্থানটিকে বাদ দিয়ে দিবেন
এইচপিভি ভাইরাসের হাত থেক পুরোপুরি বাঁচার কোনো উপায় নেই। তবে টিকা নেওয়ার মাধ্যমে কিছুটা হলেও সুরক্ষিত থাকতে পারেন আপনি। যৌন সংস্পর্শ থেকে যেহেতু পুরোপুরি বিরত থাকা সম্ভব নয়, তাই এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় পর পর চিকিৎসকের সাথে গিয়ে কথা বলুন।
এতে করে কোনো সমস্যা হলে খুব দ্রুতই আপনি সতর্ক হতে পারবেন এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।
মূল লেখক- ডক্টর শিয়া ইন নিন, গ্লেনাগ্লেস হসপিটাল।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড