সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
আমাদের রক্তনালী অত্যাধিক কোলেস্টোরল বা অন্যকোনো কারণে যদি বদ্ধ হয়ে যায় এবং রক্তের চাপ যদি স্বাভাবিক না হয়, সেক্ষেত্রে হৃদপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই সমস্যা থেকে দূরে থাকতেই ব্যবহার করা ধাতব পদার্থ বা প্লাস্টিকের এক রকমের নল বা স্টেন্ট।
রক্তনালীর মধ্যকার বাঁধাকে সরিয়ে দিতেই এটি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও মস্তিষ্কের নিউরোসিম প্রতিরোধ, ফুসফুসের বায়ু পরিবহনের পথ খুলে দেওয়া, পায়ের রগ এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দূর করতেও স্টেন্ট ব্যবহার করা হয়। অনেকেই এই অতি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পদ্ধতিটি সম্পর্কে খুব একটা জানেন না। আজ এই পদ্ধতিটি নিয়ে জেনে নিন প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য-
স্টেন্ট কেন প্রয়োজন?
প্রতিনিয়ত রক্ত পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে করতে স্বাভাবিকভাবেই হৃদপিণ্ডের রক্তপরিবাহী নালীর মধ্যে ক্যালসিয়াম ও কোলেস্টোরলের একটি স্তর জমাট বাঁধে। আর এই স্তরটিই রক্তনালীর মধ্য দিয়ে রক্ত সঞ্চালনে বাঁধা দেয়। এই অবস্থাটি খুব বেশিদিন চলতে থাকলে বুকব্যথা থেকে শুরু করে হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হতে পারে।
হৃদপিণ্ডের সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য স্টেন্ট ব্যবহার খুব কার্যকরী একটি পদ্ধতি। রক্তনালীতে শতকরা ৭০% বদ্ধতা দেখা দিলে সাধারণত স্টেন্ট ব্যবহার করা হয়। এটি এক্ষেত্রে সবচাইতে সফলভাবে কাজ করে।
স্টেন্ট শরীরে কীভাবে প্রবেশ করানো হয়?
শরীরে স্টেন্ট প্রবেশ করানোর প্রক্রিয়াটিকে এনজিওপ্ল্যাস্টি বলা হয়। এর সার্জারি প্রক্রিয়াটি তুলনামূলকভাবে সাধারণ। এতে অ্যানেস্থেসিয়া হিসেবেও লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার করা হয়।
এক্ষেত্রে প্রথমে চিকিৎসক কার্ডিয়াক ক্যাথেটেরিসেশন করবেন। এই পদ্ধতিতে বাহুর কাছ থেকে শুরু করে রক্তনালীর মাধ্যমে হৃদপিণ্ড পর্যন্ত একটি ক্যাথেটার বা টিউব প্রবেশ করানো হবে। পরবর্তীতে, এই নলের মধ্য দিয়ে কনট্রাস্ট নামক এক রকমের তরল প্রবেশ করানো হবে।
এরপর এক্স-রের মাধ্যমে দেখা হবে যে, আপনার রক্তনালীতে ঠিক কোন স্থানে জমাট স্তর রয়েছে। সেটা পেয়ে গেলেই চিকিৎসক দ্বিতীয় ক্যাথেটার শরীরে প্রবেশ করবেন। এই ক্যাথেটার বেলুনের মতো এবং স্টেন্ট দ্বারা মোড়ানো। এটি বেলুনের মাধ্যমে আপনার রক্তনালীকে বাড়তে সাহায্য করবে।
এই সময় স্টেন্ট জমাট স্তরকে ভাঙতে সাহায্য করবে। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হয়ে গেলে চিকিৎসক আবার আপনার রক্তনালীতে কনট্রাস্ট প্রবেশ করিয়ে নিশ্চিত হবেন যে, সেখানকার জমাট স্তর আদৌ দূর হয়েছে কিনা। এজন্য আপনাকে হাসপাতালে এক রাত থাকতে হতে পারে।
স্টেন্টের রকম-
চিকিৎসকেরা নানা রকমের স্টেন্ট ব্যবহার করে থাকেন। এগুলোর মধ্যে সবচাইতে বেশি ব্যবহার করা হয় বেয়ার মেটাল স্টেন্টস, ড্রাগ-ইলিউটিং স্টেন্টস এবং বায়োরিসোর্বেবল ভাসকুলার স্ক্যাফল্ডস। এগুলো মোটামুটি একইরকম।
তবে রোগীর ক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়াটিকে আরেকটু সহজ করার জন্য এবং প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আরেকটু উন্নত কিছু পাওয়ার জন্য নতুন নতুন পদ্ধতি এসেছে। কম ব্যবহার করা হলেও বায়ো ইন্সজিনিয়ার স্টেন্টস, ডুয়াল থেরাপি স্টেন্টসের মতো আরো কিছু পদ্ধতিও এখানে ব্যবহার করা হয়।
আপনার প্রশ্ন থাকতেই পারে যে, কোন পদ্ধতির স্টেন্ট সবচাইতে ভালো। প্রতিটি পদ্ধতিরই নির্দিষ্ট কিছু সুবিধা রয়েছে। তাই, চিকিৎসকের সাথে কথা বলে আপনার শরীরের জন্য কোনটি তুলিনামূলকভাবে বেশি ভালো হবে তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
শরীরের খুব ছোট ছোট ব্যাপারগুলোই বড় রকমের সমস্যা তৈরি করে। স্টেন্ট ব্যবহার করুন, এমন একটি বড় রকমের সমস্যা থেকে নিজেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখুন।
মূল লেখক- নাইর দীনেশ, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড