সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাচ্ছি, যে পানি পান করছি এবং যে বাতাসে নিঃশ্বাস নিচ্ছি- এই সবকিছুতেই মিশে আছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। তাই একটু একটু করে এটি আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। শরীরের ভেতরে প্লাস্টিক জমে আছে, ভাবতেই কেমন গা শিউরে ওঠে, তাই না?
কিন্তু এই মাইক্রোপ্লাস্টিক কী? কতটা নেতিবাচক প্রভাব এটি আমাদের শরীরে রাখে? চলুন, বিস্তারিতভাবে আজ জেনে নেওয়া যাক-
মাইক্রোপ্লাস্টিক কী?
প্লাস্টিকের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি অংশ হচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এর আকার অনেকটা সিসেম বীজের মতো বা ৫ মিলিমিটার হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই মাইক্রোপ্লাস্টিক ন্যানোস্কেলে কাজ করে। সেখানে এর আকৃতি হয় শূন্য দশমিক ০০১ মিলিমিটার। এটা কতটা ক্ষুদ্র বুঝতে পারছেন না? সাধারণত, একটি কাগজের শিটের ঘনত্ব শূন্য দশমিক ০৫ মিলিমিটার হয়ে থাকে। বুঝতেই পারছেন তাহলে, ঠিক কতটা ক্ষুদ্র এই মাইক্রোপ্লাস্টিক।
মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি হয় কীভাবে?
আমরা অনেক প্লাস্টিকের পণ্য সাগর বা নদীতে ফেলে দিই। কলকারখানা থেকে বর্জ্য পদার্থে মিশে থাকা প্লাস্টিকও গিয়ে মিশে পরিবেশে। তাপমাত্রা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবাণু এবং অন্যান্য নানা কারণে এই প্লাস্টিক ভেঙে যায় এবং ছোট ছোট টুকরোয় পরিণত হয়।
মূলত, প্লাস্টিক ঠিক কতটা বিভক্ত হবে তা এর চারপাশের পরিবেশের উপরে নির্ভর করে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের আরেকটি ধরন হচ্ছে মাইক্রোবিডস। যেটি সাধারণত ফেসওয়াশ, টুথপেস্ট আর অন্যান্য কসমেটিকস পণ্যতে বেশি খুঁজে পাওয়া যায়।
খাবারে মাইক্রোপ্লাস্টিক কীভাবে আসে?
সাধারণত, সমুদ্রের পানিতে প্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি থাকে। প্রতিদিন এই পরিমাণ আরও বাড়ছে। অবশ্যই এর পেছনে আমরা বেশি দায়ী। মানুষ প্লাস্টিকের পণ্য সাগরের পানিতে ফেলায় সেগুলো মাছের কাছে চলে যাচ্ছে। সামুদ্রিক মাছে তাই প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে যে মাছগুলো সমুদ্রের তীরবর্তী অংশে বেশি থাকে, তাদের প্লাস্টিকের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এবং বাস্তবেও সেটাই হচ্ছে।
এছাড়া আমাদের গ্রহণ করা অন্যান্য খাবার, এই যেমন- লবণ, মধু ইত্যাদিতেও প্লাস্টিক পাওয়া যায়। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায় যে, সামুদ্রিক লবণের প্রতি কেজিতে প্লাস্টিকের পরিমাণ থাকে প্রায় ৬০০টি।
অন্যদিকে, প্রতি কেজি মধুতে এই পরিমাণ থাকে ৬০০ টি। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে আসে যে, প্লাস্টিকের পাত্র থেকে খাবার গ্রহণ করছেন যারা তাদের শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়।
ব্যাপারটি কতটা ক্ষতিকর?
শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকাটা অবশ্যই ইতিবাচক কিছু নয়। তবে আরও ভালো করে এটি কতটা ক্ষতিকর, তা জানার ইচ্ছে আপনার থাকতেই পারে। মূলত, মাইক্রোপ্লাস্টিক ক্ষতিকর হলেও দৈনন্দিন সাধারণ খাবারে যে পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক আমরা গ্রহণ করি সেটা শরীর হজমের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। তবে এমনটা সবসময় হয় না। মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ শরীরে বেড়ে গেলে সেটা একটা সময় শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়েই পড়ে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক এড়িয়ে চলার উপায় কী?
যদিও মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব কতটা মানুষের শরীরে পড়ে তা নিশ্চিতভাবে এখনও জানা সম্ভব হয়নি। তবে, প্লাস্টিক রয়েছে এমন খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো। এই কাজের প্রথম ধাপ হিসেবে প্লাস্টিকে মোড়ানো খাবার, প্লাস্টিক মিশ্রিত থাকতে পারে এমন সামুদ্রিক খাবার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে।
আর, শুধু নিজে মাইক্রোপ্লাস্টিক থেকে দূরে থাকলেই হবে না। একইসাথে চারপাশের মানুষের সুস্থতার জন্য পরিবেশে প্লাস্টিকজাতীয় উপাদান ফেলা বন্ধ করতে হবে।
প্লাস্টিক গিলে ফেললে কী করবেন?
ভুলে কখনো প্লাস্টিকের টুকরো খাবারের মাধ্যমে গিলে ফেলতেই পারেন আপনি। কী করবেন এমন কিছু হলে? যদি প্লাস্টিকের টুকরোটি আপনার গলায় কোনো সমস্যা তৈরি না করে তাহলে কিছু করা থেকে বিরত থাকুন।
বাথরুমের সাথে সেটি বেরিয়ে যাবে। অন্যথায় গলা থেকে জোর করে বের করতে চাইলে আপনি ব্যথা পেতে পারেন। তেমনটা না হলে চিকিৎসকের সাথে যতটা দ্রুত সম্ভব দেখা করুন এবং প্লাস্টিকের টুকরো বের করে ফেলার চেষ্টা করুন।
মূল লেখক : ডক্টর ওথেলো ডেভ, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড