সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
ইচ্ছে করলেই বয়সকে হারিয়ে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু ব্যাপারটি সবক্ষেত্রে পুরোপুরি ঠিক নয়। এই যেমন, গর্ভধারণ করা। আপনি ৪০ বছর বয়সের পর মা অবশ্যই হতে পারবেন। কিন্তু বয়স এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা তৈরি করতেই পারে। বয়স নারীকে এ সময় বাড়তি কিছু সমস্যা উপহার দিয়ে থাকে। তাই, এই বয়সে গর্ভধারণ করাটাও বাড়তি কিছু চিন্তা সাথে নিয়ে আসে। ৪০ বছর বয়সের পর সন্তানধারণ করলে কী ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে আপনার জন্য? চলুন, জেনে নেওয়া যাক-
৪০ বছর বয়সের পর আমার সন্তান ধারণ করার সম্ভাবনা কতটুকু থাকে?
সাধারণত, বয়স বাড়ার সাথে সাথে নারীর সন্তান ধারণের সম্ভাবনা কমতে থাকে। এই যেমন, যে ক্ষেত্রে ৩০ বছর বয়সে একজন নারীর এক বছরের মধ্যে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশ থাকে, সে ক্ষেত্রে ৪০ বছর বয়সের পর এই সম্ভাবনা কমে ৪৫ শতাংশ হয়ে যায়।
মূলত, বয়স ত্রিশের ঘর পার করার সময়েই একজন নারীর শরীরে ডিম্বাণুর পরিমাণ কমে যায়। এ সময় যে ডিম্বাণু কর্মক্ষম থাকে সেটিও কম বয়সী নারীর ডিম্বাণুর মতো কর্মক্ষম থাকে না। এমনকি, এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম উপায় ব্যবহার করলেও সেটা খুব বেশি কার্যকর হয় না।
চল্লিশের পর গর্ভধারণের ঝুঁকি কী কী?
৪০ বছর বয়সের পর কোনো নারী গর্ভধারণ করলে সে ক্ষেত্রে নারী ও শিশু-দুজনেরই বাড়তি কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এই যেমন-
নারীর ক্ষেত্রে-
১। অকাল গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা এ ক্ষেত্রে বেড়ে যায়। গর্ভধারণের শুরুর দিকেই নারীদের মধ্যে গর্ভপাতের সম্ভাবনা ৩০ বছরের কম বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ, ৩৫ এর বেশি বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ এবং ৪৫ এর বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ বেশি দেখা যায়।
২। অনেকসময় বয়স বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে নারীদের গর্ভধারণ জরায়ুর বাইরে হতে দেখা যায়। ৩৫ বছর বয়সের এবশি বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এটি অন্যদের চাইতে ৪-৮ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। এটি ঝুঁকি অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়।
৩। বয়স বাড়ার সাথে সাথে একের বেশি সন্তান গর্ভে ধারণ করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এটি অবশ্যই সন্তান ও নারীর শরীরের জন্য নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে।
৪। যেসব নারীরা ৪০ এর বেশি বয়সে সন্তান ধারণ করেন, তাদের অন্যদের চাইতে কয়েকগুণ বেশি গ্যাস্টেশনাল ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও এই সম্ভাবনা থাকে। তবে তুলনামূলকভাবে সেটি অনেক কম থাকে।
৫। বেশি বয়সী মায়েদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের সময় উচ্চ রক্তচাপ, হাইপারটেনশন ও ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য আরো অনেক সমস্যা বেশি ঘটতে দেখা যায়। যেটা অন্য মায়েদেরও হয়ে থাকে। তবে সেটার পরিমাণ ও সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে অনেক কম থাকে।
সন্তানের ক্ষেত্রে-
১। বেশি বয়সী মায়েদের ক্ষেত্রে সন্তানদের ক্রমোসোমাল অ্যাবনরমালিটি এবং হৃদপিণ্ডের সমস্যা ও অন্যান্য অনেক সমস্যা বেশি ঘটতে দেখা যায়।
২। মায়ের বয়স ৪০-৪৪ এর বেশি হলে, সে ক্ষেত্রে শিশুদের জন্মে নানারকম সমস্যা হতে দেখা যায়। শিশুর ওজন ও স্বাস্থ্য নিয়েও সমস্যা দেখা দেয়। অনেকেই সময়ের আগেই জন্ম নিয়ে নেয়। এজন্য, এই শিশুদের প্রতি একটু বাড়তি মনোযোগ দেওয়া হয়।
৪০ এর পর সন্তান নেওয়ার কি কোনো ইতিবাচক দিক আছে?
গবেষণায় দেখা যায় যে, বেশি বয়সে সন্তান নেওয়ার কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। এই সন্তানেরা পরবর্তীতে ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে থাকে। তারা সামাজিক হতে এবং মানসিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে সহজে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তাদের মধ্যে অনেক বেশি দেখা যায়। এ সময় শিশুরা তুলনামূলকভাবে একটু বেশি উন্নত সামাজিক ও আর্থিক অবস্থানও পেয়ে থাকে।
আপনি কি ৪০ এর ঘর পার করে ফেলেছেন? সন্তান নেওয়ার তাহলে এখনই খুব ভালো সময়। যতটা দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সাথে কথা বলে সন্তান নিয়ে ফেলুন। একটু বাড়তি মনোযোগ হয়তো দরকার হবে। তবে হ্যাঁ, আপনার সন্তানও অনেক বেশি সুস্থ থাকবে এতে করে!
মূল লেখক- কিউ চিয়া ইং সিন্থিয়া, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড