সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
অ্যালকোহল সেবন আমাদের ফুসফুসের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই ব্যাপারটি আমরা সবাই জানি। তবে, অনেক সময়ই ইচ্ছে করে এড়িয়ে যাই। ধূমপান শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর, এটা জেনেও আমরা অনেকেই চারপাশে তাকিয়ে বলে থাকি- ‘ধূমপান যারা করছে না তারাও তো মৃত্যুবরণ করছে’।
জন্ম ও মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার হাতে। তবে, এতোদিন ধরে চলে আসা এই ব্যাপারগুলোও কিন্তু ভুল নয়। অ্যালকোহল আমাদের শরীরে নেতিবাচক অনেক প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসকে নষ্ট করে দেয়। কীভাবে? চলুন, আজ এ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
অ্যালকোহল যেভাবে আমাদের ফুসফুসকে নষ্ট করে দেয় :
অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন করলে আমাদের ফুসফুসে অতিরিক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড প্রবেশ করে। এতে করে ফুসফুসে অনেক বেশি চর্বি জমে যায়। এছাড়া ফুসফুসের অক্সিডেটিভ ড্যামেজের মাধ্যমে শারীরিক প্রদাহ সৃষ্টি ও শরীরের কোষ নষ্ট করার মতো ব্যাওয়ারগুলোও অ্যালকোহল করে থাকে। এই সমস্যা বেশিদিন চলতে থাকলে প্রথমে ফুসফুসে ফাইব্রোয়োসিস এবং সেখান থেকে লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সারের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সবচাইতে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, ফুসফুসের এই সমস্যাগুলোর খুব একটা লক্ষণ বোঝা যায় না। পা ও পেট ব্যথা, পরিষ্কারভাবে চিন্তা না করতে পারা, রক্তবমি করা ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা গেলেও যেতে পারে। এমন কিছু দেখতে পেলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন এবং পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিন।
অ্যালকোহল কি একেবারেই পান করা যাবে না?
উপরের সমস্যাগুলো অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের জন্য হয়ে থাকে। প্রতিদিন অ্যালকোহল পান করলে লিভার সিরোসিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে কেউ যদি প্রতিদিন ৩০-৬০ গ্রাম অ্যালকোহল পান করেন, তাহলে এই সম্ভাবনা থাকে ১ শতাংশ।
অন্যদিকে, ১২০ গ্রাম পান করলেই সম্ভাবনা ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে যায়। নারীদের ক্ষেত্রে অ্যালকোহল পানের নেতিবাচক প্রভাব আরও বেশি দেখা যায়। নারী শরীরের আকৃতি ও অ্যালকোহল ধীরে ধীরে হজম করার প্রকৃতির কারণেই এমনটা হয়ে থাকে।
প্রতিদিন অ্যালকোহল পানের নেতিবাচক প্রভাব তো আছেই। তবে একসাথে অনেকটা অ্যালকোহল পান করে ফেললে এই ক্ষতি আরও বেড়ে যায়।
সমাধান কী?
এটি যেহেতু এক রকমের আসক্তি, তাই চিকিৎসকেরা প্রথমত অ্যালকোহল সেবনকারীকে মানসিক সাহায্য করার চেষ্টা করে থাকেন। কারণ, অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকতে পারলেই রোগীর আক্রান্ত ফুসফুসের সঠিক পরিচর্যা করা সম্ভব। এক্ষেত্রে, আসক্ত মানুষটির পরিবার, বন্ধু ও কাছের মানুষেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
অ্যালকোহল সেবনকারীদের হজমের ক্ষমতা অন্যদের চাইতে ভালো থাকে। ফলে, যেকোনো খাবার তারা খুব দ্রুত হজম করে ফেলে। অন্যদিকে, তাদের শরীরে অপুষ্টির চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। তাই, ফুসফুসের সুস্থতার জন্যই রোগীকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া প্রয়োজন।
সবকিছু ঠিক থাকলে ৩-৬ মাসের মধ্যেই রোগীর ফুসফুসে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পাওয়া যায়।
আপনার পরিচিত কেউ কি অ্যালকোহল পানে আসক্ত? তার শারীরিক অবস্থা কি খুব নাজুক? কিংবা সেই কেউ একজনটা কি আপনি নিজেই? ভয়ের কোনো কারণ নেই। যেকোনো সমস্যার সমাধান রয়েছে। চিন্তা না করে তাই চিকিৎসকের সাথে দেখা করুন। একটু কষ্ট করে হলেও নিজেকে বিরত রাখুন বাজে অভ্যাসগুলো থেকে। দেখবেন, আপনিও আবার সুস্থ একটি জীবনে ফিরে গিয়েছেন।
মূল লেখক- ডক্টর ওয়াই চুন তাও দেসমন্দ, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড