ইনসমোনিয়া ও নাক ডাকার সমস্যা দূর করুন সহজেই

রাতে এক পশলা শান্তির ঘুম কে না চায়? কিন্তু নানারকম সমস্যার কারণে এই ছোট্ট ব্যাপারটুকু থেকেও বঞ্চিত হন অনেকে। নাক ডাকার সমস্যা এবং ইনসমোনিয়া এক্ষেত্রে সবচাইতে বড় ভূমিকা পালন করে। রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটছে আপনার উপরে উল্লিখিত কারণে? চলুন, আজ জেনে নেওয়া যাক কী করে নাক ডাকা আর ঘুম না আসার সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করবেন আপনি।–

ইনসমোনিয়া বা নিদ্রাহীনতা :

সাধারণত মানসিক চাপ, অবসাদ ও হতাশা ইত্যাদি থেকেই ইনসমোনিয়ার জন্ম হয়। অনেকসময় শারীরিক নানা সমস্যাও মানুষকে ঘুম না আসার ক্ষেত্রে প্রভাবিত করতে পারে। আপনি যদি ঘুমের ব্যাপার নির্দিষ্ট নিয়ম না মেনে চলেন, অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন, তাহলেও এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে তাই প্রথমে চিহ্নিত করুন যে, ঠিক কোন কারণে আপনার ইনসমোনিয়া হচ্ছে। বারবার মূত্রত্যাগ করা, ক্ষধাবোধ কিংবা অন্য কোনো কারণ যদি আপনার রাতে ঘুমানোকে প্রভাবিত করে, তাহলে সেটি নিয়েও চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।

ইনসমোনিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় :

ইনসমোনিয়া কেন হয় সেটা তো জানলেন। কিন্তু এই সমস্যাটি থেকে দূরে থাকতে হলে কী করবেন তা কি জানা আছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক-

১। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার অভ্যাস করুন। ২। ঘুমিয়ে পড়ার ঠিক আগেই কোনো নতুন কাজ শুরু করা থেকে বিরত থাকুন। ৩। বিছানায় শুয়ে অন্যান্য কাজ করা, এই যেমন- টেলিভিশন দেখা, কম্পিউটার চালানো ইত্যাদি কাজ করা থেকে দূরে থাকুন। ৪। ঘুমের আগে ক্যাফেইন বা ঘুম দূর করে এমন কোনো ওষুধ সেবন করবেন না। ৫। প্রতিদিন কিছুটা হলেও শারীরিক পরিশ্রম করুন। ৬। ঘুম না আসলে অনেকটা সময় বিছানায় শুয়ে থাকা থেকে বিরত থাকুন।

আর খুব বেশি সমস্যা হলে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।

নাক ডাকা ও অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া :

নাক ডাকা সমস্যাটি শুধু নাক যিনি ডাকছেন তার না, অন্যদেরও ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে। কেউ একজন নাক ডাকছেন, এই ব্যাপারটিকে খুব বেশি সহজভাবে নেওয়ার কিছু নেই। এর পেছনে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া নামক সমস্যাটিও থাকতে পারে। সাধারণত ঘুমের মধ্যে বাতাস গ্রহণের পথ বন্ধ হয়ে গেলে অক্সিজেনের অভাব ঘটে এবং এই সমস্যাটি তৈরি হয়।

গবেষণায় অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ও কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মতো সমস্যাগুলোর কারণ হিসেবে এটি কাজ করতে পারে। অন্যান্যদের চাইতে এই সমস্যায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত সমস্যা তিনগুন বেশি দেখা যায়।

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণগুলো কী?

আপনার যদি অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হয়ে থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। এই সমস্যাটির লক্ষণগুলো হচ্ছে- ১। ঘুমের মধ্যে মাঝেমধ্যেই নিঃশ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া (যদিও এই সমস্যাটি রোগী নিজে নয়, তার সঙ্গীরাই ভালো বুঝতে পারেন)। ২। দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুমানো। ৩। রাতের বেলা দমবন্ধ হয়ে আসা এবং ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া। ৪। সকালে মাথাব্যথা করা। ৫। কোনো কিছুতে মনোযোগ কম দিতে পারা এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া। ৬। রাতের বেলা বারবার মূত্রত্যাগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা ইত্যাদি।

আপনার মধ্যে এই উপসর্গগুলো দেখতে পাওয়া গেলে চিকিৎসক আপনাকে পরীক্ষা করতে পারেন নিশ্চিত হওয়ার জন্য। সাধারণত, নাকের টিস্যু বৃদ্ধি পেলে বা টনসিলের মতো কারণে এমনটা হতে পারে।

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়-

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া বেশ সহজ। এক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা নাকের সমস্যা দূর করবেন এবং শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ নিশ্চিত করবেন।

তবে নাক দাকার সমস্যা হোক বা অন্যকিছু, যেকোনো সমস্যা শিশুকালেই সারিয়ে তোলা সবচাইতে সহজ। তাই চেষ্টা করুন যতটা দ্রুত সম্ভব আপনার সমস্যাটিকে খুঁজে বের করে তার সমাধান করার।

মূল লেখক- তাই হিন গ্যান, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।