সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
সন্তান জন্মের পর তাকে বুকের দুধ পান করানোর ব্যাপারটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। তবে অনেক মায়ের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটি একটু কষ্টকর হয়ে পড়ে। নানারকম জটিলতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে এই সময়। বিশেষ করে, প্রথমবার মা হয়েছেন এমন নারীদের মনে সন্তানকে দুধ পান করানো নিয়ে অনেক প্রশ্ন জন্ম নেয়। চলুন, এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর আজ জেনে নেওয়া যাক!
আমাকে কি সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতেই হবে?
গবেষকদের মতে, মা যদি সন্তানকে বুকের দুধ পান করান, তাহলে সেটি শুধু সন্তান নয়, মায়ের জন্যও ভালো। বুকের দুধে সেইসব রোগপ্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি ও পুষ্টি থাকে, যেগুলো শিশুর জীবনের প্রথম ছয়মাস সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও স্থুলতা, অ্যালার্জি ইত্যাদি দূর করতেও মায়ের বুকের দুধ সাহায্য করে। আর মায়েদের জন্য এই প্রক্রিয়াটি জরায়ুর ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার ইত্যাদি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
সরাসরি বুকের দুধ পান না করানো কি ক্ষতিকর?
অনেক মা সন্তানকে সরাসরি বুকের দুধ পান করাতে অস্বস্তি বোধ করেন। তারা বুকের দুধ বাইরে বের করে সেটা শিশুকে পান করান। এতে কোনো সমস্যা নেই। আপনি অবশ্যই এই কাজটি করতে পারেন। তবে সরাসরি বুকের দুধ পান করানোটাই সবচাইতে ভালো।
অন্যথায়, মায়েদের স্তনের ওপরে বাজে প্রভাব পড়ে। আর মা ও শিশুর মধ্যে যে সম্পর্ক, সেটা আরও মধুর হয়ে ওঠে সন্তানকে বুকের দুধ পান করানোর সময়। সেটি না করলে শিশু ও মা এই পারস্পরিক বন্ধন থেকেও বঞ্চিত হন। নিয়মিত ব্রেস্ট পাম্প করলে বুকের দুধ কমে যাওয়ার ভয় থাকে না। আপনার কাজের প্রয়োজনে এমনটা আপনি করতেই পারেন। তবে এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় মেনে চলুন।
স্তনের আকৃতি কি সন্তানকে দুধ পান করানোর ব্যাপারটিকে প্রভাবিত করে?
মায়েদের স্তনে সেই পরিমাণ দুধ উৎপন্ন করার ক্ষমতা থাকে, যতটা তার শিশুর প্রয়োজন। স্তনের আকৃতি এক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব রাখে না। একজন নারীর স্তনে কতটা দুধ উৎপন্ন হবে তা নির্ভর করে তার স্তনের টিস্যুর ওপরে। তবে চিকিৎসকদের মতে, শিশুর যতটা দরকার ঠিক ততটা দুধ একজন নারীর স্তনে তৈরি হয়।
শিশুকে দুধ পান করানোর সময় কি ব্যথা হতে পারে?
শিশুকে দুধ পান করানোর ক্ষেত্রে প্রথমদিকে আপনার স্তনে ব্যথা করতেই পারে। কারণ এই পুরো ব্যাপারটিই আপনার জন্য নতুন। তাই অয়েন্টমেন্ট ও নিপল শিল্ড ব্যবহার করুন। তবে যদি আপনার স্তন লাল হয়ে যায় এবং রক্তপাত হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, আপনার শিশুটি যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে না।
সে ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি নিয়ে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। অনেকসময় স্তনে হালকা লালচেভাবের সাথে সাথে শক্ত গতা অনুভূত হয়। এসব ক্ষেত্রে স্তনে দুধ জমাট বেঁধে থাকে। এমনটা হলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। তাই, এমন সমস্যা বোধ করলে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন।
সন্তানকে সঠিকভাবে বুকের দুধ পান করানোর পদ্ধতি কী?
বুকের দুধ পান করানোর ব্যাপারটি খুব প্রাকৃতিক একটি ব্যাপার। তবে এ ক্ষেত্রে আপনার খাবার, বসার পদ্ধতি, অপেক্ষা করা- এসব খুব বড় ভূমিকা পালন করে। তাই অন্যদের পরামর্শ নিন। প্রয়োজন হলে দুধ পান করানোর ব্যাপারে প্রশিক্ষণ নিন। প্রাকৃতিক কোনো ব্যাপারকে আরো সহজ করে তোলা যায় এভাবে।
কতক্ষণ পরপর সন্তানকে বুকের দুধ পান করানো ভালো?
আপনার সন্তানই এই কাজটুকু করে দেবে। সে আঙুল কামড়িয়ে, কান্না করে, জিভ নাড়িয়ে- নানাভাবে আপনাকে ইঙ্গিত দেবে যে তার ক্ষুধা পেয়েছে। এজন্য সন্তানের দিকে খেয়াল রাখুন। এমন কোনো ইঙ্গিত দেখলে নিশ্চিত হয়ে নিয়ে সন্তানকে দুধ পান করান। প্রথমদিকে দুধ পান করানোর সময় ৫ থেকে ৪৫ মিনিটের মতো হলেও, অভ্যস্ত হয়ে গেলে ২০-৪০ মিনিটের মধ্যেই দুধ পান করানোর ব্যাপারটি সেরে নেওয়া যায়।
স্তন প্রচণ্ড শক্ত হয়ে যায় কেন?
আপনার স্তনে যদি অনেক বেশি পরিমাণ দুধ জমে যায়, সে ক্ষেত্রে এমনটি হতে পারে। প্রসবের পরবর্তী কিছু সময় এই সমস্যাটিতে আপনাকে ভুগতে হতে পারে। এ সময় স্তনে ব্যথা বোধ হয়। এ ক্ষেত্রে, সন্তানকে দুধ পান করানোর আগে বুকে খানিকটা গরম ভাপ দিন। এরপর স্তনে বরফ ঘষুন। উপুড় হয়ে শোয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে ব্যথা কমে আসবে। খানিকটা দুধ বাইরে বের করে ফেলার চেষ্টা করুন।
আপনার সন্তান আপনার উপরেই নির্ভরশীল। তাই তাকে দুধ পান করানোর সময় কোনোরকম সমস্যা বোধ করলে দ্রুত সেটির সমাধান করার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সহায়তা নিন।
পরামর্শদাতা- লী ই হং, ডায়েটিশিয়ান, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড