সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
হৃদপিণ্ডের যেকোনো সার্জারিতে ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। আর এই ঝুঁকি এড়ানোর জন্য নানারকম পদ্ধতি অবলম্বন করেন চিকিৎসকেরা। এমনই এক পদ্ধতির নাম ট্রান্সক্যাথেটার এঅরটিক ভাল্ব ইমপ্ল্যান্টেশন বা টাভি। কী এই এঅরটিক ভাল্ব? কীভাবে এটি কাজ করে? চলুন, জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
এঅরটিক ভাল্ব এমন একটি প্রক্রিয়া যার মধ্যে দিয়ে রক্ত হৃদপিণ্ড থেকে পুরো শরীরে সঞ্চালিত হয়। একে অনেকটা একটি দরজার মতো বলা যায়। এই ভাল্ব খুললে রক্ত হৃদপিণ্ড থেকে সারা শরীরে প্রবাহিত হয়। আর বন্ধ হলে এই রক্ত সঞ্চালন থেমে যায়। বয়সের সাথে সাথে এই এঅরটিক ভাল্ব সংকীর্ণ হয়ে যায়।
এই পুরো সমস্যাটিকে এঅরটিক ভাল্ব স্টেনসিস বলা হয়। এই সংকীর্ণতা অনেক বেশি বেড়ে গেলে আক্রান্ত ব্যক্তির নিঃশ্বাসে সমস্যা, জ্ঞান হারিয়ে ফেলা এবং বুকে ব্যথাবোধ করা- ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হয়। সময়মতো চিকিৎসা না নেওয়া হলে দুই বছরের মধ্যে রোগী মৃত্যুবরণও করতে পারেন।
ওপেন হার্ট সার্জারি : সীমাবদ্ধতা কোথায়?
অনেক সময় ওপেন হার্ট সার্জারিকে এঅরটিক ভাল্ব স্টেনসিসের সমস্যা দূর করার উপায় মনে করা হয়। এক্ষেত্রে অপারেশন করে নতুন ভাল্ব প্রবেশ করানো হয় হৃদপিণ্ডে। তবে এই প্রক্রিয়ায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়।
ট্রান্সক্যাথেটার এঅরটিক ভাল্ব ইমপ্ল্যান্টেশন কী?
ওপেন হার্ট এঅরটিক ভাল্ব ইমপ্ল্যান্টেশনের পরিবর্তে ট্রান্সক্যাথেটার এঅরটিক ভাল্ব ইমপ্ল্যান্টেশন প্রথম করা হয় ২০০২ সালে। এক্ষেত্রে খুব বেশি সার্জারির দরকার পড়েনি। ফলে এর প্রভাব রোগীর উপরে পড়ার সম্ভাবনাও ছিল কম। প্রথমে রোগীর কুঁচকিতে সামান্য কেটে সেখানে ক্যাথেটারের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডে ভাল্ব প্রবেশ করানো- এই পুরো প্রক্রিয়াটিই ছিল এমন। এখনও ব্যাপারটি তাই আছে। তবে টাভির ক্ষেত্রে দরকার পড়লে শরীরের অন্যান্য কিছু অংশেও অপারেশন করা হতে পারে।
টাভির উপকারিতা কী?
ওপেন হার্ট সার্জারির মতো টাভিতে রোগীর হৃদপিণ্ড পুরোটা খুলে ফেলা হয় না। এই সময় রোগীর হৃদপিণ্ড কাজ করা বন্ধ করে দেয় না। এক্ষেত্রে, কোনো বাড়তি সেলাইয়ের দরকার পড়ে না। নতুন ভাল্বটা শুধু ক্যাথেটারের মাধ্যমে এঅরটিকে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। অনেকগুলো পরীক্ষাতেই এখন পর্যন্ত দেখানো হয়েছে যে, টাভি প্রযুক্তির ব্যবহার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি নিরাপদ।
অনেক সময় ব্যালুনের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের ভাল্বকে বারবার প্রসারিত করা হয়। সেটিও টাভির মতো দক্ষতার সাথে ও সহজভাবে কাজ করে না। বেশিরভাগ সার্জারির ক্ষেত্রেই ২-৫ শতাংশ স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। টাভি এই পরিমাণ অনেক বেশি কমিয়ে দেয়।
যেসব রোগীর ক্ষেত্রে সার্জারির মাধ্যমে ভাল্ব প্রবেশ করালে ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়, টাভি তাদের জন্য তুলনামূলকভাবে সেরা উপায়। কমবয়সী তরুণেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টাভির মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের সার্জারির ভেতর দিয়ে যায়।
সবচাইতে ভালো ব্যাপার হলো, ধীরে ধীরে একটা লম্বা সময় ধরে চলার পর টাভি প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। সার্জারির সাথে স্ট্রোকের যে সম্পর্ক ছিল, সেটাকে অনেকটা কমিয়ে আনা হয়েছে। যে আকৃতির ভাল্ব প্রবেশ করানো হয়েছে, সেটা যদি সঠিক না হয়, সেক্ষেত্রে এই ভাল্বকে বদলে ফেলার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি টাভির ভেতরে রাখা সেরেব্রাল প্রোটেকশন ডিভাইস সার্জারিকে অনেক বেশি ইতিবাচক করে তুলেছে।
ওপেন হার্ট সার্জারি এবং টাভি- দুটো প্রক্রিয়াই আপনি ব্যবহার করতে পারেন হৃদপিণ্ডের ভাল্ব বদলানোর জন্য। তবে, এদের মধ্যে চিকিৎসকদের প্রথম পছন্দ বর্তমান সময়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে টাভি।
অবশ্যই, যেকোনো সার্জারির ক্ষেত্রে সবচাইতে নিরাপদ উপায়টিকেই আপনি এগিয়ে রাখতে চাইবেন। আর আপনি? আপনার কী মতামত এ ব্যাপারে? মূল লেখক : ডক্টর পল শিয়াম, কার্ডিওলজিস্ট, মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড